পেঁয়াজের সংকট নেই দামে তবু ঊর্ধ্বগতি

Slider অর্থ ও বাণিজ্য


প্রতিদিনের রান্নায় অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। ফলে বরাবরের মতো বেকায়দায় পড়েছেন স্বল্পআয়ের মানুষ। মসলাজাতীয় এ পণ্যটির দাম ঈদের বাজারেও ততটা বাড়েনি, ঈদের পর দিনদশেকের ব্যবধানে যতটা বেড়েছে। এ সময়কালে কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে দেশি পেঁয়াজের দাম ৬০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার থেকে প্রাপ্ত দরে এমনটাই দেখা গেছে।

বছরের এ সময়ে দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ার যৌক্তিক কোনো কারণ দেখছেন না খোদ পাইকারি ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত ভারতের পেয়াজ আমদানি বন্ধের অজুহাত দেখিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তার মাশুল গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

মূল্যস্ফীতির বাজারে বেতনের সীমিত টাকায় হেঁসেলের খরচ সামাল দিতে আরও দশ জন সাধারণ আয়ের মানুষের মতো বেশ চাপেই রয়েছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. সাইফুল ইসলাম। এর মধ্যে পেঁয়াজের মতো অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যটির অতিরিক্ত দাম নতুন করে দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে, জানাচ্ছিলেন তিনি। রাজধানীর কদমতলী এলাকার এ বাসিন্দা বলেন, রান্নায় পেঁয়াজের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। সেখানে প্রতি কেজিতে ২০-২৫ টাকা বেড়ে গেলে মাসে হেঁসেলের খরচ অনেকখানি বেড়ে যাবে। রোজার মধ্যেও ৩৫-৪০ টাকায় কেনা গেছে, ঈদের বাজারেও ৫০ টাকায় কিনেছি, এখন তা ৬০ টাকা হয়েছে। একটি পণ্যের দাম অল্প সময়ে এত হারে বাড়ে কীভাবে তা বোধগম্য নয় আমাদের। বাজারে কড়া নজরদারি থাকলে এমনটা হতে পারে না।

সাইফুলের কথা অনুযায়ী রাজধানীর কদমতলী এলাকার সাদ্দাম মার্কেট বাজারসহ একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, রোজার ঈদের বাজার থেকেই পাইকারিতে দাম বাড়তে শুরু করে। যা এখনও বাড়ছে।

সাদ্দাম মার্কেট বাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. মিলন হোসেন বলেন, দেশি কিং পেঁয়াজের কেজি এখন ৫৫ টাকা এবং সব থেকে ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকা বিক্রি করছি। ৬০ টাকার পেঁয়াজ পাইকারিতে কেনা পড়েছে ৫২ টাকা। এর সঙ্গে পরিবহন খরচসহ অন্যান্য খরচ রয়েছে।

মালিবাগ বাজারের গাজী স্টোরের বিক্রেতা মাসুদ রানাও বলেন, এক নম্বর (ভালো মানের বাছাই করা) দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। ঈদের আগে যা ৪৫ থেক ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে পাইকারিতেই এ পেঁয়াজ ৫৩ টাকা দরে কেনা পড়ছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার পর্যবেক্ষণেও পেঁয়াজের দাম বাড়ার চিত্র উঠে এসেছে। সংস্থাটির তথ্য বলছে, গতকাল রাজধানীর বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা পর্যন্ত। গত সপ্তাহে যা ৩৫ থেকে ৪৫ এবং গত মাসে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হয়। আর গত বছর এই সময়ে এ পেঁয়াজ বিক্রি হয় মাত্র ২৮ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। টিসিবির হিসাবে এক রাজধানীর পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে পেঁয়াজের সংকট নেই। রাজধানীতে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহও কমেনি। তার পরও দাম বাড়ছে। এর কারণ জানতে চাইলে বেশিরভাগ আড়তদার জানান, বিভিন্ন জেলার স্থানীয় মোকামগুলোতেই দাম হঠাৎ বেড়েছে। যার প্রভাব রাজধানীর আড়তগুলোতে পড়েছে।

রাজধানীর পেঁয়াজের বৃহত্তম পাইকারি বাজার শ্যামবাজারের মিতালী আড়তের পাইকারি বিক্রেতা কানাই সাহা জানান, গতকাল বুধবার এ বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৮ থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে। ঈদের সময়েও ৩০ থেকে ৩৪ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। রোজার মাঝামাঝি সময়েও ২৬ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। এর পর তা কেবল বাড়ছে। বিশেষ করে ঈদের পরপর অতিরিক্ত বেড়েছে।

তিনি বলেন, বছরের এমন সময়ে দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ার কথা নয়। সরবরাহে ঘাটতিও নেই। অথচ বিভিন্ন জেলার মোকামে দাম লাফিয়ে বাড়ছে। মূলত ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছেÑ এই অজুুহাতে দাম বাড়ানো হচ্ছে।

জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন মোকামে পেঁয়াজের সরবরাহ ও মজুদ স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও মোকাম মালিকরা পেঁয়াজের দাম অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছেন। রমজান মাসের মাঝামাঝি সময়ে দিনাজপুরে যে পেঁয়াজ প্রতি মণ ১ হাজার ২০০ টাকা ছিল, সেটা এখন ১ হাজার ৭০০ টাকা হয়েছে।

পেঁয়াজের বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গেল ১৫ মার্চ থেকে হিলি স্থলবন্দরসহ সব বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে এমন কারণ দেখিয়ে কিছু ব্যবসায়ী মজুদকৃত দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে বেশি মুনাফা করছে।

দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ায় আমদানিনির্ভরতা আগের চেয়ে অনেকখানি কমেছে। এর পরও হঠাৎ হঠাৎ বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে কিছু ব্যবসায়ী অল্প সময়ে অতিরিক্ত মুনাফা করার চেষ্টা করছে বলে মনে করেন ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি বলেন, কেবল পেঁঁয়াজ নয়, প্রায় সব ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রেই অনেক ব্যবসায়ীর অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তারা নৈতিক ব্যবসা করছেন না। নানা অজুুহাতে তারা বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে অল্প সময়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। সরবরাহে নজরদারি কড়াকড়ি করলে এমনটা হতে পারে না। পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে। বাজারেও পাওয়া যাচ্ছে। এখানে কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে বা কারসাজি করলে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *