নারায়ণগঞ্জ: করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে দু’জনের মৃত্যুর পর এবার নারায়ণগঞ্জে নতুন করে ৬ জন শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে এখানে করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১১তে। এ জেলাকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা দিয়েছে আইইসিডিআর। এ অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ শহরে ‘জরুরিভিত্তিতে কারফিউ’ জারির দাবি জানিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল আমিন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রোববার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এ দিকে এক বিবৃতিতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান ‘যত দ্রুত সম্ভব পুরো জেলাকে লকডাউনের আওতায় আনা’র জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মাত্র ২ দিনে করোনা শনাক্তের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় রোববার জরুরি বৈঠক করে প্রশাসন।
জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ রোববার দুপুরে আইইডিসিআরের বরাত দিয়ে জানান, আগের ৫ জন নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলায় করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১১। এর মধ্যে বন্দরে নাসিক ২৩নং ওয়ার্ডে এক নারী এবং সদর উপজেলার ফতুল্লার কাশীপুর বাংলাবাজার এলাকায় এক পুরুষ মারা গেছেন। সর্বশেষ এক অর্থোপেডিক্স ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
তিনি জানান, ওই চিকিৎসক নারায়ণগঞ্জ শহরের বেইলি টাওয়ারের বাসিন্দা। আক্রান্ত ৬ জনই বর্তমানে আইইডিসিআরের পর্যবেক্ষণে ঢাকায় চিকিৎসাধীন আছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাওয়া মারা যাওয়া এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। বেশকিছু জায়গায় লকডাউন করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, রোববার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় থেকে গত ৭২ ঘণ্টায় নারায়ণগঞ্জে ‘করোনাভাইরাস আক্রান্ত’ এলাকা হিসেবে নগরীর আমলাপাড়া, উকিলপাড়া, নন্দীপাড়া, গলাচিপা, চাষাড়া বেলী টাওয়ার, পুরান পালপাড়া, পাইকপাড়া, বাবুরাইল, ফতুল্লার কাশিপুর, লামাপাড়া, বন্দর (সমগ্র), সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলী ও জালকুড়ি এলাকায় প্রায় ১ হাজার বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
সিটি কর্পোরেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। বাণিজ্যিক নগরী নারায়ণগঞ্জেও এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। দিন দিন সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করায় কয়েকটি এলাকা প্রশাসনের সহায়তায় লকডাউন করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সিটি এলাকায় ইপিজেড, গার্মেন্টস, হোসিয়ারীসহ ভারী শিল্প কল-কারখানার পাশাপাশি চাল, ডাল, আটা, ময়দা, লবণসহ নিত্যপণ্যের পাইকারী বাজার রয়েছে বিধায় এলাকাটি শ্রমিক অধ্যুষিত। ফলে ঘনবসতিপূর্ণ এই নগরীতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি অত্যধিক।
মানুষের জীবন রক্ষার্থে সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী জরুরিভিত্তিতে সিটি এলাকা লকডাউন/কারফিউ জারি করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন। অন্যথায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
বিবৃতিতে শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জে ক্রমশ করোনা ছড়িয়ে পড়ার আগেই এটাকে রোধ করতে হবে। তাই আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করব যত দ্রুত সম্ভব পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলাকে লকডাউনের আওতায় আনতে হবে। সেই সঙ্গে প্রশাসনকে এও আহবান করব, ‘লকডাউন মানে লকডাউন’, এর কোনো ব্যত্যয় ঘটতে দেয়া যাতে না হয়। জনগণের স্বার্থে, মানবজাতির স্বার্থে, দেশের স্বার্থে কেউ যেন ঘরের বাইরে বের হতে না পারে। কাউকে যেন ঘর থেকে বের হতে না দেয়া হয়।
শামীম ওসমান আরও বলেন, আমাদের আওয়ামী লীগে শত শত নেতাকর্মী, স্বেচ্ছাসেবী, সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিতরা সক্রিয় আছেন। যে কেউ ফোন করলে আমরা তাদের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেব।
তিনি বলেন, এই সময়ে আমাদের কঠোর হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। বারবার প্রশাসন মাইকিং ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করার পরও দেখতে পাচ্ছি অনেকে বাইরে বের হন। অনেক এলাকাতেও লোকজন জড়ো হয়। তাই অনতিবিলম্বে প্রশাসনকে বলব কোনোদিক না তাকিয়ে আপনারা কঠোর হোন। এখন বড় বিষয় পুরো জাতিকে রক্ষা করা। এ জন্য যত কঠোর প্রয়োজন আপনারা হোন।
জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। প্রয়োজনে প্রশাসন আরও কঠোর হবে। এখানে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।