বগুড়ায় শত-বছরেরও বেশি ধরে সাবলা(মহল্লায়)গ্রামে তৈরি হচ্ছে কুমড়োর বড়ি

কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি


সব সবজির সাথে কুমড়ো বড়ি যোগ করে তরকারির (কারি) আলাদা এক স্বাদ। সম্পূর্ণ হাতের ছোঁয়ায় অতি সুস্বাদু এই খাবারটি তৈরি হয় কিন্তু পল্লীর মানুষদের কাছ থেকে। এমনি এক পল্লী রয়েছে বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার তালোড়া পৌর এলাকার সাবলা মহল্লায়। এ পাড়ার প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার শত বছর ধরে তৈরি করে আসছেন কুমড়ো বড়ি।

কুমোড় বড়ি মানে ডালের বড়ি। মাষকালাইয়ের ডাল, চাল কুমড়ো, জিরা, কালো এল্যাচ, কালো জিরা ও বিভিন্ন রকম মসলা দিয়ে তৈরি হয় শীতকালের রান্নার অন্যতম উপকরণ সুস্বাদু কুমড়ো বড়ি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার দুপচাঁচিয়া সদরের লক্ষ্মীতলা, কালীতলা, জিয়ানগর ইউনিয়নের বাঁকপাল হিন্দুপাড়া, তালোড়া ইউনিয়নের কইল ও পোড়াঘাটাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ কুমড়োবড়ি তৈরি হয়ে থাকে। তবে সাবলা এলাকাটি বেশি পুরোনো।

কুমড়ো বড়ি তৈরির কারিগররা জানান, বাংলা সনের কার্তিক মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত এ কুমড়ো বড়ির চাহিদা বেশি থাকে। এ বছর উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় হাটবাজারে কুমড়ো বড়ি বিক্রি করতে গিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষি করতে হচ্ছে। গত বছরে নভেম্বরে মাস কালাইয়ের ডাল প্রতি কেজি ১৩০ টাকা দাম ছিল। এ বছর এ ডাল ১৩৫ টাকা থেকে ১৪০ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে।

এছাড়াও কুমোড়বড়ি তৈরির অন্যান্য উপকরণের দামও বেড়ে গেছে। গত বছর সাধারণ মানের কুমড়ো বড়ি ১২০ টাকা এবং ভালো মানেরটা ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল । এবার সাধারণ মানের কুমড়ো বড়ি ১৫০ টাকা এবং ভালো মানের বড়ি ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

সাবলা মহল্লায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ মহল্লার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কুমড়ো বড়ি তৈরির কাজ করছেন পরিবারের সব সদস্যরা। বড়ি বানানোর কাজ সহজ কোনো বিষয় নয়। এখানে একাধিক ধাপ রয়েছে।

প্রথম মাসকালাইল যাতায় পিষে নেন কারিগররা। পরে সেটি রোদে শুকানো হয়। শুকানোর শেষে অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে মাটির বাটিতে মিশ্রণের কাজ শুরু করেন কারিগররা। মিশ্রণ শেষে পরিষ্কার কাপড়ের মধ্যে খামির তুলে ঘরের মধ্যে, বারান্দায় এবং উঠানে চাটাইয়ের ওপরে কুমড়ো বড়ি তৈরি করা হয়।

এরপর আবার রোদে শুকাতে হয়। এ জন্য নদীর ধারে, পুকুরপাড় বা রাস্তার ধারে ফাঁকা জায়গায় বাঁশের মাচাংয়ের ওপর বিছিয়ে দেয়া কাঁচা কুমড়ো বড়ি। পর্যায়ক্রমে দুই থেকে তিনদিন রোদে শুকানোর পর এসব কুমড়ো বড়ি বিক্রির জন্য উপযুক্ত হয়। পরে পাইকারী বিক্রিসহ স্থানীয় হাট-বাজারে খুচরা বিক্রি করেন কারিগররা।

ঐতিহ্যবাহী এ কুমড়ো বড়ির খ্যাতির কারণে বগুড়ারা পাশাপাশি রংপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকার এসে এ কুমড়ো বড়ি ক্রয় করে নিয়ে যায়।

সাবলা মহল্লার বড়ির কারিগর দীনেশ চন্দ্র জানান, বাপ-দাদারা এ পেশায় নিয়োজিত ছিল। আমাদের গ্রামের অধিকাংশ মানুষেরই ভিটে বাড়ি ছাড়া তেমন কোনো জমি-জমা নেই। শীতের এ মৌসুমে কুমড়ো বড়ি বিক্রি বেশি হয়। ধারাবাহিকভাবে আমি ও আমার পরিবারের লোকজন সংসারের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি এ কুমড়ো বড়ি তৈরির ঐতিহ্য ধরে রেখেছি। গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় প্রতিটি পরিবারই এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *