ছোটবেলা থেকেই প্লেন বানানোর স্বপ্ন ছিল তাঁর। কিন্তু পর্যাপ্ত উপকরণ ও স্থান ছিল না।
তবু হাল ছাড়েননি ভারতের মুম্বাইয়ের বাসিন্দা আমল যাদব। তার সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নেই। শেষ পর্যন্ত বাড়ির ছাদেই প্লেন তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।তখন তরুণ পাইলট হিসেবে কাজ শুরু করেছেন যাদব। বাড়ির ছাদে অবসর সময়ে বিমানের নানা যন্ত্রপাতি নিয়ে পড়ে থাকেন। অনেকেই তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, প্লেনটি তৈরি হলে এটা নামাবেন কিভাবে? সরাসরি ছাদ থেকে এটি তো আর উড়ে যেতে পারবে না!
যাদবের উত্তর ছিল, ‘আমি জানি না। ’ বাস্তবেই তখন তিনি জানতেন না, বিমানটি তৈরি হওয়ার পর কিভাবে এটা রানওয়েতে নিয়ে যাওয়া হবে।
যাদবের বিমান তৈরির কাজ এগিয়ে যায়। নানা উপকরণের সঙ্গে তিনি প্লেনের ইঞ্জিনও সংগ্রহ করেন।
সংযোজনও করে ফেলেন বেশ কিছু যন্ত্রপাতি।পাঁচ তলা পারিবারিক অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে থাকেন যাদব। তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১৯। তবে ভবনটিতে ওঠানামার জন্য কোনো লিফট নেই। নানা যন্ত্রপাতি সিঁড়ি দিয়েই তাকে ছাদে ওঠাতে হয়।
বিমান তৈরির কারখানা ও হ্যাঙ্গার (বিমান রাখার স্থান) হিসেবে ছাদকেই ব্যবহার করেন তিনি। বৃষ্টি পড়লে তা থেকে রক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়। সারা ছাদই যেন বিমান তৈরির কারখানা। পুরো ছাদে টুকরো টুকরো অংশ ছড়ানো।
গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তার ছয় আসনবিশিষ্ট বিমানটি তৈরি হয়ে যায়। ভারতে তৈরি এ ধরনের বিমান এটাই প্রথম। তাও আবার বাড়িতে তৈরি।
বিমানটির জন্য ইঞ্জিন আমদানি করা হয়। যাদব দাবি করেন শক্তিশালী এ ইঞ্জিনটি বিমানটিকে ১৩ হাজার ফুট ওপরে উঠাতে পারবে। এছাড়া এতে একবার জ্বালানি নিয়ে দুই হাজার কিলোমিটার পাড়ি দেওয়া যাবে। এর গতি থাকবে ঘণ্টায় ৩৪২ কিলোমিটার।
বিমানটি তৈরি হয়ে যাওয়ার পর একে নিচে নামানো এবং জনসাধারণকে দেখানোর প্রশ্ন আসে। কিন্তু কিভাবে? সিঁড়ি তো সংকীর্ণ।
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মেইক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের অধীনে ভারতে তৈরি সামগ্রীর প্রদর্শনীতে উৎসাহ দিচ্ছিলেন। আর সেখানেই বিমানটি প্রদর্শনের চেষ্টা করেন যাদব। প্রাথমিকভাবে স্থান না পেলেও পরে মুম্বাইয়ের বান্দ্রা এলাকায় প্রদর্শনের অনুমতি পান।
এরপর যাদব আরেকটি পরিকল্পনা করেন। বিমানটির বড় কয়েকটি অংশ খুলে ফেলা হয়। সে অংশগুলো বিচ্ছিন্নভাবে নিয়ে ফের জোড়া লাগানো হয়।
প্রদর্শনীতে তার সে বিমান জনসাধারণের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোও রিপোর্ট করতে যেন হামলে পড়ে। ভারতের বিমান চলাচল মন্ত্রীও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে বিমানটি দেখে যান।
তবে বিমানটি তৈরি করলেই তো হলো না, এটিকে আকাশে ওড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু ওড়ানোর অনুমতি জোগাড় করা সহজ নয়। বিমানের নানা খুটিনাটি বিষয় ও নকশা অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু সে অনুমতি আর মেলেনি।
ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা এমনকি বিমানটি ভালোভাবে পরীক্ষা করেও দেখেনি। রেজিস্ট্রেশনের অনুমতি প্রসঙ্গে একজন কর্মকর্তা জানান, এটি আকাশে উড়তে পারবে কিন্তু সেখানেই ধ্বংস হবে। মাটিতে আর নামবে না!
ফলে আকাশে ওড়ানো আর হয়ে ওঠেনি বিমানটি। কিন্তু এখানেই থেমে থাকেননি যাদব। তিনি আরেকটি বিমান বানানোর প্রস্তুতি নেন।
উপকরণ জোগাড় করে তিনি নিজের ছাদেই তৈরি শুরু করেন অপেক্ষাকৃত বড় ১৯ সিটের অন্য একটি বিমান। এতে তার এক বছর সময় লাগে। প্রায় আট লাখ ডলার ব্যয় করেন এর পেছনে। পারিবারিক অর্থ ব্যয় করে তিনি নিজের বিমান তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ভারতে উদ্ভাবনকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয় না। যদিও তার এ উদ্যোগ গুরুত্বের সঙ্গে নিলে ভারতের বিমান তৈরির ইতিহাস হয়ত নতুন করে লিখতে হবে।
সূত্র : বিবিসি