প্রশ্ন ফাঁসের ডিজিটাল কৌশল!

Slider জাতীয়

618ee0baed39aa7fe901e4eac2b80db6-59e454d6852c3

 

 

 

 

রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও কলেজে তখন জনতা ব্যাংকের সহকারী নির্বাহী কর্মকর্তা (অ্যাসিস্ট্যান্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার) পদে নিয়োগ পরীক্ষা চলছিল। কয়েকজন পরীক্ষার্থীর আচরণ সন্দেহজনক মনে হলো শিক্ষকদের। সন্দেহভাজন ওই প্রার্থীদের কেউ কেউ মৃদু স্বরে কথা বলছিলেন। পরীক্ষা হলে তাঁদের এই আচরণে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হলো শিক্ষকদের। তবে তাঁরা কাউকে হাতেনাতে ধরতে পারলেন না।

পরীক্ষার হল থেকে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে বাইরে চলে যাচ্ছে—এমন খবর ফেসবুকের মাধ্যমে পেলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির (বিএসসি) প্রধান মোশাররফ হোসেন খান। তিনি অন্য কর্মকর্তাদের খবর দিলেন। তাঁর দলে নিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষক মাসুদুর রহমানকে। তাঁরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে তেজগাঁও কলেজের ৯৩টি কক্ষে ঘুরতে থাকলেন। তখন পরীক্ষার ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট পার হয়ে গেছে। একপর্যায়ে কয়েকজনকে দেখে বুঝতে পারলেন, পরীক্ষার হলে কিছু একটা গরমিল হচ্ছে। এই অবস্থায় সন্দেহভাজনদের হাতেনাতে ধরার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। একজনের পাশে গিয়ে দেখলেন, আস্তে আস্তে কথা বলছেন। আর কানে গমের মতো সূক্ষ্ম কিছু একটা ঢোকানো। সেটির তাঁর পোশাকের ভেতর দিয়ে চলে গেছে। ওই পরীক্ষার্থীকে চ্যালেঞ্জ করলেন তাঁরা। দেখা গেল, হাতে পয়সার মতো গোল চাকতির আকারের একটি ডিভাইস। এর সঙ্গে তার যুক্ত। পোশাকের ভেতর দিয়ে চিকন তার চলে গেছে অন্তর্বাসের নিচে থাকা আরেকটি ডিভাইসে। হাতে থাকা চাকতিটি আসলে একটি মিনিস্ক্যানার। সেখান থেকে প্রশ্ন স্ক্যান করে নিচের ডিভাইসের মাধ্যমে বাইরে কারও কাছে চলে যায় প্রশ্নপত্র। বাইরে থেকে প্রশ্ন সমাধান করে আবার পরীক্ষার হলে থাকা ডিভাইস ব্যবহারকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রশ্ন সমাধান করা হয়। এভাবে ১৪ জনকে হাতেনাতে এসব ডিভাইসসহ ধরে ফেলেন কর্মকর্তারা। বরখাস্ত করা হয় ওই পরীক্ষার্থীদের।

17ed1e4cfef5b148ede84eb7e49ce043-59e454d685323

 

 

 

 

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে এই প্রতিবেদককে প্রশ্ন ফাঁসের ওই ডিভাইস দেখান বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির (বিএসসি) প্রধান মোশাররফ হোসেন খান। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, যে মেধা খরচ করে এসব ডিভাইস বানানো হয়েছে, তা যদি পড়াশোনার পেছনে দিতেন, তাহলে অনেকেই চাকরি পেয়ে যেতেন। তিনি বলেন, ‘আগের থেকে আমরা এখন অনেক সচেতন হয়ে গেছি। তাই এসব সূক্ষ্ম ডিভাইস ধরতে পারছি। ঢাকা বিশ্ববিদালয় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বসে আমরা শিগগিরই প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানোর বিষয়ে একমত হব। যাঁরা প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকবেন, তাঁদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। এমন জালিয়াতি যাঁরা করবেন, তাঁদের স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে; যেন তাঁরা আর কোনো ধরনের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *