বাগেরহাট জেলা জজ আদালতের আইনজীবী ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শেখ নুর মোহাম্মদের (৫৬) ওপর হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শনিবার সকালে হামলার পর গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর ডান পা ভেঙে গেছে। দুপুরে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল সকাল ৯টার দিকে বাগেরহাট শহরের সোনাতলা এলাকায় খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কে দুর্বৃত্তরা আওয়ামী লীগের নেতা নুর মোহাম্মদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় ওই আওয়ামী লীগ নেতা জেলা আইনজীবী সমিতির (বার) বর্তমান সভাপতিসহ কমিটিকে দায়ী করেছেন। তবে আইনজীবী সমিতি ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এদিকে ঘটনার পর জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং বারের নেতারা নুর মোহাম্মদকে হাসপাতালে দেখতে যান। এ সময় তাঁরা তাঁর চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করার দাবি জানান।
দুপুরে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে শেখ নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘সকালে সোনাতলার বাড়ি থেকে বেরিয়ে পাশের একটি রেস্তোরাঁয় নাশতা খেতে যাই। এ সময় পথে চার-পাঁচটি মোটরসাইকেলযোগে এসে আট-নয়জন যুবক আমার পথরোধ করেন। তাঁদের মধ্যে একটি মোটরসাইকেলে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কাদের ছিলেন। বাকিদের অধিকাংশকেই আমি চিনি না। তাঁরা হাতুড়ি দিয়ে আমাকে এলোপাতাড়ি পেটাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে আমি রাস্তার ওপর পড়ে গেলে তাঁরা আমার সারা শরীরে পিটিয়ে জখম করে ফেলে রেখে চলে যান। পরে স্থানীয় লোকজন আমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।’
শেখ নুর মোহাম্মদ অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত অনুদানের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির বহুতল ভবন নির্মাণকাজ চলছে। বর্তমান বারের কমিটি এই ভবন নির্মাণে অনিয়ম–দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ায় সম্প্রতি সমিতির দুই সদস্য (মোহাম্মদ আলী ও খান মোহাম্মদ আলী) আদালতে মামলা করেছেন। আমি ওই মামলাটি পরিচালনা করছি। বারের সভাপতি আজাদ ফিরোজ এই হামলা করিয়েছেন। বারের এই ভবনটি নিয়ম অনুযায়ী না করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদ করায় এবং মামলাটি পরিচালনা করায় তাঁরা আমার ওপর ক্ষুব্ধ। বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে আমাকে হুমকিও দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাতেও আমাকে খুঁজতে কিছু ছেলে আমার বাড়িতে গিয়েছিল। বারের সভাপতি আজাদ ফিরোজ তাঁর ভাড়াটে লোকজন দিয়ে পরিকল্পিতভাবে আমার ওপর হামলা চালিয়েছেন।’
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন অরুণ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, নুর মোহাম্মদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাঁর ডান পা ভেঙে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য দুপুরেই তাঁকে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে আজাদ ফিরোজ বলেন, ‘আমরা তাঁর ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। বারের ওই সদস্যের ওপর হামলার প্রতিবাদে আগামী সোমবার আইনজীবী সমিতির জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে।’
এ কে আজাদ ফিরোজ আরও বলেন, জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যদের সিদ্ধান্তে ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। নিয়ম মেনেই তা করা হচ্ছে। এই ঘটনায় সমিতির দুই সদস্য অনিয়মের অভিযোগ তুলে আদালতে মামলা করেছেন, যা বর্তমানে বিচারাধীন। তাঁর নিজ বাড়ি এলাকায় তাঁর ব্যক্তিগত বেশ কিছু মামলা ও বিরোধ রয়েছে। সেই শত্রুতার জের ধরে তাঁর ওপর এই হামলা হয়ে থাকতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন।