কারাবন্দী আলেমদের মুক্তি ও সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আগামী ২৮ অক্টোবর জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন করবে হেফাজতে ইসলাম। গতকাল চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে অবস্থিত জামিয়া ইসলামিয়া আজীজুল উলুমে (বাবুনগর মাদরাসায়) পুনর্গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির মজলিসে আমেলার এক বৈঠকে মহাসচিব আল্লামা সাজেদুর রহমান এ ঘোষণা দেন। এছাড়া বৈঠকে দেশব্যাপী জেলা, উপজেলা ও মহানগর কমিটি গঠন করে প্রত্যেক জেলায় শানে রেসালত সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে রাতে শাপলা চত্বরের ঘটনায় আমি এবং আল্লামা আহমদ শফী (রহ:) নিজ চোখে ঢাকার লালবাগ মাদরাসায় আনা ছয়জন শহীদের লাশ দেখে অঝোরে কেঁদেছি। আল্লাহ তায়ালা তাদের শাহাদতকে কবুল করুন। বাংলার জমিনে শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে না ইনশা আল্লাহ। সরকারকে মজলুম শহীদদের হত্যার বিচার করতে হবে। যতদিন হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন থাকবে ততদিন সরকারের কাছে আমাদের এই দাবি থাকবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের বেশ কিছু আলেম এখনো জেলে বন্দী আছেন। আমরা সরকারের কাছে তাদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। আলেম-ওলামাকে জেলে রেখে নির্যাতন ও অপদস্থ করলে আপনাদের কখনো কল্যাণ হবে না। আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করুন। মনে রাখবেন, আল্লাহ ছাড় দেন; কিন্তু ছেড়ে দেন না। আমি সরকারের কাছে দাবি করছি, হেফাজতের দায়িত্বশীল আলেম, স্নেহের মাওলানা মামুনুল হক, মুফতি মুনির হোসাইন কাসেমী, মুফতি মাহমুদ গুনবী, মুফতি ফখরুল ইসলাম ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীসহ জেলে বন্দী সব আলেমকে মুক্তি দিন।
আর আলেমদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে দেশে পুনরায় আস্থা, স্থিতিশীলতা, ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানাচ্ছি। এতে করে দেশ ও দশের কল্যাণ বয়ে আসবে ইনশা আল্লাহ। অন্যথায় কোনো কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তার দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑ সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা মুফতি খলিলুর আহমাদ কাসেমী, নায়েবে আমির আল্লামা মাহফুজুল হক, আল্লামা সালাহ উদ্দিন নানুপুরী, মুফতি জসিম উদ্দিন, আল্লামা আবদুল আউয়াল, ড. আহমদ আবদুল কাদের, মাওলানা সরোয়ার কামাল আজিজী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী, মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস কাসেমী, মুফতি হাবীবুর রহমান কাসেমী, মুফতি মোবারক উল্লাহ, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা ফুরকানুল্লাহ, মাওলানা খোবাইব, মুফতি হারুন ইজহার, মাওলানা মীর ইদ্রিস, মাওলানা জালাল উদ্দিন, মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনির, মুফতি মুহাম্মদ আলী, মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, মুফতি মাসঊদুল করীম, মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারী, অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী, মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সোবহানী, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, মাওলানা মাহবুবুল হক কাসেমী, মাওলানা জাকারিয়া নোমান, মুফতি কামরুজ্জামানসহ দুই শতাধিক নেতা। আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক দল নয়, জাতীয় ও আঞ্চলিক নির্বাচনে আমাদের কোনো প্রার্থিতা নেই, প্রপাগান্ডাও নেই। কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে আমাদের সংশ্লিষ্টতা নেই। আমরা বারবার বলেছি, এখনো বলছি, কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা ক্ষমতা থেকে নামানো আমাদের এজেন্ডা নয়। হেফাজতের ব্যানারে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করার কোনো সুযোগও নেই।
এ দেশে মুসলমানদের ঈমান-আকিদা ও ইসলামী তাহজিব-তমদ্দুন রক্ষার উদ্দেশ্যে এই সংগঠনটি গঠিত হয়। তাই আমরা শুধু ইসলামী শিক্ষা, সংস্কৃতি ও তাহজিবের বিকাশ এবং নাস্তিক্যবাদের প্রতিরোধে কাজ করে যাবো। ক্ষমতাকেন্দ্রিক কোনো ধরনের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ এই সংগঠনের নেই, যা আগেও বহুবার আমরা পরিষ্কার করে বলেছি। আমাদের কাজ, সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সব নাগরিকের কাছে দ্বীনের সহিহ দাওয়াত পৌঁছানো। এটিই আমাদের মূল সাংগঠনিক ও দ্বীনি দায়িত্ব। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে ধর্ম অবমাননা ও কটূক্তির সব প্রয়াস বন্ধ করে দেয়ার জন্য আমাদের সব প্রচেষ্টা সর্বদা অব্যাহত থাকবে ইনশা আল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, হেফাজত তার সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তথা ১৩ দফা দাবি সুন্দর ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আমরা সরকারের শত্রু নই, সরকারের কাজ সরকার করুক, আমাদের কাজ আমরা করব। তবে নাস্তিক্যবাদী শক্তি যদি মাথাচাড়া দেয় এবং কুরআন, আল্লাহ, রাসূল, উম্মাহাতুল মু’মিনিন, আসহাবে রাসূল সা:-এর শানে কটূক্তি ও ঘৃণা প্রচার করে এবং ইসলামবিদ্বেষ ছড়ায়, আর এতে সরকার যদি কোনো অ্যাকশন না নেয়, অথবা সরকার যদি নিজের পক্ষ থেকে এমন কোনো পদক্ষেপ নেয় যা ইসলামী শরিয়াহ পরিপন্থী তাহলে ঈমানের তাগিদে আমরা তার প্রতিবাদ করব এবং প্রয়োজনে গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।
হেফাজত আমির বলেন, বর্তমানে আমরা ইতিহাসের কঠিন সময় পার করছি, আমাদের চতুর্দিকে কান রাখতে হবে। প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে কেউ বা কোনো গোষ্ঠী ইসলামের বিরূদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র করছে কি না সে বিষয়ে সম্পূর্ণ সতর্ক থাকতে হবে। এ দেশে আমরা মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও সংখ্যালঘুদের ওপর কোনো আঘাত করিনি। আমরা সবধরনের ঘৃণাবাদের বিরুদ্ধে। আমরা এ দেশে সব ধর্মের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে চাই। কেউ কারো ধর্ম নিয়ে বাজে কথা বলা গ্রহণযোগ্য নয়।
সব ধর্মের প্রতি সহনশীলতা প্রদর্শনই ইসলামের শিক্ষা। তবুও এ দেশে ইসলামের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে আলেম-ওলামাকে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ দেয়া হয়। এটি সেক্যুলার ও তথাকথিত প্রগতিশীলদের রাজনৈতিক প্রকল্প। তারা ইসলামের গন্ধ পেলেই উগ্র হয়ে ওঠে; সবসময় ইসলামের প্রতি সাম্প্রদায়িক আক্রোশ প্রকাশ করে। আমরা তাদেরকে ইসলামের প্রতি সহনশীল হওয়ার আহ্বান করি; আলেম-ওলামার সান্নিধ্যে এসে ইসলামের শান্তিময় বাণী গ্রহণের আমন্ত্রণ জানাই। একটি শান্তিপ্রিয় সমাজ গড়তে হলে একে অপরকে আন্তরিকভাবে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। তাদের প্রতি আমাদের দ্বীনি দাওয়াত কবুলের আহ্বান জানাই।
দেশের সব আলেম, পীর-মাশায়েখ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং সর্বস্তরের মুসলিমদের প্রতি দল-মতনির্বিশেষে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যেকোনো মিশনকে কামিয়াব করার জন্য ঐক্যের বিকল্প নেই। দল-মতনির্বিশেষে আপনারা সবাই হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়–ন। হেফাজতে ইসলাম ছিল, হেফাজতে ইসলাম আছে এবং হেফাজতে ইসলাম থাকবে ইনশা আল্লাহ।