বরগুনার পাথরঘাটায় তরুণীকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা ছাত্রলীগের (পরে বহিষ্কৃত) চার নেতার দুজনকে আরও তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। ওই ঘটনায় পাথরঘাটা ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।
পুলিশ বলেছে, পাথরঘাটা ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি রুহি আনান দানিয়াল ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনকে দুদিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল বুধবার বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তাঁদের আরও পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হলে বিচারক হাসিবুল হাসান তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত অপর দুই নেতা পাথরঘাটা ডিগ্রি কলেজ শাখার ২ নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক মাহিদুল ইসলাম ওরফে রায়হান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক মো. মাহামুদ কারাগারে আছেন।
তরুণী ধর্ষণ ও হত্যা মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা গতকাল বিকেলে বলেন, বরগুনা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হেফাজতে দানিয়াল ও সাদ্দামকে দুদিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু তাঁরা ওই ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেননি। তাই পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের আবার রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত
পাথরঘাটা ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হোসাইন স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ কথা জানানো হয়। একই সঙ্গে ওই চারজনের বিরুদ্ধে কেন আগেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিকেনোটিশ দেওয়া হয়েছে।
চিঠি ও নোটিশ পাওয়ার বিষয় নিশ্চিত করে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হোসাইন বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের (আজ) মধ্যে নোটিশের জবাব দেওয়ার কথা। কিন্তু উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাফিজুর রহমানের সঙ্গে কয়েক দিন ধরে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা বলেন, ওই চারজনকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাঁর ভাই পাথরঘাটা মৎস্য বন্দর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে সোহেল। গ্রেপ্তার চারজন মোস্তাফিজুরের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
নিহত তরুণীর পরিচয় শনাক্ত হয়নি
গত ১০ আগস্ট পাথরঘাটা ডিগ্রি কলেজের পেছনের খাসপুকুর থেকে ওই তরুণীর লাশ উদ্ধার হলেও গতকাল বিকেল পর্যন্ত তাঁর পরিচয় শনাক্ত হয়নি। জেলা পুলিশ সুপার বিজয় বসাক বিকেলে পবলেন, তরুণীর পরিচয় জানতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ চলছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরাও জিজ্ঞাসাবাদে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। সেসব তথ্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে ওই তরুণীর পরিচয় পাওয়া যাবে। তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, তাঁরা এটা নিশ্চিত হয়েছেন, ওই তরুণী উত্তরাঞ্চলের কোনো জেলার বাসিন্দা।
মানববন্ধন
পাথরঘাটায় গত ছয় বছরে অজ্ঞাতনামা ১১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও দোষীদের বিচারের দাবিতে গতকাল মানববন্ধন করেছে পাথরঘাটার বেশ কয়েকটি সংগঠন। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভিনের সভাপতিত্বে পাথরঘাটা শহরের রাসেল স্কয়ারে সকালে এ মানববন্ধন হয়।