আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেছেন, বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে এমন কোনো কথা সংবিধানে লেখা নেই। যাদের জনসমর্থন নেই, তারা নির্বাচনে আসবে না।
শনিবার (৪ নভেম্বর) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে নিবন্ধিত দলগুলোকে জানাতে এ আলোচনার আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। শনিবার সকালে আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ২২টি নিবন্ধিত দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এর মধ্যে আটটি দল ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি।
সকালে অংশ নেওয়ার জন্য ২২টি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও সিপিবি, বিজেপি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, কল্যাণ পার্টি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) ও এলডিপি আলোচনায় অংশ নেয়নি।
ইসির সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফারুক খান বলেন, বিএনপি যে কর্মসূচি দিচ্ছে সেটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, এগুলো সহিংস কর্মসূচি। এগুলোকে ‘টেরোরিস্ট অ্যাকশন’ বলা যেতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের চিঠি নেওয়ার মতো বিএনপির কার্যালয়ে কেউ নেই– এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ফারুক খান বলেন, এটি বিএনপির জন্য লজ্জাজনক।
তিনি বলেন, সংবিধানসম্মত উপায়েই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু আছে। আগামীতে ভোট আরও সুষ্ঠু হবে, যখন ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে নির্বাচন কমিশন উৎসাহ প্রদান করবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এ সদস্য বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন যে বক্তব্যগুলো দিয়েছে এবং যে ব্যবস্থাগুলো নিয়েছে, আমাদের সরকার তাতে সহায়তা করেছে, তার বাস্তব প্রতিফলন আমরা দেখছি। ১৯৭২ সালে নিয়ম ছিল, ব্যালট পেপারের পেছনে সিল ও অফিসারের স্বাক্ষর থাকবে। তবে আটাত্তরে সেটাতে শুধু সিল রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এবার আবার প্রতিটি ব্যালট পেপারের পেছনে সিল ও স্বাক্ষরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এতে নির্বাচন আরও সুষ্ঠু হবে। এছাড়া আমাদের যে ব্রিফ দেওয়া হয়েছে তাতে মনে করি সংবিধান-সম্মত উপায়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।
কয়েকটি দল নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দ্বারা অরাজকতার ভয়ের কথা বলেছেন– এ বিষয়ে ফারুক খান বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো অরাজকতার নির্বাচন করেনি। আমাদের ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দেবেন। এখানে যেসব রাজনৈতিক দল নাম সর্বস্ব তাদের ভোটার নেই। তারাই এরকম অভিযোগ করতে পারে বলে আমি মনে করি।
বিএনপি নির্বাচনে আসবে না, তাদের ছাড়া কীভাবে নির্বাচন করতে পারেন– জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে, এটা সংবিধানে লেখা নেই, পৃথিবীর কোনো আইনেও লেখা নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমরা দেখেছি, অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না। সুতরাং যেসব রাজনৈতিক দলের সক্ষমতা নেই, জনসমর্থন নেই, জনগণের যাদের ওপর আস্থা নেই তারা নির্বাচনে আসবে না।
বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সহিংসতাপূর্ণ। এগুলোকে একটি দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি বলা যেতে পারে না। তারা টেরোরিস্ট অ্যাকশন করছে। যেকোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি আইনবিরোধী কাজ করে, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
বিএনপিকে ইসির সংলাপে আমন্ত্রণে চিঠি দেওয়া গেল না, এটা কি স্বাভাবিক ঘটনা– এমন প্রশ্ন করলে ফারুক খান বলেন, আমি মনে করি এটা বিএনপির জন্য লজ্জাজনক। তারা অফিসে থাকবে না কেন? ইসি নিজেই এটা জানিয়েছে যে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বসেছে এবং তারা আশ্বস্ত হয়েছে যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
নির্বাচনের পরিবেশ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ আছে এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো হবে। ইলেকশন কমিশন জানিয়েছে নির্বাচনে ভোটারদের উৎসাহিত করার জন্য ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাবে তারা। আমি মনে করি, জনগণ তখন আরও বেশি উৎসাহিত হবে এবং নির্বাচনে ভোট দিতে আসবে।