গাজীপুরে বিবেকের কাঠগড়ায় পুলিশ-সাংবাদিকের ভীড়! কি করবেন বঙ্গতাজ কন্যা!

Slider টপ নিউজ সম্পাদকীয়


সংবিধানমতে গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থস্তম্ব। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ন্যায় বিচার নিশ্চিতের প্রথম দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় বাহিনী। কোন কারণে পুলিশ নীরব ভুমিকায় চলে গেলে গণমাধ্যম পুলিশ ও জাতিকে সঠিক ভুকিমা পালনে সহযোগিতা করবে যেন, ন্যায় বিচার বাধাগ্রস্থ না হয়। আর এই অভিভাবকের ভুমিকা পালন করার জন্যই গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থস্তম্ব বলা হয়। গণমাধ্যমের পক্ষে কোন সময় অপরাধীরা যাবে না। এমনকি রাষ্ট্রও যদি নীরব থাকে ওই ক্ষেত্রে গণমাধ্যম সোচ্চার ভুমিকা পালন করবে। বিশেষ করে অপরাধী দেখে নয়, বিচার বিভাগের চোখের বাইরে থাকা অপরাধ আমলে আনতে কাজ করবে গণমাধ্যম। এই সব কথা কাগুজের ভুমিকা থেকে লেখা। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।

সাম্প্রতিক সময়ে গাজীপুর জেলায় বেশ কিছু অপরাধ নীরবে নিভৃতে চাপা পড়ে গেছে ও আছে। আশা করি আরো চাপা পড়বে। আজ থেকে ২০ বছর আগে যখন সংবাদ সংগ্রহ করতে যাখন মাঠে যেতাম, তখন স্থানীয় সাংবাদিকেরা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতেন। কিন্ত এখন উল্টো হয়ে যাচ্ছে। এখন কখনো কখনো স্থানীয় সাংবাদিকেরা সংবাদটি চেপে যাওয়ার ভুমিকা পালন করছেন। কেউ কেউ আবার ঠিকাদারীও নিচ্ছেন। কোন ঘটনা ঘটলে স্থানীয় কোন সাংবাদিক বা সাংবাদিক সিন্ডিকেট খবরটি চাপা দেয়ার কাজ করছেন। কোন অপরাধ ধামাচাপা দিয়ে সময় ক্ষেপন করাও যে আলামত নষ্টের আওতায় পড়ে, তা তারা মনেই রাখেন না। কোন অপরাধকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা ও সময় ক্ষেপন করে ধামাচাপা দেয়া একটি অপরাধ। যারা এই ধামাচাপা দিয়ে আলমত নষ্ট বা অপরাধ শেষে আবার অপরাধের বিস্তার ঘটাতে উৎসাহিত করবেন তাদেরকে ফৌজদারী আইনের ৩৪ ধারায় মুল মামলার সাথে কিংবা চার্জসিটে অতিরিক্ত আসামী হিসেবে যুক্ত করা উচিত। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন যদি আইনী ব্যবস্থা নিতে সময় ক্ষেপন করেন এবং গণমাধ্যম যদি রহস্যজনক কারণে নীরব থাকেন তবে ৩৪ ধরার প্রয়োগ বাধা গ্রস্থ হবে। কারণ যারা ৩৪ ধারা প্রয়োগ করবেন তারাই যদি ৩৪ ধারায় যুক্ত থাকেন তবে অনেক সময় ৩৪ ধারাই লাপাত্তা হয়ে যায়। বাস্তবতা সেটাই বলছে।

অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যমতে, গাজীপুরে যেখানে বনের জমি দখল হয়, সেখানে মিডিয়া গেলে স্থানীয় সাংবাদিকেরা ফোন করে ঠিকাদারীর সঙ্গে যুক্ত হতে বলেন। স্থানীয় বিট অফিস কোন সাংবাদিক বক্তব্য চাইলে ঠিকাদার সাংবাদিকদের কথা বলেন। ফরেষ্ট চেকপোষ্ট গুলি থেকে মাসোহারাও নিচ্ছেন দালাল সাংবাদিক বা সাংবাদিক সিন্ডিকেট। সম্প্রতি একটি ফরেষ্ট চেকপোষ্টে গিয়ে জানা যায়, একটি বড় মিডিয়ার সাংবাদিক বন দখল ও ফরেষ্ট চেকপোষ্ট দিয়ে অবৈধ মালামাল পাচারের খবর গোপন রাখতে ও গোপন রাখার জন্য সহকর্মীদের নিয়ন্ত্রনে রাখতে প্রতি মাসে ১৫ হাজার চাঁদা নেন। এই রকম মাসোহারা ফরেষ্ট ও পুলিশের প্রতিটি চেকপোষ্টেই আছে যা অদৃশ্য।

এ ছাড়া খুন ধর্ষন চুরি ডাকতির মত ঘটনা ঘটলেও ঠিকাদার সাংবাদিকদের অস্তিত্ব ভেসে উঠে। মানুষকে ভয় দেখিয়ে চাপ দিয়ে ও নিজ কক্ষে ডেকে চাপপ্রয়োগ করে টাকা আদায়ের সংস্কৃতি চালু থাকার কারণে গাজীপুরে সাংবাদিকদের অসংখ্য ব্যক্তিগত চেম্বার গড়ে উঠেছে। এই প্রক্রিয়ায় কিছু সংখ্যক ঠিকাদার সাংবাদিকের হাতে গাজীপুরবাসী জিম্মি। এতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে ন্যায় বিচার। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে দেশেরও।

অনুসন্ধান বলছে, ঠিকাদারীর সঙ্গে যুক্ত না হলে কোন সাংবাদিক বড় মিডিয়াও যেতে পারে না। যোগ্যতা ও মেধা থাকা সত্যেও তারা বড় কোন গণমাধ্যম পায় না। কারণ ঠিকাদারীকে অপছন্দ করেন এমন সাংবাদিক বড় মিডিয়ায় গেলে ঠিকাদাররা আটকানোর জন্য ঝাপিয়ে পড়ে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে বড় মিডিয়া হাউজগুলোকে বিভ্রান্ত করে। ফলে পেশাদার সাংবাদিকেরা বড় মিডিয়ায় যেতে পারছে না। এই কাজটি যারা করছেন তারা বড় একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট ভয়ঙ্কর অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন, যা তারা ভাবতেই পারছেন না। তথ্য বলছে, ঠিকাদারীর বিরুদ্ধে গেলেই অপপ্রচার মামলা হামলা শুরু হয়। ফলে অপরাধী ঠেকাও কর্মসূচি বেশী দূর এগোয় না।

আমার ২৪ বছরের সাংবাদিকতার ইতিহাস থেকে যদি বলি, যাদের হাতে কলমে শিক্ষা দিয়েছি তাদের অনেকেই এখন কোটি টাকার মালিক। আয়ের সঙ্গে সম্পদের কোন মিল নেই। গাজীপুরে এক সাথে ১০টি খুন করেও সাংবাদিকের চাকুরী যায় না। আবার সত্যের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় ঠিকাদারী সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্থ হলে প্রতিবাদী সাংবাদিককে বার বার জেলে যেতে হয়। একাধিক মামলার আসামী হতে হয়। ঠিকাদারী সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে গেলে যার নামে একটি জিডিও নাই তাকে ডজন মামলার আসামী মৌখিকভাবে বানিয়ে মিডিয়া হাউজগুলোতে অপপ্রচার করা হয়। এই পরিস্থিতি এখন গাজীপুরে। তা ছাড়া এই পর্যন্ত যতগুলো সাংবাদিক পেশাগত কারণে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে জেল খেটেছেন সেসব প্রত্যেকটি ঘটনার পিছনে সিন্ডিকেট বা দালাল সাংবাদিকদের হাত রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ায় একটি আলোচিত ঘটনায় জাতির বিবেক দাবীদার সাংবাদিকদের একটি বড় অংশ বিবেক হয়ে নিজেরােই বিবেকের কাঠগড়ায় দাড়িয়েছেন। এই আসামী নামীয় বিবেকবানদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্থানীয় পুলিশও বিবেকের কাঠগড়ায় উঠেছে। কারণ একজন গৃহকর্মীকে গর্ভবতি অবস্থায় বিয়ে করতে বাধ্য করা হল, তাকে গর্ভবতি অবস্থায় গোপন রাখা হল, এমনকি বাচ্চা হওয়ার পর তাকে উধাও করা হল। এই দীর্ঘ ১০ মাসেও পুলিশ খোঁজ পেল না ওই ঘটনা। কেউ ৯৯৯ এ ফোন পর্যন্তও করল না।

পুলিশ সন্দেহবশত কাউকে গ্রেফতার করে পরে মামলা দিয়ে চালান দেয়, এমন ঘটনা নিত্যদিনের। কোন পুরুষের স্বভাবগত অঙ্গভঙ্গিতে নারীর প্রতি আসক্তি প্রকাশ পেলে তাকে ধরে ভ্রাম্যমান আদালতেই তাৎক্ষনিক দন্ড দেয়া হয়, এমন ঘটনা অহরহ। ধর্ষন মামলা বা ধর্ষন চেষ্টার মামলা অধিকাংশই রেকর্ডের আগে আসামী হাজতে আনা হয়। পুলিশ বলে বিচার হবে কোর্টে। নির্দোষ হলে মুক্তি পাবে। কিন্তু কাপাসিয়ার ঘটনা পুরো উল্টো। ৯মাসেও পুলিশ অভিযোগ পেলো না। সাংবাদিকেরা জানতে পারল না। থানার সামনে অভিযুক্ত আসামীর অফিস হওয়ায় পুলিশ তার প্রতিবেশী বলেই কি এমন ব্যতিক্রম করল! অবশেষে ভিকটিমের বাবা আদালতে মামলা করলেন কিন্তু বিচারক তদন্ত দিল পিবিআইকে। এতের বুঝা যায়, কাপাসিয়ার ঘটনায় ৩৪ ধারায় কারা কারা যুক্ত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এ ছাড়া ভিকটিমের ভাড়া বাড়ির মালিকের ছেলের স্ত্রীর ভাষ্যমতে, ১৯টি মিডিয়া মেয়ের বক্তব্য নেয়ার পর তারা নিরাপত্তাহীন হয়ে মেয়েটিকে বের করে দিতে চেয়েছিলেন, এমনও কথাও বলেছেন তিনি। অথচ লোমহর্ষক এমন ঘটনার সংবাদও পেলো না জাতি।

আমরা লজ্জ্বিত। আমরা বিবেকের কাছে পরাজিত। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের জন্মভূমিতে কোন কিশোরী ধর্ষিত হবে, বাচ্চাও হবে আর বাচ্চা সহ অপহরণও হবে আর এই ঘটনা কেউ জানবে না, এটা দুঃখ জনক ও নিন্দনীয়। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ৭১ সনে হানাদার বাহিনী আমাদের যে সকল অবৈধ সন্তান দিয়ে গেছে, তাদের পিতার নামের জায়গায় বঙ্গবন্ধুর নাম লিখে দিতে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্য শেখ হাসিনা অসংখ্যবার তার বাবার এই উক্তি গণমাধ্যমে বলেছেন। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্টসহচর ও বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে এখন কাপাসিয়ার এমপি। স্বাধীন দেশে ৫১ বছর পর চলমান ঘটনায় কাপাসিয়ায় পিতৃপরিচয়হীন কন্যা সন্তানের বাবাকে খুঁজে দেয়া কার দায়িত্ব অথবা বাবার নামের জায়গায় কার নাম দেয়া উচিত, তা স্পষ্ট করতে কাপাসিয়ার এমপি ও বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের কন্য সিমিন হোসেন রিমিকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

রিপন আনসারী

সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী
তাং ২/৯/২২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *