রাজনৈতিক নেতারা প্রায়ই প্রতিপক্ষের বক্তব্যকে ভুল উল্লেখ করতে গিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ষড়যন্ত্র—এই শব্দগুলো ব্যবহার করেন। গতকাল বুধবার বিকেলে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব শব্দ তো ছিলই এর সঙ্গে বিশেষণযুক্ত চারটি শব্দ যোগ করা হয়। ‘পতিত গডফাদার’, ‘শীর্ষ ক্যাডার’, ‘মাদক সম্রাট’ ও ‘ডাইল’। এসব শব্দ যাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে, তাঁরাও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
ফেনী শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা, জনবিচ্ছিন্ন জয়নাল হাজারী ও সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরীর ইন্ধনে মাদক সম্রাট আরজু ও ডাইল সাখাওয়াত বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে।’
দুই পৃষ্ঠার বক্তব্যটি পড়ে শোনান ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান। তাঁর বক্তব্য শেষ হওয়ার পরপরই সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন শেষ করা হয়।
কক্সবাজারে যাওয়ার পথে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনাকে পরিকল্পিত উল্লেখ করে গত মঙ্গলবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল হক। হামলার ‘নেপথ্য নায়ক’ হিসেবে সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারীকে অভিযুক্ত করেন ফেনী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতি। ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেনসহ আরও কয়েকজন নেতা।
ঢাকার ওই সংবাদ সম্মেলনে আনা অভিযোগের বিরুদ্ধে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতেই গতকাল ফেনীতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ফেনী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজ আহম্মদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আকরামুজ্জমান, হাফেজ আহম্মদ, প্রিয় রঞ্জন দত্ত, আলী হায়দার, ফেনী সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেন, পরশুরাম উপজেলা সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন মজুমদার, ফুলগাজীর সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম মজুমদার, ছাগলনাইয়ার সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী, সোনাগাজীর সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল কবীর ও সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল উপস্থিত ছিলেন। সাংসদ নিজাম হাজারী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জেলা আওয়ামী লীগের এক নম্বর সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ও সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারীর নেতৃত্বে ফেনী এখন ‘শান্তি ও উন্নয়নের’ জনপদে পরিণত হয়েছে। ফেনীতে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় কারা জড়িত, তা জাতির কাছে পরিষ্কার। এতে বলা হয় সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে আজহারুলকে গত বছরই বহিষ্কার করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর বিষোদ্গার করা হয়। এ বিষয়ে ইকবাল সোবহান চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, এর আগেও নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য একতরফাভাবে তাঁকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছে ফেনী আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ। মানুষ তাদের কথা কখনো বিশ্বাস করেনি। ঢাকার ওই সংবাদ সম্মেলনের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্কই নেই। বিভিন্ন
সময়ে বিএপি-জামায়াতের আক্রোশের শিকার হয়েছেন
উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর
বিরুদ্ধে ইন্ধনের অভিযোগ আনা হাস্যকর। এটি রাজনৈতিক শিষ্টাচারবিবর্জিত আচরণ।