ডেস্ক | মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রামেপর বিরুদ্ধে অভিশংসন তদন্ত চালু করেছে পার্লামেন্টের বিরোধী দল নিয়ন্ত্রিত নিম্নকক্ষ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আগামী নির্বাচনে তার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে চাপ দিয়েছিলেন তিনি। এই অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ার পর থেকেই তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। ডেমোক্রেটরা তো বটেই, নিজ দল রিপাবলিকান পার্টিতেও সমালোচনা পিছু ছাড়ছে না তার। একাধিক রিপাবলিকান এই তদন্তের সমর্থন দিয়েছেন।
লন্ডনভিত্তিক দ্য টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধীরে ধীরে প্রেসিডেন্টের সমর্থন থেকে সরে যাচ্ছেন তার সতীর্থরাই। শুক্রবার এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, অভিশংসন তদন্ত শুরুর পর থেকে জনসমর্থনও হারাচ্ছেন তিনি। মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষের সদস্যরাই তার বিরুদ্ধে কথা বলছেন।
এই বিতর্কের শুরু হয় এক গোপন সংবাদদাতার (হুইসেলব্লোয়ার) অভিযোগকে ঘিরে। তিনি দাবি করেন, ২৫শে জুলাই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ট্রামপ। এক পর্যায়ে বাইডেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্য খতিয়ে দেখতে চাপ দেন তিনি। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে ইউক্রেনের তৎকালীন শীর্ষ প্রসিকিউটর একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করছিলেন। ওই প্রতিষ্ঠানের সদস্য ছিলেন বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেন। জো বাইডেন তখন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। ট্রামেপর অভিযোগ, নিজের ছেলেকে বাঁচাতে ওই প্রসিকিউটরের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করে তাকে পদচ্যুত করেন বাইডেন। তবে ওই সময় আরো বহু পশ্চিমা নেতা ওই প্রসিকিউটরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে তার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিল। পরবর্তীতে তার জায়গায় আসা নতুন প্রসিকিউটর তদন্ত শেষ করেন। তদন্তে নির্দোষ প্রমাণ হয় হান্টার বাইডেন। ট্রামেপর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠার পর তার বিরুদ্ধে অভিশংসন তদন্ত চালু করে ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ। এক পর্যায়ে ট্রামপ- জেলেনস্কির ফোনকলের রেকর্ড প্রকাশ করে হোয়াইট হাউস। কিন্তু তাতে ট্রামপকে অভিশংসন করার মতো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে হুইসেলব্লোয়ার জানান যে, হোয়াইট হাউস ওই ফোনকলের রেকর্ড ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে। এতে ট্রামেপর প্রতি নতুন করে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয় তার সতীর্থদের। এর মধ্যে শুক্রবার পদত্যাগ করেন ইউক্রেনে নিযুক্ত বিশেষ মার্কিন দূত কার্ট ভোলকার। তদন্তের আওতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পমেপওকে সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ করতে লিখিত নির্দেশ দিয়েছে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের তিন কমিটি। কমিটি আরো জানায়, তারা এই ঘটনায় আরো পাঁচ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
এদিকে, অন্তত তিনটি জরিপে দেখা গেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার অভিশংসন তদন্তকে সমর্থন করে। জরিপ সংগঠন পিবিএস/ম্যারিস্ট পরিচালিত এক জনমত জরিপে দেখা যায়, ফোনকলের তথ্য ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ ওঠার আগে ৪৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী তদন্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। এর মধ্যে ৬ শতাংশ রিপাবলিকানও ছিল। আর তদন্তের বিপক্ষে ছিল ৪৬ শতাংশ।
রিপাবলিকান পার্টিতেও সমর্থন হারাচ্ছেন ট্রামপ। শুক্রবার রিপাবলিকান কংগ্রেসমেন মার্ক আমোদেই ট্রামেপর বিরুদ্ধে অভিশংসন তদন্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। বলেছেন, এটা চলুক। দেখা যাক কী হয়। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান রিপাবলিকান সিনেটর রিচার্ড বুরও। বৃহসপতিবার তিনি জানান, এ ব্যাপারে একটি স্বাধীন তদন্ত চালু করবে তার প্যানেল। সাবেক রিপাবলিকান সিনেটর জেফ ফ্লেক বলেন, গোপন ভোটের আয়োজন হলে অন্তত ৩৫ জন রিপাবলিকান ট্রামেপর বিরুদ্ধে ভোট দেবে। মধ্যপন্থি দুই রিপাবলিকান চার্লি ব্যাকার ও ফিল স্কট উভয়ে অভিশংসনের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন। অপর এক রিপাবলিকান সিনেটর মিট রমনি জানিয়েছেন, ট্রামেপর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে সত্য ঘটনা সামনে আসা উচিত।
এই বিতর্কের মধ্যে শুক্রবার রাতে মার্কিন গণমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এক গোপন নথি প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, ট্রামপ ২০১৭ সালে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভকে বলেছিলেন যে, ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের ব্যাপারে তিনি মোটেও উদ্বিগ্ন নন। কেননা, পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রও এমন কাজ করেছে। ওই খবর প্রকাশের পর ট্রামেপর ওপর চাপ আরো বেড়ে গেছে।