থাইল্যান্ডের জঙ্গলে ৫ শতাধিক বাংলাদেশী

টপ নিউজ

image_29784কক্সবাজার: সাগরে ও দালালদের নির্যাতনে অনেকেই মৃত্যুবরণ করলেও উখিয়া-টেকনাফের উপকূল সাগর পথ দিয়ে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার থামছেনা। মুক্তিপন না দেওয়ায় ৫শতাধিক বাংলাদেশী-মালয়েশিয়াগামী যাত্রীকে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে দালালদের আস্তানায় বন্দি করে রেখেছে বলে চাঞ্চল্যকর খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই বন্দিশালা থেকে মুঠোফোনে এক যাত্রী এ খবর নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, উখিয়ার ছেপটখালী এলাকার মানবপাচারকারী ফয়েজ আহমদের হাত ধরে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের পশ্চিম দরগাহবিল গ্রামের কাশেম মিয়ার ছেলে জামাল মিয়া আড়াই লক্ষ টাকা চুক্তির মাধ্যমে টেকনাফের হামিদ দালালের মাধ্যমে সাগর পথে ২ মাস আগে মালয়েশিয়া ফাড়ি জমাতে গিয়ে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে দালালের বন্দিশালায় মুক্তিপনের টাকার অপেক্ষায় বন্দি করে রাখে। ওই বন্দিশালা থেকে জামাল মিয়া বন্ধু শফি আলম নামের এক যাত্রী পশ্চিম দরগাহবিল গ্রামের কাশেম মিয়াকে মুঠোফোনে জানিয়েছে আড়াই লক্ষ টাকা মুক্তিপনের টাকা না দিলে তার ছেলেকে সেদেশের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

থাইল্যান্ডের বন্দিশালায় আটক থাকা জামাল মিয়ার বাবা কাশেম আলী আরো জানান, তার ছেলের সাথে ওই সময় টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপ এলাকা দিয়ে সাড়ে ৬ শতাধিক দালালেরা মালয়েশিয়া লোকজন নিয়ে যায়। সে সাংবাদিকদের জানান, তার ছেলে বর্তমানে থাইল্যান্ডের বন্দিশালায় আটক রয়েছে। মুক্তিপনের টাকা দিলেই সে মুক্ত হয়ে মালয়েশিয়া পৌঁছতে পারবে। এ ভাবে কতিপয় পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী লোকজনের ছত্রছায়ায় দালালেরা লোকজন মালয়েশিয়া পাচার অব্যাহত রেখেছে। এতে অনেক মা-বাবার ও স্ত্রীর বুক খালী হয়েছে। অপহরণ করে লোকজন সাগর পথে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে থাইল্যান্ডের বন্দিশালায় আটকিয়ে দালালেরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কতিপয় পুলিশের সহযোগিতায় চলছে মানবপাচার। মাদকদব্য অধিদপ্তর কর্তৃক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তৈরীকৃত তালিকায় এ উপজেলার অর্ধশতাধিক পাচারকারীর নাম থাকলেও পুলিশের সাথে তাদের সখ্যতা থাকায় মানবপাচার থামছেনা। ওই সব পাচারকারীরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। মাঝে মধ্যে বিজিবি ও পুলিশের হাতে মানবপাচারকারীর সদস্যরা গ্রেপ্তার হলেও গডফাদারেরা রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

উপকূলীয় জালিয়াপালং ইউনিয়নের মানবপাচারের সী-পোর্ট খ্যাত বাদামতলী ঘাট দিয়ে প্রতিনিয়ত মানবপাচার অব্যাহত রয়েছে। পুলিশের হাতে মানবপাচারের গডফাদার হিসেবে খ্যাত নূরুল কবির ও তার স্ত্রী রেবি ম্যাডাম গ্রেপ্তার হলেও তার সহযোগীরা পাচার কাজ নির্বিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছে। জালিয়াপালং ইউনিয়নের লাল বেলাল, মোস্তাক আহমদ, ফয়েজ আহমদ, রোস্তম আলী, আবুল কালাম, আতা উল্লাহ, আবু ছিদ্দিক, মোজাম্মেল, জাহেদ মেম্বার, জাগির হোছন, আমান উল্লাহ, শামশুল আলম সোহাগ, পালংখালী ইউনিয়নের যুবদল নেতা ও ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন, যুবলীগ নেতা বখতিয়ার আহমদসহ অর্ধশতাধিক লোকজন মানবপাচার কাজে জড়িত থেকে নব্য কোটিপতি বনে গেলেও এসব ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাথা ব্যাথা নেই।

এছাড়াও মানবপাচার করে কোটিপতির তালিকায় উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের নলবনিয়া গ্রামের মৃত মনছুর আলীর ছেলে নূরুল হুদা। সে দীর্ঘদিন ধরে উপকূলীয় জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হিসেবে কর্মরত থাকায় মানবপাচার কাজে জড়িয়ে পড়েছে। এছাড়াও ইউপি সদস্য বেলাল মেম্বার সোনারপাড়ার মানবপাচারকারীর গডফাদার হিসেবে খ্যাত জেলে থাকা নূরুল কবির ও তার স্ত্রী রেবি ম্যাডামের সহযোগিতায় শত শত লোকজনকে মানবপাচারের এয়ারপোর্ট হিসেবে খ্যাত উপকূলীয় ঘাট বাদামতলী দিয়ে মালয়েশিয়ায় লোকজন পাচার করে দেয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সরকার মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হলেও পুলিশ প্রশাসন চিহ্নিত পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় দাপটের সাথে মানবপাচার অপপ্রতিরোদ্ধ হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারীর বাইরে থাকায় মানবপাচারকারীরা দিন দিন পাচার কাজ বেপরোয়া ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির জুড়ে যারা মানবপাচার পাচারে জড়িত থেকে দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ চালিয়ে গেলেও পুলিশ রহস্যজনক ভূমিকা পালন করায় তারা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ক্যাম্প সূত্রে জানা যায়, আবু ছিদ্দিক, হাফেজ নঈম, আবু তৈয়ব, হাফেজ জালাল, মৌলভী আবু ছালে, জাফর আলম, মোঃ এনাম নির্বিঘেœ ক্যাম্পের অভ্যন্তরে মানবপাচারকারীদের টানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ শহিদুল হক জানান, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে কতিপয় রোহিঙ্গা যুবকেরা মানবপাচার কাজে জড়িত থাকলেও তাদের চিহ্নিত করতে না পারায় গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। উখিয়া থানার ওসি মোঃ জহিরুল ইসলাম খান জানান, মানবপাচারকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে মানবপাচার কাজে পুলিশ জড়িত নয় বলে সে দাবী করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *