চামড়া কিনতে ১০ ব্যাংক দেবে ২৫৯ কোটি টাকার ঋণ

Slider জাতীয়

আসন্ন ঈদুল আজহায় কাঁচা চামড়া কিনতে সরকারি-বেসরকারি ১০টি ব্যাংক প্রায় ২৫৯ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ঋণের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৮৪ কোটি টাকা কম। এবারও ঋণের বড় অংশের জোগান দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, যারা প্রতিষ্ঠিত ট্যানারি এবং ঋণ নিয়ে যথাসময়ে ফেরত দেয়, তাদেরই এবার ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর এ কারণেই বরাদ্দ আগের চেয়ে কমে গেছে।

বছরে যে পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ করা হয়, তার অর্ধেকের বেশি জোগান আসে কোরবানির ঈদে। এ সময় সংগৃহীত চামড়ার মানও ভালো হয়। তবে প্রতি বছরই দেখা যায়, কোরবানির চামড়া পানির দামে বিক্রি হচ্ছে। কখনো কখনো চামড়া বিক্রি করতে না পেরে মাটিতে পুঁতে ফেলার ঘটনাও ঘটছে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে অর্থায়নের অভাবকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগ আছে, মাঠপর্যায়ে ব্যবসায়ীদের হাতে নগদ অর্থ না পৌঁছানোর ফলে কোরবানির চামড়ার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন সুবিধাভোগীরা। আর এ সুযোগটি কাজে লাগায় একশ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী। তাই চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে মাঠপর্যাযের ব্যবসায়ীদের হাতে নগদ অর্থ পৌঁছানোর দাবি সংশ্লিষ্টদের।

জানা যায়, ঈদুল আজহায় আড়তদারদের মাধ্যমে প্রচুর চামড়া সংগ্রহ করেন ট্যানারি মালিকরা। ফলে এ সময় তাদের বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হয়। তাদের এই অর্থের জোগান দিতে প্রতিবছরই ঋণ দিয়ে আসছে বেশ কয়েকটি ব্যাংক। এবার সরকারি-বেসরকারি ১১টি ব্যাংক চামড়া ব্যবসায়ীদের ঋণ দেবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো- সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংক। এর মধ্যে সাউথইস্ট ব্যাংক বাদে অপর ১০টি ব্যাংক নির্দিষ্ট করে তাদের ঋণের পরিমাণ উল্লেখ করেছে।

রাষ্ট্রীয় মালিকানার চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে চামড়া কিনতে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিচ্ছে জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটির এবার ১০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত বছর ব্যাংকটি এ খাতে ১২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে অগ্রণী ব্যাংক। গতবার ব্যাংকটির এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৩ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংক এবার ২৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। গত বছরও ব্যাংকটি এ খাতে বরাদ্দ দিয়েছিল ২৫ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংক এবার ৩০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বছরও ব্যাংকটি ঋণ বরাদ্দ দিয়েছিল ৩০ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আমাদের সময়কে বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও রূপালী ব্যাংক চামড়া ব্যবসায়ীদের ঋণ দেবে। গ্রাহকদের আবেদন যাচাই-বাছাইসাপেক্ষে যোগ্যদের এই ঋণ দেওয়া হবে। এর বেশি কিছু বলতে তিনি রাজি হননি।

এ ছাড়া এবার বেসিক ব্যাংক চামড়া খাতে ৫ কোটি টাকা ঋণ দেবে বলে জানিয়েছে। গতবার ব্যাংকটি কী পরিমাণ ঋণ দিয়েছিল সেটি জানা যায়নি।

বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ দেবে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক। গতবার ব্যাংকটি ঋণ দিতে বরাদ্দ রেখেছিল ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। গতবার চামড়া কিনতে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ১৭০টি কোটি টাকা বরাদ্দ রাখলেও এবার মাত্র ৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবার এনসিসি ব্যাংক ২ কোটি টাকা ঋণ দেবে। গতবার ব্যাংকটি এ খাতে বরাদ্দ দিয়েছিল মাত্র ৫০ লাখ টাকা। দি সিটি ব্যাংক গতবার ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখলেও এবার দেবে মাত্র ২০ লাখ টাকা। এ ছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক এবার ঋণ দেবে ৫ কোটি টাকা। গতবার ব্যাংকটি কোনো ঋণ দিয়েছিল কিনা সেটি জানা যায়নি। এর বাইরে এবার সাউথইস্ট ব্যাংক গ্রাহকদের উপযুক্ত চাহিদার ভিত্তিতে এ খাতে ঋণ দেবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছে।

সূত্রগুলো বলছে, প্রতিবারই ব্যাংকগুলো বরাদ্দকৃত অর্থের সমুদয় অংশ বিতরণ করতে পারে না। এর অন্যতম কারণ হলো ব্যবসায়ীরা বকেয়া ঋণ পরিশোধ না করায় নতুন ঋণ দিয়ে পুরনো ঋণ সমন্বয় করে ব্যাংকগুলো। ফলে প্রকৃত অর্থে বরাদ্দের অর্ধেক ঋণও পান না ব্যবসায়ীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *