সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার, নতুন ভাসমান চৌকি বসিয়েছে ভারত

Slider সারাদেশ

বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে নয়াদিল্লি। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তে এই নিরাপত্তা জোরদার করেছে বলে শনিবার ব্রিটিশ ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টার ভারতের উত্তর-পূর্বাংশকে বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত করার হুমকি দেওয়ার পর সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে ভারত। যদিও গত ডিসেম্বরের মাঝের দিকের এই মন্তব্যের বিষয়ে ‘‘কড়া প্রতিবাদ’’ জানিয়েছিল ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। ঢাকার কাছে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানো হয়েছে বলে গত ২০ ডিসেম্বর ভারতের পরররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানান।

দিল্লিতে সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেশী বাংলাদেশের নেতাদের দায়িত্বশীল মন্তব্যের গুরুত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সেদিন রণধীর জয়সওয়াল বলেছিলেন, ‘‘নয়াদিল্লি সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রকাশ্য মন্তব্য করার সময় দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিতে চায়’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা এই বিষয়ে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমরা জেনেছি, উল্লিখিত পোস্টটি ইতোমধ্যে মুছে ফেলা হয়েছে। তবে আমরা সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই, জনসমক্ষে মন্তব্য করার সময় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আরও সতর্ক থাকা উচিত।’’

দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং সুন্দরবন-সহ বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত অতিক্রমকারী নদীগুলোতে নতুন ভাসমান সীমান্ত চৌকি তৈরি করেছে।

বিএসএফের একটি সূত্র বলেছে, ‘‘পানিপথ সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা সীমান্ত এলাকায় ২৪ ঘণ্টা টহল চালিয়ে যাচ্ছি। সেখানে অতিরিক্ত ভাসমান ফাঁড়ি অবশ্যই আমাদের সহায়তা করবে। এগুলো সময়ের প্রয়োজন।’’

সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। রাজধানীতে বিক্ষুব্ধ জনতার সহিংসতার আশঙ্কায় সামরিক বিমানে করে ঢাকা ছাড়েন তিনি।

পরে বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নিপীড়নের অভিযোগ করে আসছে ভারত। এ নিয়ে প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে।

নয়াদিল্লি বাংলাদেশে হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দিল্লি বলেছে, হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের জীবন ও স্বাধীনতা রক্ষার প্রাথমিক দায়িত্ব ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারের।

গত মাসে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং বলেছিলেন, বাংলাদেশে গত ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর ২ হাজার ২০০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে; যা আগের বছরে ছিল ৩০২। তবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস উইং এই পরিসংখ্যানকে অতিরঞ্জিত বলে অভিহিত করে বলেছে, গত নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১৩৮টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।

দ্য টেলিগ্রাফের সঙ্গে আলাপকালে অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ায় দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এমনকি তারা (ভারত সরকার) এখন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হাসিনাকে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। এ কারণেই বাংলাদেশিরা ভারত সরকারের অবস্থানে ক্ষুব্ধ।’’

উপমহাদেশীয় দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কীভাবে পুনরুদ্ধার করা যেতে পারে, জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দ্য টেলিগ্রাফকে বলেন, ‘‘ভারতের পুতুল শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ভুলে যাওয়া, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের রায়কে সম্মান জানানো, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক পুনর্গঠন এবং সমান মর্যাদা ও অধিকারের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।’’

সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *