হরিয়ানায় টিজারদের সায়েস্তা করলেন দুই বোন

সারাবিশ্ব

image_157635.4হরিয়ানার রোহতকে বাসভর্তি লোকের সামনেই দুই বোনের সঙ্গে ক্রমাগত অশালীন আচরণ করছিলেন তিন যুবক। কিন্তু কেউ দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন ব্যাপারটি। পরে তরুণীদের হাতেই জব্দ হয়ে শ্রীঘরে স্থান পেলেন অভিযুক্তরা। কী হয়েছিল সে দিন? দুই বোন আরতি আর পূজা বাসে করে রোহতক থেকে সোনি পাতে যাচ্ছিল। সে সময় বাসের মধ্যেই তিন যুবক তাঁদের উদ্দেশ্যে অশালীন মন্তব্য করতে থাকে। তাঁদের পাশে বসা এক গর্ভবতী মহিলার প্রতিও উড়ে আসছিল অশ্লীল মন্তব্য। তখন বাসে বসা অনেকে মুচকি হেঁসেছেন। অনেকে মুখ ঘুরিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে ছিলেন। পরে নিজেরাই এর প্রতিবাদ করে ওঠেন। ওই যুবকরাও চড়াও হয় তাঁদের উপর। এমনকী তাঁদের হাতের মোবাইল কেড়ে বাস থেকে ছুঁড়েও ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু সমস্ত ঘটনা দেখা সত্ত্বেও বাসে বসে থাকা কেউ একটা শব্দও উচ্চারণ করেননি।

গোটা ঘটনাটি মোবাইলে তুলে রাখেন পাশে বসা ওই গর্ভবতী মহিলা। খানিক বাদে নির্দিষ্ট স্টপেজে নেমে যান আরতি ও পূজা। সঙ্গে ছিলেন ওই মহিলাও। এর পরই স্থানীয় থানায় গিয়ে ওই যুবকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতারা। অভিযোগ পাওয়ার পর দিনই গ্রেপ্তার হয় অভিযুক্তরা। বাস থেকে নেমে মহিলা হেল্পলাইনে ফোন করে সাহায্যও চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু আরতির অভিযোগ, অপারেটর ঘটনাটি শুনে বলেন খানিক ক্ষণ বাদেই ফোন করা হবে আপনাদের। কিন্তু আজও সেই ফোন আসেনি। আরতি ও পূজার বাবা রাজের কুমার রাজ্য সরকারি কর্মচারি। তিনি বলেন, ‘আমি ওদের বাবা হিসাবে গর্ব বোধ করি। বাকি মেয়েদেরও এ ভাবেই অসভ্যদের সায়েস্তা করার পরামর্শ দিচ্ছি।’

বাস্তবের রাজ্যে ‘পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’ বাস্তব সব সময়ই কঠিন, কঠোর। বাস ভর্তি লোকের সামনে মহিলাদের সঙ্গে অসভ্য আচরণ দেখেও কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন না। এটাই বাস্তব। সেই ‘গণ্য-মান্য’ ভদ্রলোকরাই ধর্ষণের প্রতিবাদে মোমবাতি মিছিলে হেঁটে কুটির শিল্পের উন্নতি ঘটান। এটাও একটা বাস্তব। সমাজের উপর থেকে নীচ পর্যন্ত এই ভদ্রতা মোড়া ‘ভণ্ডামি’ এটাও বাস্তব। এগুলোর কোনওটাই এড়ানো যায় না। যেমন এড়ানো গেল না রোহতকে। বাসের মধ্যেই দুই বোনের সঙ্গে চূড়ান্ত অপমানজনক আচরণ দেখেও মুখ ফিরিয়ে থাকলেন বাসভর্তি পুরুষ। তবে কারও সাহায্য ছাড়াই সেই সাহসিনীরা চুড়ি খুলে অসভ্য আচরণ করা বীর পুঙ্গবদের হাতে পরিয়ে দিলেন। বারবার দেশজুড়ে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি সমাজের কাছে একটাই প্রশ্ন করছে, এই নিষ্ক্রিয়তা আর কত দিন? কবে মহিলারা এ দেশে সুরক্ষিত ভাবে ঘুড়ে বেড়াতে পারবেন? কিন্তু ‘প্রশ্নটা তো সহজ, আর উত্তরও তো জানা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *