আগামী সংসদ নির্বাচনের আগের ১২৫ থেকে ১৩০ দিনকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবছে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচি তফসিল ঘোষণার আগে দেওয়া হবে, নাকি পরে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলটিতে। গত ২৯ জুলাই রাজধানীর গণঅবস্থান কর্মসূচিতে প্রত্যাশিত ফল না পাওয়ার পর দলটিতে মূলত এ আলোচনা শুরু হয়। চূড়ান্ত কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শিগগিরই জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব আলোচনায় বসবে বলে দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে সংবিধানে। সে হিসাবে ১ নভেম্বর থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। বিএনপি নেতারা মনে করেন, নির্বাচন কমিশন এই সময়ের অন্তত ৪৫ থেকে ৫০ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করতে পারে। সে হিসাবে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পরের ১২৫ থেকে ১৩০ দিন আন্দোলনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^রচন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমরা সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক শক্তি ও দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকার পতনের আন্দোলনে রাজপথে আছি; শান্তিপূর্ণভাবে আছি। তবে পরিবেশ-পরিস্থিতি বলে দেবে, আমরা কখন কী করব।’
দলের কোনো কোনো জ্যেষ্ঠ নেতা মনে করেন, গত ডিসেম্বরে ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ এবং গত জুলাইয়ের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশে নেতাকর্মীদের মনোবল চূড়ায় উঠেছিল। কিন্তু গত বছরের ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষে হতাহত এবং নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে আন্দোলনের পারদ তলানিতে নেমে যায়। সেই অবস্থা থেকে টেনে গত ২৮ জুলাই প্রতিকূল পরিবেশে ঢাকায় মহাসমাবেশ সফল করেন নেতাকর্মীরা। এই মহাসমাবেশ থেকে রাজধানীর প্রবেশদ্বারে পরের দিন গণঅবস্থান কর্মসূচির ডাক দেয়। কিন্তু সেই কর্মসূচিতে প্রত্যাশিত সাড়া পায়নি বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে গয়েশ^রচন্দ্র রায় ছাড়া কর্মসূচিতে বড় কোনো নেতাকে দেখা যায়নি। ওইদিন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা কে কোথায়, কী দায়িত্ব পালন করেছেন, কার কী ভূমিকা ছিল, সেসব নিয়েও দলের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
দলের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক আমাদের সময়কে বলেন, ‘২৯ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে প্রত্যাশিত ফল আসেনি, এটা হয়তো ঠিক। কিন্তু অর্জনও কম ছিল না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানেও বিএনপি নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান আন্তর্জাতিক বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। আবার আন্তর্জাতিক মহল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমালোচনা করেছে। তবে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মনোভাব হলো, এ নিয়ে আর কোনো আলোচনা-সমালোচনা যেন না হয়। আগামীতে আন্দোলন সফল করতে কী করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে বলেছে শীর্ষ নেতৃত্ব।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ওই বৈঠকে চূড়ান্ত কর্মসূচি নিয়ে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের ভাবতে বলা হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্য ছাড়াও চূড়ান্ত কর্মসূচি নিয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করবে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আমাদের সময়কে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক বিশ^ বলেন, আর দেশের জনগণ বলেন, সবার বক্তব্য একটাইÑ শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোও বলছে, এই সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে যাবে না। আমরা মনে করি, আমরা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি। এখন টোকা দিলেই সরকার পড়ে যাবে; সময় মতোই আমরা টোকা দেব।’
ছাত্রঐক্য গঠনের উদ্যোগ
সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে সরকারবিরোধী সমমনা ছাত্র সংগঠনগুলোকে নিয়ে ছাত্রঐক্য গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে ১৯ সংগঠন গত রবিবার বৈঠকও করেছে। প্রাথমিকভাবে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য’সহ কয়েকটি নাম প্রস্তাব এসেছে। সব ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বরে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা রয়েছে সংগঠনগুলোর। সমমনা ছাত্র সংগঠনের বাইরে ছাত্র ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করছে ছাত্রদল।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাঈফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, প্রাথমিকভাবে ১৯টি ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বৈঠক করেছি। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন। ক্রিয়াশীল অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার আন্দোলনের বিষয়ে তারাও ঐকমত্য আছেন।
১৯ ছাত্র সংগঠনের মধ্যে রয়েছেÑ ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্র ফেডারেশন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ছাত্র মিশন, নাগরিক ছাত্র ঐক্য, জাতীয় ছাত্র সমাজ (জাতীয় পার্টি, কাজী জাফর), ভাসানী ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জেএসডি), বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, খেলাফত ছাত্র মজলিস, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাগপা), ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় ছাত্র সমাজ (বিজেপি, পার্থ), বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র সমাজ, গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি) ও ছাত্র ফোরাম।