জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে ফেসবুক

Slider তথ্যপ্রযুক্তি

294607_121

 

 

 

 

তরুণ প্রজন্মের কাছে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা কমছে। তাদের অনেকেই সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্টটির প্লাটফর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। কয়েক বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ফেসবুকে সক্রিয়তা অনেক কমে গেছে। কারণ বন্ধু-পরিবারের মধ্যে যোগাযোগের যে আকর্ষণ তা আর নেই। এখন ফেসবুক বিজ্ঞাপনের প্লাটফর্ম হয়ে উঠেছে। তরুণদের মধ্যে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা কমছে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে। ফেসবুকের বদলে তরুণরা এখন ঝুঁকছে স্ন্যাপচ্যাটের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। লিখেছেন আহমেদ ইফতেখার
সম্প্রতি বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইমার্কেটার জানিয়েছে, চলতি বছর যুক্তরাজ্যের ১২-১৭ বছর বয়সের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের ৭১ শতাংশ নিয়মিত ফেসবুক ব্যবহার করবে, যা গত বছরের পূর্বাভাসের চেয়ে ৮ শতাংশ কম। শিশুদের মধ্যে স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করে ইমার্কেটার জানিয়েছে, চলতি বছর যুক্তরাজ্যের সোস্যাল নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৪৩ শতাংশই স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহার করবে, যা তিন বছর আগের চেয়ে দ্বিগুণ। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ১২-১৭ বছর বয়সের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ ফেসবুক ব্যবহার করেছে, যা ২০১৩ সালের চেয়ে ৯০ শতাংশ কম। অন্য দিকে, চার বছর আগে ২৯ শতাংশ স্ন্যাপচ্যাট করেছে, যা গত বছর ৮৯ শতাংশে পৌঁছেছে।

ইমার্কেটারের বিশ্লেষক বিল ফিশার জানিয়েছেন, শিশু কিংবা তরুণদের ফেসবুক ব্যবহারে উৎসাহিত করতে মেসেঞ্জার অ্যাপের বেশ কিছু সংস্করণ চালু করে প্রতিষ্ঠানটি। তার পরেও শিশু কিংবা তরুণদের মধ্যে স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। চলতি বছর যুক্তরাজ্যে ফেসবুক ব্যবহারকারী ৩ কোটি ২৬ লাখে পৌঁছবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। স্ন্যাপচ্যাট, ইনস্টাগ্রাম কিংবা টুইটারের চেয়ে দেশটিতে বেশি গ্রাহক রয়েছে ফেসবুকের। তবে তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। স্ন্যাপচ্যাটের ব্যবহার সহজ করতে নতুন করে নকশা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর ফলে ফেসবুকের চেয়ে স্ন্যাপচ্যাট তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

‘সুরা’র নামে ডেটা হাতিয়ে নিচ্ছে
নিজেদের মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন এক তারবিহীন-নেটওয়ার্কিং অ্যাপ এনেছে ফেসবুক। কিন্তু নতুন অ্যাপটি যে তাদের মালিকানাধীন সে তথ্য শুরুতে জানায়নি বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক মাধ্যমটি। এ অ্যাপটি সোস্যাল জায়ান্টটির জন্য তথ্য সংগ্রহ করছে। ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন ব্যবহারকারীদের পরিচয় গোপন আর অন্যান্য নিরাপত্তা ফিচার সুরতি রাখে। ব্যবহারকারীদের আরো নিরাপদ উপায়ে অনলাইন ব্রাউজ করার সুযোগ করে দেয় এটি। ‘ওনাভো প্রটেক্ট’ নামের এই অ্যাপটিও ব্যবহারকারীদের ভিপিএন সেবা দিয়ে থাকে। তবে অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের ডেটা পর্যবেণ করে ও তা ফেসবুক আর অন্যদের সাথে শেয়ার করে। এই শেয়ার করা তথ্যের মধ্যে ব্যবহারকারীর ডিভাইসে ইনস্টল করা অ্যাপ, ওই অ্যাপগুলো কিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, ডিভাইস থেকে কোন কোন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করা হচ্ছে আর কী পরিমাণ ডেটা ব্যবহার করা হচ্ছে এ বিষয়গুলোও রয়েছে বলে অ্যাপটির প্রাইভেসি নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়।

এর মাধ্যমে কোনো ব্যবহারকারী ফেসবুকের কোনো সাইটে না থাকলেও, তিনি অনলাইনে কী করছেন তা জানতে এ ডেটা ব্যবহার করতে পারে ফেসবুক। সেইসাথে স্ন্যাপ আর টুইটারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলোর বানানো অ্যাপগুলো কিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে সে তথ্যও চলে যায় ফেসবুকের হাতে।

২০১৩ সালে মোবাইল ডেটা বিশ্লেষণা ও নিরাপত্তা সেবাদাতা ইসরাইলি প্রতিষ্ঠান ওনাভোকে কিনে নেয় ফেসবুক। মার্কিন সামাজিক মাধ্যমটি এখন তাদের মোবাইল অ্যাপের একটি ট্যাবে ‘প্রটেক্ট’ নামের একটি অপশন দিয়ে ওনাভোর সফটওয়্যারটি ডাউনলোডের প্রচারণা চালাচ্ছে।

প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফেসবুকের দৌড়ের শেষ আছে। কারণ, ইন্টারনেট সংযোগ বাড়ছে ধীরে। জাকারবার্গ তাই নির্ভার থাকতে পারছেন না। ফেসবুক ব্যবহারকারী বাড়ার হার বেশি আর ইন্টারনেট বাড়ার হার কম। নানা প্রচেষ্টায় ইন্টারনেট সংযোগ বাড়ানো ও ফেসবুক ব্যবহারকারী বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। অনেক সাশ্রয়ী দামের স্মার্টফোন ও দুর্বল ইন্টারনেটে চলার উপযোগী করে ফেসবুক সংস্করণ তৈরি করছেন। বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের সাথে চুক্তি করে ডেটা খরচ কমানোর চেষ্টা করছে। এ ছাড়া নিজস্ব অবকাঠামো তৈরিতে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ড্রোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সুবিধা দিতে অ্যাকুইলা নামের সৌরশক্তিচালিত ড্রোন নিয়ে পরীা চালিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ফেসবুকের সব প্রচেষ্টা অবশ্য সাফল্যের মুখ দেখেনি। উন্নয়নশীল দেশগুলোয় ফেসবুকের বিনামূল্যে ইন্টারনেট দেয়ার প্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়েছে। টেলিকম অপারেটররা তাদের বিনিয়োগ করা অবকাঠামোতে বিনা খরচার ব্যবসায় করার সুযোগ দিতে অনীহা দেখাচ্ছে। সরকারের প থেকেও ফেসবুকের ওপর চাপ বাড়ানো হচ্ছে। এতে ফেসবুকের ব্যবহারকারী বৃদ্ধির হার কিছুটা কমে আসছে। কয়েক বছর ধরে ফেসবুকের জন্য আরেকটি আশঙ্কাজনক বিষয় হচ্ছে ফেসবুকে পোস্ট কমে যাওয়া। ফেসবুকে লগইন করলেও পোস্টের সংখ্যা কমতে দেখা যাচ্ছে। অনেকেই অভিযোগ করছেন, ফেসবুক এখন বিভিন্ন ব্র্যান্ড আর ভাইরাল কনটেন্টে ভরে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *