এম এ কাহার বকুল: লালমনিরহাট প্রতিনিধি; লালমনিরহাটের খুমনি বালার ঘরটির টিনের ছাউনি খুলে যাচ্ছে।সংস্কারের অভাবে ন্যুয়ে পড়েছে মরিচায় আবৃত টিন। বৃষ্টির পানি সবটুকু ঘরের ভিতর আর চাঁদনী রাতে বাতি ছাড়াই আলোকিত হয়। কাছে যেতেই গোংগানি শব্দ পাওয়া গেল।
ভিতরে প্রবেশ করেই চোখে পড়ল অসুস্থ এক বৃদ্ধা শরীরের যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন।
মাথায় শুধু না ভ্রু পর্যন্ত সাদা রং দেখে বুঝার বাকী রইলো না খুমনি বালার বয়স শতবর্ষ অতিক্রম করেছে। এরই মধ্যে প্যারালাইজডে হাত পায়ের শক্তি হারিয়েছেন। চোখে কম দেখেন, কানেও কম শুনেন।
খুমনি বালা লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের সেনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলে জানা গেল দীর্ঘ দিন ধরে শয্যাশায়ী বৃদ্ধা খুমনি বালা অযত্ন আর অবেহলায় দিন দিন ন্যুয়ে পড়ছেন। ছেলে সন্তানহীন খুমনি বালার একমাত্র অবলম্বন তার বিধবা মেয়ে বুলবুলি রানী। বিধবা মেয়ের দিনমজুরী আয়ে চলে তার চিকিৎসা ও সংসার নামক যন্ত্রের চাকা। মেয়ে কাজে যাওয়ায় একা পড়ে কাতরাচ্ছেন খুমনি বালা।
প্রতিবেশীরা জানান, খুমনি বালা মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বামীর সাথে মেয়েক জামাইকে নিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। সেখানে বিধবা হয়ে দেশ স্বাধীনের পর মেয়ে জামাইয়ের সাথে পুনরায় দেশে ফিরে মেয়ে জামাইয়ের সংসার সদস্যভুক্ত হন তিনি। স্বামীর রেখে যাওয়া ৩ শতাংশ জমিতে মেয়ে জামাইকে নিয়ে বসবাস করে আসছেন খুমনি বালা।
দেশ স্বাধীনের কয়েক বছর পরেই ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সংসারের বাতি সন্তান তুল্য জামাতা নিপিন চন্দ্র সেনও মারা যান। সেই থেকে সংসারের হাল ধরেন বিধবা মেয়ে বুলবুলি রানী। অসুস্থ মায়ের মুখে ভাত ও চিকিৎসা পত্রের জন্য বেচে নেন দিনমজুরী পেশা। অন্যের কাছে বর্গা নেয়া গরু দুইটিও থাকে এক ঘরেই। পাড়ার সবাই শারদীয় দুর্গা উৎসবে মেতে উঠলেও পেটের ভাত আর মায়ের চিকিৎসার জন্য বুলবুলি রানীকে যেতে হয়েছে অন্যের জমিতে দিনমজুরী করতে।
অসুস্থ মাকে ফেলে প্রতিদিন কাজেও যেতে পারেন না বুলবুলি রানী। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বৃদ্ধা খুমনি বালা পাচ্ছেন বয়স্ক ভাতা মেয়ে বুলবুলি পাচ্ছেন বিধবা ভাতা। এ ভাতার টাকায় বেঁচে আছেন তারা।
কাউকে দেখলে খুমনি বালা তার এক মাত্র ঘরটি মেরামত করে দেয়ার অনুরোধ জানান। টিনগুলো খুলে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি থেকে বাঁচতে পালিথিন সেটে দিয়েছেন টিনের নিচে। ঘরের নড়বরে খুটিগুলো যেকোন সময় ভেঙ্গে পড়বে। খুমনি বালা এ প্রতিবেদক বলেন, ঘরটা কোন দিন বা ভাঙ্গি পড়ে? মোর তো কায়ো (কেউ) নাই। ভগবান যে কোনটে থাকে? ভগবানো মোর ভিত্তি (আমার দিকে) একনা দেখে না, বাহে।
প্রতিবেশী পুর্ণ চন্দ্র জানান, আগে যথষ্ট পরিশ্রমী খুমনি বালাই দক্ষ হাতে সংসার চালাতেন। সুখেই ছিল তাদের সংসার। বেচারী অসুস্থ হওয়ায় তার চিকিৎসা খাওয়া দাওয়ার খুব কষ্ট হয়েছে। প্রতিবেশীরা মাঝে মধ্যে তাদের সহযোগিতাও করেন।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান জানান, এ উপজেলায় হতদরিদ্র, ভুমিহীন ও গৃহহীনদের সংখ্যা কিছুটা বেশী। অন্য উপজেলার তুলনায় আশ্রয়ন, আবাসন বা গুচ্ছগ্রামের সংখ্যা খুবই কম। এ উপজেলায় আশ্রয়ন প্রকল্পের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন বলেও দাবি করেন তিনি।