চট্টগ্রামে ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত শুরু

Slider চট্টগ্রাম

210048_bangladesh_pratidin_bbangladesh_pratidin_bdp-cu

চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসকদের ভুলে ও হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় শিশু রাইফার মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত কাজ শুরু করেছে তদন্ত কমিটি। আজ সকাল থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি এই তদন্ত কাজ শুরু করে।

প্রথম দিনে সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ম্যাক্স হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, আয়াসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন কমিটির সদস্যরা।
এদিকে, চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় শিশু মৃত্যুর সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকালও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। সমাবেশে অভিযুক্ত চিকিৎসকদের পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনা বিএমএ নেতার ফয়সাল ইকবালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘শিশু রাইফা মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে আমাদের কাজ শুরু করেছি। প্রথম দিনে ঘটনার দিন দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নিয়েছি। তাছাড়া সংশ্লিষ্টদের লিখিতভাবে বক্তব্য আমাদের কাছে হস্তান্তর করতেও নির্দেশ দিয়েছি। পাঁচদিন পর তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। ’ তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ।

এদিকে ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান হচ্ছেন অধ্যাপক শিব সংকর সাহা, সদস্য ডা. সেলিম আক্তার চৌধুরী, ডা. বসু বন্ধু বড়–য়া, অধ্যাপক চিরঞ্জীব বড়–য়া ও ডা. রকিবুল হক।

হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিয়াকত আলী জানান, তদন্ত কমিটি তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিবে। এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে তারা।
চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় দৈনিক সমকালের স্টাফ রিপোর্টার রুবেল খানের শিশুকন্যা রাইফা খানের মৃত্যুর ঘটনায় মানবন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) সাংবাদিক সমিতি। রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। মানবন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী বলেন, ‘চিকিৎসকদের দায়িত্ব চিকিৎসা সেবা দেওয়া। আমরা বিশ্বাস করি, কোন চিকিৎসক ইচ্ছাকৃতভাবে রোগীদের ভুল চিকিৎসা দেয় না। রাইফার ক্ষেত্রে দায়িত্ব অবহেলা ছিল। তবে তারা ভুল স্বীকার না করে উল্টো হুমকি দিয়েছে। এর মাধ্যমে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে। আমরা চাই, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। ’

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহাব উদ্দিন নিপু বলেন, রাইফাকে চিকিৎসা দেয়া হয় নি। এটি ভুল নয়। এটি অপরাধ। এমন ঘটনা যদি কোন চিকিৎসক সন্তানের হতো তাহলে তারা কী করতেন? বিএমএ নেতা ফয়সাল ইকবাল সীমালঙ্ঘন করেছেন। ’ এ সময় তিনি তদন্ত কমিটিকে স্বাধীন নিরপেক্ষ হয়ে দোষীদের চিহ্নিত করারও দাবি জানান।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সামান্য জ্বর ও গলা ব্যাথা নিয়ে চট্টগ্রাম নগরের ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় আড়াই বছরের শিশু রাফিদা খান রাইফাকে। শুক্রবার রাতে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার পর খিঁচুনি বেড়ে দাঁত ভেঙে মুখ রক্তাক্ত হয়ে পড়ে রাইফার। বিষয়টি টেলিফোনে হাসপাতালের ডাক্তারকে জানানো হলে তিনি রোগী না দেখেই সেডিল সাপোজিটর প্রয়োগ করতে বলেন। কর্তব্যরত ডাক্তার দেবাশীষ মাত্রা না দেখেই তা প্রয়োগ করতে বলেন নার্সকে। এটি দেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে রাইফা। ভুল চিকিৎসা, চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ভর্তি করানোর ৩০ ঘণ্টার মধ্যেই লাশ হলো আড়াই বছরের রাইফা। ছোট্ট শিশু রাইফার এমন করুন মৃত্যুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সমকাল সাংবাদিক রুবেল খান, তার পরিবারসহ সবাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *