বিপুল পরিমাণ ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়ায় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) ইউরিয়া সার আমদানির এলসি খোলা বন্ধ করে দিয়েছে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো। এ অবস্থায় নতুন এলসি খোলার স্বার্থে আমদানি পরবর্তী অর্থায়ন (পিআইএফ) ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ করে শিল্প মন্ত্রণায়ের মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থাটি। তবে তাদের অনুরোধের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা যায়, বিসিআইসির কাছে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পাওনার পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বিদেশ থেকে আমদানি করা ইউরিয়া সারের মূল্য পরিশোধের জন্য বিভিন্ন সময়ে এই ঋণ দিয়েছিল ব্যাংকগুলো। ৯ শতাংশ সুদে নেওয়া এসব ঋণের মেয়াদ ১৮০ দিন। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এ মেয়াদ আরও দুই মাস বাড়াতে পারে। এরই মধ্যে বিসিআইসির নেওয়া ঋণের সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে।
বিসিআইসি জানিয়েছে, নিরবচ্ছিন্নভাবে ইউরিয়া সার আমদানি করতে প্রতি বছর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর অনুকূলে কাউন্টার গ্যারান্টি ইস্যু করে সরকার। এই গ্যারান্টির বিপরীতে ব্যাংকগুলো ছয় মাস মেয়াদে এলটিআর ঋণ (বিশ্বানের ঋণ) সৃষ্টির মাধ্যমে সারের মূল্য পরিশোধ করে। নির্দিষ্ট সময়ে ঋণ পরিশোধ না করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী খেলাপি হিসেবে বিবেচনায় করা হয়। অর্থাৎ পিআইএফ সুবিধা মেয়াদোত্তীর্ণ হলেই নতুন সুবিধা না দেওয়ার কথা নীতিমালায় বলা আছে। এতে আমদানি ব্যাহত হচ্ছে।
বিসিআইসির চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ইউরিয়া সারের এলসির মূল্য পরিশোধের মেয়াদ ছয় মাস নির্ধারিত আছে। বিভিন্ন কারণে এই সময়ের মধ্যে দায়টা পরিশোধ করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। তাই আমরা এর মেয়াদ ১ বছর করার অনুরোধ করেছি। সময় বাড়ানো হলে আমাদের একটু সুবিধা হবে। তা ছাড়া আমরা শুনেছি টিসিবিরও এ ধরনের দায় পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তাই আমরাও বাড়ানোর অনুরোধ করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, বিসিআইসির চিঠি আমরা পেয়েছি। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
জানা যায়, এলটিআর ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ করে গত ২৩ জানুয়ারি বিসিআইসি থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। আর গত ৩১ জানুয়ারি শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে ওই চিঠি পাঠানো হয়। চিঠির একটি অনুলিপি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগেও পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, সরকারি কাউন্টার গ্যারান্টির বিপরীতে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এলটিআর দায় সৃষ্টির মাধ্যমে আমদানিকৃত ইউরিয়া সারের মূল্য পরিশোধ করে থাকে। সৃষ্ট এলটিআর সার বিক্রয় করা অর্থ ও সরকার হতে প্রাপ্ত ভর্তুকির অর্থ দ্বারা পরিশোধ করা হয়। প্রতিটি এলটিআর দায় ৬ মাস। এ মেয়াদের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় খেলাপি ঋণ বিবেচনায় নতুন করে ঋণপত্র স্থাপন করা ব্যাংকের পক্ষে সম্ভবপর নয় বলে পত্রের মাধ্যমে বিসিআইসি জানিয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে বিসিআইসি কর্তৃক আমদানিকৃত ইউরিয়া সারের বিপরীতে সরকারি ব্যাংকগুলোর মোট ১২ হাজার ৩৬ কোটি ২৯ লাখ টাকার এলটিআর দায় রয়েছে। এর মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ দায় রয়েছে ৩ হাজার ৫৭৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে মেয়াদোত্তীর্ণ দায় থাকলে তা খেলাপি ঋণ হিসেবে বিবেচিত হয় মর্মে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর পক্ষে নতুন করে এলসি স্থাপনের ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে মর্মে বিসিআইসিকে জানিয়েছে। এ অবস্থায় বিসিআইসি কর্তৃক ইউরিয়া সার আমদানি অব্যাহত রাখার স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা শিথিল করে ঋণের মেয়াদ ১৮০ দিনের পরিবর্তে ৩৬০ দিন এবং ঋণ পুনঃতফসিলে ৬০ দিনের পরিবর্তে ১৮০ দিন মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
গত বছরের জুনে আমদানি পরবর্তী অর্থায়ন সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়- নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বাণিজ্যিক পণ্য, শিল্পের কাঁচামালসহ বিভিন্ন খাতে আমদানির অর্থ পরিশোধের জন্য সব ধরনের ফান্ডেড ঋণ সুবিধা এলটিআর, এলএটিআর, এমটিআর যে নামেই অভিহিত করা হোক তা পিআইএফ নামে অভিহিত হবে। এসব ঋণ নেওয়ার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। কোনো গ্রাহককে একই এলসির বিপরীতে পণ্য আমদানিতে একাধিকবার এই ধরনের ঋণ সুবিধা দেওয়া যাবে না। তবে নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কোনো কারণে ঋণ বকেয়া হয়ে পড়লে খেলাপি হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই গ্রাহকের নামে নতুন ঋণ দিতে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিতে হবে। এ ছাড়া ঋণের মেয়াদ বাড়ানো বা খেলাপি হয়ে গেলে পুনর্গঠন করতে হলে এর যৌক্তিকতা যাচাই করে ব্যাংকের পর্ষদের মধ্যবর্তী সময়ে সর্বোচ্চ এক দফা মেয়াদ বাড়ানো যাবে।