ঋতুরানীর রূপের ছোঁয়া

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি

আকাশে পেঁজা তুলার মতো সাদা মেঘ। নদীর ধারে, মাঠে-ঘাটে ফুটে থাকা কাশফুল। ভোরের ঘাসে হালকা শিশিরের ছোঁয়া। পাখপাখালির গানে মুখরিত গাছগাছালি আর নীল সবুজ প্রকৃতির মনকাড়া শোভা- সব মিলিয়ে ঋতুরানী শরতের অসাধারণ চরিত্র ফুটে ওঠে চার দিকে।

বর্ষার মতো শরতের আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা নেই। দাপুটে বৃষ্টির মেঘগুলো সরে গিয়ে বক সাদা মেঘে ভরে থাকে নীল আকাশ।
শরতের শুরুতে গাঁয়ের কৃষকেরা নতুন ধানের চারা লাগায়। দুপুরের রোদ সহনীয় হয়ে যায় ছুটে চলা মেঘের শীতল বাতাসে। এখন আগের মতো লাঙল-জোয়াল দেখা যায় না। প্রায় সবখানেই কলের লাঙল (ট্রাক্টর) দিয়ে হাল চষা হয়। কলের লাঙলের পেছনে পেছনে মাছের আশায় ছুটতে থাকে গাঁয়ের কিশোর-কিশোরীরা। এ সময় তাদের হাতে চালনি, ছাই ও মাছ ধরার নানান উপকরণ থাকে। মাছ ধরার ছলে সারা শরীরে কাদা মেখে হই-হুল্লোড়ে মেতে ওঠে তারা।
শীতকালের অন্যতম সবজি শিমের বীচি রোপণ করা হয় এই শরতেই। ভোরের শিশির গায়ে মেখে লকলকিয়ে বাড়তে থাকে শিমের লতা। ঝরে পড়া শিউলি ফুলের গন্ধে সুবাসিত হয় ভোরের শরৎ। কিশোরীরা রোজ ভোরে শিউলি কুড়িয়ে নেয় আর ঝরে পড়া শিউলির মালা গেঁথে গলায় পরে। তাই শিউলিতলা কিশোরীদের খুব পছন্দের জায়গা।

বিল-ঝিল পানিতে টইটম্বুর থাকে এ সময়। মাছেরা অবাধে বিচরণ করে। বক, মাছরাঙা আর ডাহুকের আনাগোনা দেখা যায় ডোবা ও ঝিলের ধারে।
শরতের জ্যোৎস্না রাতের তুলনাই হয় না অন্য কোনো ঋতুর সাথে। এটাকে জ্যোৎস্নার রাজকীয় বাহারী রূপ বললেও বেশি বলা হবে না। এমন চাঁদজ্বলা রাতে শিশু-কিশোরদের আনন্দের মাত্রা বেড়ে যায়। বাড়ির উঠোনে জড়ো হয়ে লুকোচুরি, ডাক ডাক বেলিসহ নানান রকম খেলায় মেতে ওঠে তারা। বড়রা মেতে ওঠেন খোশগল্পে। শরতরাতের আকাশে মেঘের ছুটোছুটি প্রতিদিনের দৃশ্য। চাঁদের লুকোচুরি খেলা দেখতে দেখতে ছোট্ট শিশুরা ঘুমিয়ে পড়ে মায়ের কোলে।
শরতের আবহাওয়া অনেক আরামদায়ক। না ঠাণ্ডা না গরম। সাথে প্রকৃতির সৌন্দর্যও আকর্ষণ করে বাংলাদেশের মানুষদের।
শরৎ চোখজুড়ানো প্রকৃতির ঋতু। সৌন্দর্যপ্রেমীদের পুলকিত আর শিহরিত হওয়ার ঋতু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *