গ্রাম বাংলা ডেস্ক: শনিবার সারাদেশে বিদ্যুত বিপর্যয়ের দায়িত্ব কে নেবে তা নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় যারা অভিযুক্ত তাদের মধ্যে ভারত, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, জামায়াতে ইসলাম এমনকি রসাত্বক ভঙ্গিমায় সদ্য বিবাহিত ৬৭ বছর বয়স্ক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের নাম ও আসছে।
তাৎক্ষনিক ভাবে সরকার বলেছে, কয়েক ঘন্টার মধ্যে বিদ্যুত ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে। তবে হয়েছেও তাই। কিন্তু কেন এই সমস্যা হল তার স্পষ্ট ব্যাখা সরকারেরর পক্ষ থেকে এখনো আসেনি। তবে তদন্ত কমিটির উপর নিভর করা উচিত বলে মনে হলেও আমাদের তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন অধিকাংশিই আকাশের ঠিকানায় পাঠানো হয় আর তদন্ত প্রতিবেদনের পূবেই পক্ষ-বিপক্ষ পরস্পরকে দোষারোপ করায় তদন্ত হিমাগারে চলে যায়।
বিদ্যুত বিভ্রাটের সময় নাটোরে জনসভাস্থলে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অভিযোগ করেছেন, এটা সরকারের কারসাজি। তার জনসভা মিডিয়ায় প্রচার না হওয়ার জন্য সরকার এ কাজ করেছে। আবার একই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর একটি সভায় বিদ্যুত না থাকায় বেগম জিয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন হয়ে যায়।
তৃতীয় পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য জামায়াতে ইসলাম এ কাজ করেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রসাত্বক অভিযোগে বলা হয়েছে, অসময়ে বিয়ে করে বাসর ঘরে রেলমন্ত্রী কি করেছেন এই জন্য বিদ্যুত চলে গেছে।
বিভিন্ন দেশী বিদেশী সংবাদ মাধ্যম বলছে, ভারত থেকে কোন সমস্যা হয়নি। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কোন সাব স্টেশনে সমস্যা হওয়ায় এই পরিস্থিতি হয়েছে।
আমাদের প্রতিবেশী ও বিদ্যুত দাতা দেশ ভারতের অবস্থান ব্যাখা করে কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দ বাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিদ্যুত বিভ্রাটের দায় নিতে নারাজ ভারত বলে বলা হয়েছে।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়-
গ্রিড বিপর্যয়ে অন্ধকারে ডুবে গেল প্রায় গোটা বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকার সব গুরুত্বপূর্ণ দফতর এমনকী হাসপাতালেও কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। সকাল ১১টায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় শুরু হওয়ার পরে কোনও কোনও মহল থেকে এ জন্য ভারতকে দায়ী করে নানা খবর প্রচার করা হয়। এর ফলে নানা বিভ্রান্তি দেখা দেয়। বিকেলে ভারতের পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (অপারেশন্স) আর পি শাসমল সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, আমাদের দিকে সব ঠিকঠাক রয়েছে। বাংলাদেশের সাব-স্টেশনে কোনও সমস্যার জেরে তারা বিদ্যুৎ নিতে পারেনি।
পত্রিকাটি বলেছে, বাংলাদেশের পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের এক কর্তা দাবি করেন, ভেড়ামারা উপজেলায় জাতীয় বিদ্যুত্ সঞ্চালন লাইনে ফল্ট হওয়ার পরেই ব্ল্যাক আউট হয়ে যায়। ভারত-বাংলাদেশ লাইনের সংযোগস্থলে এই ফল্টটি হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুত্ বণ্টন সংস্থার এক মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ-লাইনে কোনও বিপর্যয়ের কারণেই সব বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলির উৎপাদন বন্ধ হয়েছে বলে তারা খবর পেয়েছেন। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, জাতীয় গ্রিড ফেল করেছে। আমরা সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি। কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই পরিস্থিতির জন্য ভারতকে দায়ী করে নানা বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে থাকে বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদ চ্যানেলে। কোনও কোনও মহল প্রচার করে ভারত থেকে বিদ্যুৎ টেনে নেওয়ার ফলেই বাংলাদেশের মানুষ সঙ্কটে পড়েছে। তবে বিকেলের দিকে সরকারি ভাবে ঢাকা জানায়, নিজেদের সমস্যাতেই এই দুর্ভোগ। বেশি রাতের দিকে ঢাকার কোথাও কোথাও বিদ্যুত্ আসে। তবে মধ্যরাতেও বহু এলাকাই অন্ধকারে ডুবে থাকতে দেখা যায়। এ দিন রাজশাহির নাটোরে বিরোধী বিএনপি-র নেত্রী খালেদা জিয়া বহু দিন পরে জনসভা করেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, এই সভার টেলিভিশন সম্প্রচার আটকাতেই সরকার দেশের সর্বত্র বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।
এখন প্রশ্ন এসে যায়, স্বরণকালের এই ঘটনা কে ঘটাল বা কেন ঘটল?
পর্যালোচনায় দেখা যায়, কোন সাব স্টেশনে সমস্যা হলে বিশেষ কিছু অঞ্চলের বিদ্যুত সমস্যা হত। কিন্তু সারাদেশে সমস্যা হল কি ভাবে? তবে এই কাজটি কোন ব্যাক্তি দল বা প্রতিষ্ঠান করে থাকতে পারে?