বরকতের পয়গাম নিয়ে এলো রমজান

Slider জাতীয়


রহমতের পয়গাম নিয়ে আসে বরকতময় রমজানুল মোবারক। এখনি শুরু হয়ে যাবে রহমতের বারিধারা। আল্লাহর প্রিয় বান্দারা রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের বৃষ্টিতে অবগাহন করবে বলে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন।

কিন্তু আপনি প্রস্তুত তো? তাহলে দয়াময় প্রভুর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি আমাদেরকে রহমতের বৃষ্টি নসিব করেন। রহমত ও বরকতের বারিধারা বেশি করে ধরে রাখার জন্য নিজের মধ্যে গভীরতা সৃষ্টি করতে হবে। কোথাও মুষলধারে বৃষ্টি হলে যেমন গভীরতা অনুযায়ী বৃষ্টির পানি আটকে থাকে অর্থাৎ যার গভীরতা বেশি তাতে পানি বেশি জমা হয়। তেমনি আল্লাহর রহমত ও বরকত ধরে রাখার জন্য নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে। অন্যথায় সমতল ভূমিতে বৃষ্টি পড়ে কিছুক্ষণের মধ্যে যেমন পানিশূন্য হয়ে পড়ে তেমনি আপনি যদি নিজেকে প্রস্তুত করতে না পারেন তবে রহমত বর্ষিত হবে ঠিকই কিন্তু আপনি সেই রহমত ধরে রাখতে পারবেন না। কারণ আপনি নিজের মধ্যে সেই রহমত ধরে রাখার মতো ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন গভীরতা সৃষ্টি করতে পারেননি। অর্থাৎ নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করতে পারেননি। ফলে রমজান আসে রমজান যায় কিন্তু নিজের মধ্যে পরিবর্তনের কোনো কিছু পরিলক্ষিত হয় না। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলে ও সেই অনুযায়ী কাজ করা বর্জন করেনি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনোই প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি-১৯০৩)

নিজেকে প্রস্তুত করার অর্থ হচ্ছে, রমজান আসার আগেই আপনি একটি পরিকল্পনা তৈরি করবেন : এক. অশ্লীল কথা ও কাজ ছেড়ে দেবো। অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকব। অশ্লীলতার ধারেকাছেও যাবো না এবং এটি হবে আমার স্থায়ী পরিকল্পনা। যদি কোনো সময় এই অঙ্গীকার থেকে সরে পড়ি তবে খুব দ্রুত তাওবাহ করে আল্লাহর রহমতের ছায়াতলে ফিরে আসব। দুই. জীবনে আর কখনো মিথ্যা কথা বলব না। অর্থাৎ মিথ্যা সাক্ষ্য দেবো না, মিথ্যা ওয়াদা করব না। কাউকে কটু কথা বলব না। কাউকে কষ্ট দেবো না। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘সিয়াম ঢালস্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দু’বার বলে- আমি রোজাদার। আর সেই মহান সত্তার শপথ, যার মুঠিতে মুহাম্মাদের প্রাণ। আল্লাহর কাছে রোজাদারের মুখের গন্ধ কস্তূরীর খুশবু থেকেও উত্তম। সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমার জন্য। তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই। আর প্রত্যেক নেককাজের বিনিময় দশ গুণ।’ (বুখারি-১৮৯৪)

এমনিভাবে আপনার পরিকল্পনার তালিকা ততটুকু পর্যন্ত লম্বা করুন আল্লাহর নাফরমানিতে আপনি যতটুকু দূরে পৌঁছেছেন। যেই নাফরমানিগুলো আপনার জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে। আপনার পরিকল্পনার তালিকার শীর্ষে রাখুন যে, আপনি কোনো দিন প্রচ্ছন্ন বা অপ্রচ্ছন্নভাবে আল্লাহর সাথে শিরক করবেন না। জীবনের সর্বক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় এ শিরককে পরিত্যাগ করতে হবে। নিচের আয়াতে উদ্ধৃত গুনাহগুলো পরিত্যাগ করার পরিকল্পনাও আপনাকে গ্রহণ করতে হবে-

আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘হে মুহাম্মাদ! এদেরকে বলো, এসো আমি তোমাদের শুনাই তোমাদের রব তোমাদের ওপর কী বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন। তাঁর সাথে কাউকে শরিক করো না। পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো। দারিদ্র্যের ভয়ে নিজের সন্তানদের হত্যা করো না, আমিই তোমাদেরকে জীবিকা দিচ্ছি এবং তাদেরকেও দেবো। প্রকাশ্যে বা গোপনে অশ্লীল বিষয়ের ধারেকাছেও যাবে না। আল্লাহ যে প্রাণকে মর্যাদা দান করেছেন ন্যায়সঙ্গতভাবে ছাড়া তাকে ধ্বংস করো না। তিনি তোমাদের এ বিষয়গুলোর নির্দেশ দিয়েছেন, সম্ভবত তোমরা ভেবেচিন্তে কাজ করবে।…যখন কথা বলো, ন্যায্য কথা বলো, চাই তা তোমার আত্মীয়-স্বজনের ব্যাপারই হোক না কেন। আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ করো। এ বিষয়গুলোর নির্দেশ আল্লাহ তোমাদের দিয়েছেন, সম্ভবত তোমরা নসিহত গ্রহণ করবে। এ ছাড়াও তাঁর নির্দেশ হচ্ছে এই, এটিই আমার সোজা পথ। তোমরা এ পথেই চলো এবং অন্য পথে চলো না। কারণ তা তোমাদের তাঁর পথ থেকে সরিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দেবে। এ হিদায়াত তোমাদের রব তোমাদেরকে দিয়েছেন, সম্ভবত তোমরা বাঁকা পথ অবলম্বন করা থেকে বাঁচতে পারবে।’ (সূরা আনয়াম : ১৫১-১৫৩)

এ তিনটি আয়াতে মহান আল্লাহ বড় বড় গুনাহ সংক্ষিপ্তাকারে বলে দিয়েছেন। এ ছাড়াও রাসূলুল্লাহ সা:-এর সুন্নাহ থেকে আরো কিছু বড় গুনাহ জানা যায়। আরো কিছু বড় অপরাধ হলো- সুদের লেনদেন করা; অহঙ্কার করা; জাদু করা; মদ, জুয়া, ঘুষ, চুরি-ডাকাতি; অত্যাচার বা জুলুম করা; দুর্নীতি-দুরাচার; বিশ্বাসঘাতকতা; পরনিন্দা; পরচর্চা; গিবত করা; কৃপণতা; অপচয়-অপব্যয় করা; ধোঁকাবাজি; ছলচাতুরী ও ষড়যন্ত্র করা; দাম্ভিকতা প্রকাশ করা; প্রতিবেশীর হক নষ্ট করা; প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া; মুসলমানদের অন্যায়ভাবে গালিগালি ও কষ্ট দেয়া; দুর্বল শ্রেণী-গোষ্ঠীকে নির্যাতন করা; লোকদেখানো ইবাদত-বন্দেগি করা; জ্যোতিষীর রাশিফলে বিশ্বাস করা; মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য বা মনোমালিন্য সৃষ্টি করা; গালি দেয়া ও উত্ত্যক্ত করা; সৎ-আল্লাহভীরু বান্দাদের কষ্ট দেয়া; অপমাণিত করা; জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করা; সত্যের বিরোধিতা করা; আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া ইত্যাদি বড় গুনাহ পরিত্যাগ করার পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আরো কয়েকটি গুনাহ যা উপরে উল্লিখিত মানুষকে কষ্ট দেয়ার মধ্যে পড়ে। তার একটি হলো- রমজান এলে অধিক মুনাফা লাভের প্রবণতা। এই প্রবণতা থেকেই খাদ্যে ভেজাল মেশানো হয়, মাল গুদামজাত করে খাদ্যসঙ্কট সৃষ্টি করা হয়। যা রোজাদারদেরকে কষ্ট দেয়ার মতো মারাত্মক গুনাহের কাজ।

লেখক : শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *