ইমামের বক্তব্যে ঘরে-বাইরে ঝড়

Slider জাতীয় টপ নিউজ

50473_f6

গ্রাম বাংলা ডেস্ক: বিসিএস পরীক্ষায় ছাত্রলীগ কর্মীদের বিশেষ সুবিধা দেয়া ও ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে এইচটি ইমামের বক্তব্যে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে ঘরে-বাইরে। তার বক্তব্যে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে সরকার। যে ছাত্রলীগের সুহৃদ হয়ে তিনি কথা বলেছেন, সেই ছাত্রলীগের সাবেক নেতারাও ক্ষুব্ধ তার বক্তব্যে। পুলিশ ও প্রশাসনের অনেকে চরম ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার বক্তব্যে। দেশের সাধারণ শিক্ষার্থী, চাকরিপ্রার্থী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার বক্তব্যে। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ইমাম বিরোধী দলের হাতেও বড় একটি অস্ত্র তুলে দিয়েছেন তার বক্তব্যে। দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ‘বেফাঁস’ কথা বললেও বিরোধী পক্ষ বলছে এইচটি ইমাম সত্য কথাই বলেছেন। দল এবং সরকারের জন্য বিব্রতকর হওয়ায় তার ওপর চটেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। ’৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পর বিতর্কিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া এইচটি ইমাম দীর্ঘ দিন থেকেই আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক হয়ে কাজ করছেন। দলের হাইকমান্ডের কাছে বিশ্বস্ত হিসেবে তিনি দলের নির্বাচন পরিচালনাসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজের সঙ্গে জড়িত। আওয়ামী লীগের গত মেয়াদে তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা। বিগত দু’টি জাতীয় নির্বাচন পরিচালনায় তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। নির্বাচনে দায়িত্ব পালন এবং গত মেয়াদে জনপ্রশাসন উপদেষ্টা থাকার সময় তার বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে অনেক অভিযোগ ওঠে। যদিও কৌশল আর দক্ষতা সব অভিযোগ উতরে নিজের অবস্থান ধরে রাখেন তিনি। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর তিনি এবার দায়িত্ব পালন করছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার পদে থেকে কেউ এমন বক্তব্য দিতে পারেন কিনা- এমন প্রশ্নে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান জানিয়েছেন, এইচটি ইমামের বক্তব্য সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। নির্বাচন কমিশন ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনে তারা কি ধরনের হস্তক্ষেপ করেছেন তার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। তারা যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করছেন তা-ও ফুটে উঠেছে তার বক্তব্যে। তিনি যে অপরাধ করেছেন সরকার চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। পৃথিবীর অন্য যে কোন দেশে এমন ঘটনা ঘটলে ব্যবস্থা নেয়া হয়। আমাদের দেশে নেয়া হবে কিনা এটি এখন দেখার বিষয়।

গত বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এইচটি ইমাম ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, ‘নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ পুলিশ ও প্রশাসনের যে ভূমিকা; নির্বাচনের সময় আমি তো প্রত্যেকটি উপজেলায় কথা বলেছি, সব জায়গায় আমাদের যারা রিক্রুটেড, তাদের সঙ্গে কথা বলে, তাদেরকে দিয়ে মোবাইল কোর্ট করিয়ে আমরা নির্বাচন করেছি। তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, বুক পেতে দিয়েছে।’ বিসিএস পরীক্ষা সম্পর্কে ছাত্রলীগ কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘লিখিত পরীক্ষায় ভাল করতে হবে, ভাইভা আমরা দেখবো।’ পুলিশ ও প্রশাসন দলীয়করণ এবং ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে আগে থেকেই। সরকার নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন করেছে এবং এতে ৫ ভাগ ভোটারও উপস্থিতি ছিল না বলে নির্বাচন বর্জনকারী ২০ দল অভিযোগ করে আসছে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। নির্বাচন নিয়ে দেশে ও বিদেশে ব্যাপক ভিত্তিক প্রশ্ন থাকায় শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ সরকার বিব্রত ও অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে। এ অস্বস্তি কাটাতে নানামুখী কৌশল ও কূটনৈতিক তৎপরতাও চালাচ্ছে সরকার। এমন অবস্থার মধ্যেই খোদ দলের একজন নীতিনির্ধারক এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত একজন নেতার পক্ষ থেকে নির্বাচন নিয়ে এমন খোলামেলা কথায় আওয়ামী লীগ ও সরকার চরম এক বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। এতে নির্বাচন নিয়ে বিরোধী পক্ষের বক্তব্য ও অভিযোগ প্রমাণে বড় অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও মনে করছেন সরকারি দলের নেতারা। এ নিয়ে শুক্রবার দলের সংসদীয় বোর্ডের সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে অংশ নেয়া দু’জন সদস্য মানবজমিনকে জানিয়েছেন, বৈঠকের শুরুতে প্রসঙ্গক্রমে এইচটি ইমামের বক্তব্যের বিষয়টি আসে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলীয় সভানেত্রী। এইচটি ইমামের পক্ষে কথা বলার অনুরোধ পেয়ে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছিলেন একজন সদস্য। প্রধানমন্ত্রী তাকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, এ নিয়ে আর কথা বলতে হবে না। তাকে পদত্যাগের পরামর্শ দিন। এইচটি ইমামের বক্তব্য দল ও সরকারের জন্য বিব্রতকর বলেও বৈঠকে নেতারা উল্লেখ করেন। বুধবার বক্তব্য দেয়ার পর অবশ্য এইচটি ইমাম আর জনসমক্ষে আসেননি। তার বক্তব্যের বিষয়ে যোগাযোগ করেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সূত্র জানিয়েছে, বিতর্কিত ওই বক্তব্যের জন্য তিনি শাস্তির মুখে পড়তে পারেন। তবে এখনই এমন কোন সিদ্ধান্ত নিলে দলের জন্য তা আরও বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে এমনটি চিন্তা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একটু সময় নেয়া হতে পারে। এইচটি ইমামের এই বক্তব্য দেয়ার পরের দিন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও তাকে সতর্ক হয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন। শুক্রবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, পত্রিকায় দেখলাম আমাদের এক উপদেষ্টা পাবলিক সার্ভিস কমিশন সম্পর্কে কথা বলেছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে পাবলিক সার্ভিস কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। এখানে সবারই পরীক্ষা দেয়ার সমান সুযোগ আছে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পাস করার সমান সুযোগ আছে। সুতরাং এ বিষয়ে কথা বলতে হলে একটু সতর্ক হতে হবে আমাদের। নির্বাচনে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে এইচটি ইমামের বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনী রাষ্ট্রের। কোন নির্দিষ্ট দল কিংবা গোষ্ঠীর নয়। এরা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করবে। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে কোন ব্যক্তিবিশেষ বা বাহিনীবিশেষের ভূমিকায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসেনি। আমরা জনসমর্থনের ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচন করেছি এবং জয়যুক্ত হয়েছি। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করি বলেই জনগণ আমাদের পুনরায় ক্ষমতায় এনেছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার এ বক্তব্যের কারণে তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল এক অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্যের জন্য এইচটি ইমামকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তার এ বক্তব্যের মাধ্যমে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেছে। তার কথায় থলের বিড়াল বের হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক অনভিজ্ঞ বলে তিনি এমন কথা বলেছেন। আসলে তিনি সত্য কথাই বলেছেন। শুধু বিএনপি নয় অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া এসেছে এইচটি ইমামের বক্তব্যে।
উল্লেখ্য, মহানবী (সা.), হজ ও তাবলীগ জামাত নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল সিদ্দিকী। তার বক্তব্যে দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হওয়ায় দল ও সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত শাস্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। লতিফ সিদ্দিকীর ইস্যুতেও চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে আওয়ামী লীগ। এ ইস্যুটি চাপা পড়তে না পড়তেই ফের নতুন বিতর্কের জন্ম দিলেন এইচটি ইমাম। সম্প্রতি ঘুষ নিয়ে মন্তব্য করে ইসলামী দলগুলোর তোপের মুখে পড়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *