রং নাম্বারের প্রেমে সুখের ঘর

Slider সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

31034_32

সিলেট; রং নাম্বারে পরিচয়। এরপর প্রেম। চার মাস মন দেয়া-নেয়া। একজন হিন্দু, অপরজন মুসলিম। দুই ধর্মের দুই জন। তাতে কী?-প্রেম মানে না জাত, ধর্ম। প্রেমের ইতি ঘটাতে তারা ছেড়েছেন বাড়িও। পালিয়ে করেছেন বিয়ে। এরপর পুলিশ আটক করলেও তারা একে অপরকে ছাড়তে নারাজ। পুলিশের শত জেরা আর পরিবারের আকুতিতেও জামিলের হাত ছাড়েনি প্রিয়াংকা ওরফে ফাতেমা। স্বামী জামিলের হাত ধরে তার বাড়িতেই চলে গেছে সে। গত বৃহস্পতিবার রাতে জামিল ও ফাতেমাকে নিয়ে টানা ৪ ঘণ্টা নানান ঘটনা ঘটেছে থানা হাজতেই। দুইজনকে আলাদা করার ফন্দি-ফিকির করা হয়। পুলিশও দেয় ধমক। পরিবারের লোকজন করেন অনুনয়-বিনয়। সবকিছু উতরে কেউ কারো হাত ছাড়লেন না। আর এই প্রেমের ‘বাঁধন’ দেখে হতবাক হয়েছে সবাই। মেয়ের নাম প্রিয়াংকা রানী দাশ। বয়স ২১ বছর। সার্টিফিকেট অনুযায়ী মেয়েটি প্রাপ্ত বয়স্কা। বিয়ের পর ধর্মান্তরিত হয়েছে প্রিয়াংকা। তার পিতার নাম সদয় রাম দাশ। নতুন নাম ফাতেমা বেগম। তার বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণভাগ গ্রামে। ছয় ভাই- বোনের মধ্যে প্রিয়াংকা সবার ছোট। সে সিলেটের মদন মোহন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ৩য় বর্ষের ছাত্রী। ছেলের পুরো নাম জামিল আহমদ। তার পিতার নাম মৃত কুতুব উদ্দিন। বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের সিরাজপুর গ্রামে। ছয় ভাই বোনের মধ্যে জামিল চতুর্থ। পেশায় রং ও টাইলস মিস্ত্রি। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানা কম্পাউন্ডে জামিল আহমদ সাংবাদিকদের জানান, প্রায় ৪ মাস আগে রং নাম্বারে ফাতেমার সঙ্গে পরিচয় হয় জামিলের। রং নাম্বারে মোবাইলের একটি কলের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে পরিচয় ঘটে। এই পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে মোবাইল ফোনে কথা শুরু হয়। এর পর ধীরে ধীরে শুরু হয় প্রেম। তাদের মধ্যে হয় দেখাদেখিও। জকিগঞ্জ থেকে ছুটে এসে ফাতেমার সঙ্গে দেখা করতেন জামিল। চার মাসের প্রেমের পর তারা অবশেষে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ২৮শে আগস্ট প্রিয়াংকা ওরফে ফাতেমা কলেজে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। আর ফিরেনি। পরে পিতা সদয় দাশ মেয়েকে অনেক স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পাননি। পরে তিনি ৪ঠা সেপ্টেম্বর গোলাপগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এদিকে, ২৮শে আগস্ট বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রেমিক জামিলের সঙ্গে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় প্রিয়াংকা ওরফে ফাতেমা। জামিলের হাত ধরে সে চলে আসে নগরীর টিলাগড়ে। সেখানে জামিলের খালার বাসায় আশ্রয় নেয়। জামিলকে বিয়ে করতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। পরে ৩০শে আগস্ট সিলেটের আদালতে এফিডেভিটের মাধ্যমে ধর্মান্তরিত হয়। প্রিয়াংকা থেকে নাম ধারণ করে ফাতেমা। এদিকে, গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ জিডি দায়ের করার পর মোবাইল নাম্বার নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানের একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট নগরীর টিলাগড় থেকে জামিল ও ফাতেমাকে আটক করে গোলাপগঞ্জ থানায় নিয়ে যায়। খবর পেয়ে জামিল ও ফাতেমার পরিবারের লোকজন ছুটে আসে থানায়। এর মধ্যে ফাতেমার পরিবারের লোকজন মেয়েকে আলাদা নিয়ে বারবার বাড়ি যাওয়ার জন্য বুঝায়। কিন্তু তাদের কথায় কোনো কর্ণপাত করেনি। ফাতেমা বারবারই জামিলের সঙ্গে চলে যাওয়ার কথা বলে। কোনো ভাবেই সে পিতার সঙ্গে বাড়ি যাবে না। পুলিশ, সাংবাদিক সবার সামনে সে জামিলকে ছেড়ে দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এমনকি তাকে জোরপূর্বক পিতার সঙ্গে দিলে সে আত্মহত্যারও হুমকি দেয়। ওদিকে, জামিলও ফাতেমাকে ছাড়তে নারাজ। জানায়, তারা একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। তারা দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক। নিজেরা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে আদালতের মাধ্যমে বৈধভাবে বিয়ে করেছে। গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ দুইজনকে আলাদা আলাদাভাবে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করে। এবং দুইজন একে অপরকে ছাড়তে নারাজ। এদিকে, জামিল ও ফাতেমার প্রেম ও বিয়ের খবর পেয়ে এলাকার লোকজনও ছুটে যান থানায়। পরে রাত ১টার দিকে পুলিশ জামিলের সঙ্গেই ফাতেমাকে ছেড়ে দেয়। সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানার ওসি ফজলুল হক শিবলী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জামিল ও ফাতেমা দুইজনই প্রাপ্ত বয়স্ক। তারা বৈধভাবে আদালতে বিয়ে করেছে। এবং প্রিয়াংকা ওরফে ফাতেমাকে জোরপূর্বক নেয়া হয়নি। এ কারণে মেয়ের ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জামিল ও ফাতেমা জানায়, তারা বুঝে-শুনে মোহরানার মাধ্যমে বিয়ে করেছে। এখন তারা স্বামী-স্ত্রী। আলাদা হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না বলে জানায় তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *