মাতৃত্বকালীন ছুটি চাওয়ার জেরে জেসমিন সুলতানা নামের এক নারীকে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি বরিশালের গৌরনদী উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) দরিদ্র নারীদের জন্য পল্লী কর্মসংস্থান সহায়তা প্রকল্পের (ইরেসপো) মাঠ সংগঠক ছিলেন।
গত রোববার জানতে চাইলে জেসমিন সুলতানা বলেন, তিনি মাঠ সংগঠক পদে ২০১৩ সালের ৩ এপ্রিল যোগ দেন। ২০১৫ সালে একই উপজেলার খাঞ্জাপুর গ্রামের সবুজ হোসেনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বর্তমানে তিনি অন্তঃসত্ত্বা। চিকিৎসকদের দেওয়া সময়সীমা অনুযায়ী নভেম্বরে তাঁর সন্তান প্রসব করার কথা। শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে তিনি উপজেলা ভারপ্রাপ্ত পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মঈন উদ্দিনকে ২০ আগস্ট মাতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়ে মৌখিকভাবে অবহিত করেন। এতে মঈন ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে বলেন। তা না হলে তাঁকে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন। এই পরিস্থিতিতে চাকরিচ্যুত না করার জন্য তাঁকে অনুরোধ করেন জেসমিন। কিন্তু তাঁকে চাকরিচ্যুত করার সুপারিশ করে মঈন ২১ আগস্ট বরিশালে উপপরিচালক বরাবর চিঠি পাঠান। উপপরিচালক ওই চিঠি প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠান। ৯ অক্টোবর জেসমিন কর্মস্থলে গেলে তাঁকে চাকরিচ্যুতির চিঠি দেওয়া হয়। গৌরনদী উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবদুল বারেক বলেন, পিএলআর-১৯৫৯ অনুযায়ী, মাতৃত্বকালীন সুবিধাভোগী যখন ছুটির আবেদন করবেন, তখন থেকে ছয় মাস এই সুবিধা ভোগ করবেন। সন্তান প্রসবের আগেই সুবিধাভোগীকে ছুটি নিতে হবে। মাতৃত্বকালীন ছুটির এই বিধিবিধান সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সব নারী কর্মীর জন্য প্রযোজ্য।
প্রকল্প পরিচালক রাসেদুল আলম স্বাক্ষরিত জেসমিন সুলতানার চাকরিচ্যুতির আদেশে বলা হয়েছে, প্রকল্পের কাজে অদক্ষ, দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও গাফিলতির কারণে নিয়োগপত্রের ‘চ’ শর্ত মোতাবেক এক মাসের বেতন প্রদান সাপেক্ষে নিয়োগ থেকে অপসারণ করা হলো।
জানতে চাইলে জেসমিন বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। মূলত মাতৃত্বকালীন ছুটি চাওয়ার জেরেই তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, জেসমিনের মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদনের বিষয়টি স্থানীয় কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন প্রকল্প পরিচালকের কাছে গোপন রেখে কাজে অদক্ষ, দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও গাফিলতির বিষয় অবহিত করেন।
জানতে চাইলে মঈন উদ্দিন বলেন, ‘আসলে আমি বুঝে উঠতে পারিনি। জেসমিনকে চাকরিচ্যুত করা হোক এটা আমিও চাইনি। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমার কিছুই করার ছিল না।’
বিআরডিবির বরিশাল কার্যালয়ের উপপরিচালক আবদুল কাইয়ুম বলেন, স্থানীয় কর্মকর্তার সুপারিশে প্রকল্প পরিচালক জেসমিনকে চাকরিচ্যুত করেছেন। এটা অমানবিক ও অন্যায় সিদ্ধান্ত। যদি গাফিলতি করেও থাকেন, তাঁকে একবার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। এভাবে তাঁকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করা সমীচীন হয়নি।
ইরেসপোর প্রকল্প পরিচালক রাশেদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।