অচল ঢাকা জিম্মি লাখো মানুষ

Slider ঢাকা


ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ভয়াবহ যানজটে স্থবির রাজধানী ঢাকা। সড়কে কয়েক লাখ মানুষ জিম্মি। ভোগান্তি, আতঙ্ক নিয়ে শপিংমলমুখী ক্রেতা এবং সাধারণ মানুষ। গতকাল বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রভাব পড়েছে পুরো রাজধানীতে। সকাল থেকেই ওই এলাকার মূল সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। দফায়-দফায় শিক্ষার্থী-ব্যবসায়ী ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, টিয়ারশেল নিক্ষেপের ঘটনায় সকাল থেকেই পুরো এলাকায় বিরাজ করে থমথমে পরিস্থিতি।

সংঘর্ষের ঘটনায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন মার্কেটমুখী ক্রেতা এবং সাধারণ মানুষ। শত শত গাড়ি থমকে যায় রাস্তায়। এর ফলে অসহনীয় যানজটে পুরো ঢাকা স্তব্ধ।

অনেক ক্রেতা ঈদকে সামনে রেখে কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন নিউ মার্কেটে। কেউ আবার এই সংঘর্ষের কথা জানতেন না। যানজটের কারণে অনেকে গাবতলী, মিরপুর থেকে হেঁটে কর্মস্থলে পৌঁছান। অনেকের গন্তব্য আবার সদরঘাট পর্যন্ত। এই অসহনীয় যানজট পৌঁছে যায় আমিনবাজার পর্যন্ত। সেখান থেকেও অনেকে ভিন্ন ব্যবস্থা করে গন্তব্যে পৌঁছেন। নিউ মার্কেট, সায়েন্সল্যাবে সম্পূর্ণ রাস্তা বন্ধ ছিল। সাভার থেকে আজিমপুরগামী বাসগুলো কাঁটাবনের দিকে গেলেও সেখানে ছাত্ররা সড়ক বন্ধ করে রাখেন। প্রধান সড়ক, গলি কানায় কানায় পূর্ণ ছিল বিভিন্ন যানবাহনে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসে বসে থাকার পর অসহায় মানুষ ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে বাস থেকে নেমে ছুটে যান নিজ নিজ গন্তব্যে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে হাসপাতালে যাওয়া-আসা রোগীদের। সায়েন্সল্যাব থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত রাস্তাটি বন্ধ থাকায় নিউ মার্কেট ট্রফিক জোন ডাইভারশনের ব্যবস্থা করে। এ কারণে সায়েন্সল্যাব থেকে নীলক্ষেত হয়ে আজিমপুরগামী গাড়িগুলোকে সায়েন্সল্যাব-কাঁটাবন-নিউ মার্কেট থানা পলাশী হয়ে আজিমপুর যেতে হয়েছে। একইভাবে আজিমপুরগামী গাড়িগুলো চলাচল করছে। অফিসগামীদের আধা ঘণ্টার রাস্তা সময় লেগেছে তিন-চার ঘণ্টা।

কেনাকাটার জন্য গাজীপুর থেকে নিউ মার্কেটে এসেছিলেন সুমাইয়া বেগম। সঙ্গে তার দুই মেয়ে। তিনি বলেন, এই মার্কেটে কী হয়েছে এখন পর্যন্ত কিছুই জানি না। এখানে এসে দেখি পরিস্থিতি খুবই খারাপ। ওভার ব্রিজে এসে দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি। ভেবেছি পরিস্থিতি ঠিক হয়েছে। ব্রিজ থেকে রাস্তায় নেমে দেখি ইটপাটকেল ছুড়ছে। ঈদের জন্য আজ মেয়েদের শেষ কেনাকাটা করতে এসেছি। কিন্তু এতো ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়তে হবে কখনো ভাবিনি। এখন আবার ফিরে যেতে হবে। এদিকে গাড়ি চলছে না। অনেক ভোগান্তি, আতঙ্ক নিয়ে আবার ফিরে যেতে হচ্ছে।
দুই বান্ধবী বসিলা থেকে এসেছিলেন কেনাকাটা করতে। তারা বলেন, রাস্তায় জ্যাম ছিল। বসিলা থেকে আসতে দুই ঘণ্টা লেগেছে। কিছুদূর হেঁটেও এসেছি। এসে মাত্র ব্রিজের ওপর দাঁড়ালাম। এই ভয়াবহ অবস্থা আগে জানতাম না।
সালাম শিকদার বলেন, আসাদগেট থেকে নিউ মার্কেট পর্যন্ত কোনো গাড়ি নড়েনি। থমকে ছিল। আমি দেড় ঘণ্টা এক জায়গায় বসে থাকার পর বাস থেকে নেমে যাই। এরপর হেঁটে নিউ মাকেট এসে পৌঁছালাম। এখন এসে দেখি এখানে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সম্পূর্ণ রাস্তায় শত শত গাড়ি থমকে আছে। শুধু আসাদগেট না এই জ্যাম মিরপুর ছাড়িয়ে গিয়েছে।
ঢাকার একটি হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে যাচ্ছিল এম্বুলেন্স। এম্বুলেন্সের ভেতরে থাকা শওকত বলেন, একজন রোগীর অপারেশন হয়েছে। তাকে ভর্তি করার জন্য ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাচ্ছি। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা সাইড করে দিলেও ব্যবসায়ীরা গাড়িটি ভাঙচুর করে। এম্বুলেন্সের চারদিকের গ্লাস ভেঙে যায়। রোগীর মাথায় এসে ইট লাগে এতে তার মাথা ফেটে যায়।
সাত ও পাঁচ বছরের দুই শিশুর হাত ধরে নিউ মার্কেটে ছোটাছুটি করছিলেন ফরিদা বেগম। তিনি বলেন, ধানমণ্ডি ৩২ থেকে দুই বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য বের হয়েছি। দুই ঘণ্টায় এসে পৌঁছেছি সিটি কলেজের সামনে। রাস্তায় ভয়াবহ জ্যাম ছিল। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে কিছুদূর পায়েও হেঁটে এসেছি। এখন দেখি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি।
এম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের দিকে যাবেন রাজিব। তিনি বলেন, সাভার থেকে ভাইকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে যাওয়ার উদ্দেশ্য বের হয়েছি সকাল ৭টায়। আমিনবাজার এসে দেখি গাড়ি আর নড়ে না। শত শত গাড়ি থেমে আছে। এদিকে ভাইকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে। ধীরে ধীরে বিকাল তিনটার সময় এসে পৌঁছেছি ল্যাবএইডের সামনে। এখনো গাড়ি চলছে না। ভাইকে কখন ডাক্তার দেখাবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
মিরপুর রোড বন্ধ থাকায় কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউজুড়ে দিনভর ছিল তীব্র যানজট। এ ছাড়া রোকেয়া সরণি, মগবাজার, মৌচাক, পল্টন এলাকায়ও দিনভর ছিল তীব্র যানজট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *