শুক্রবার রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে স্ত্রী সুষমা সিনহার সঙ্গে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে করে ঢাকা ছেড়েছেন তিনি। সরকার বলেছে তিনি অসুস্থ আর তিনি বলে গেলেন সুস্থ। এই বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার পর এখন প্রশ্ন এসেছে সুস্থতা-অসুস্থতা কি কোন সংকেত দিচ্ছে কিনা। তবে একটি সূত্র বলছে, তার স্ত্রী যাননি। তিনি বাসায় ফিরে এসেছেন।
জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের এসকিউ ৪৪৭ নম্বর ফ্লাইটে করে তিনি বিদেশে যান।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। কিন্তু ইদানীং একটা রায় নিয়ে রাজনৈতিক মহল, আইনজীবী, বিশেষভাবে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে সমালোচনা করেছেন এতে আমি সত্যিই বিব্রত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকারের একটি মহল রায়কে ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করে পরিবেশন করায় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি অভিমান করেছেন। যা অচিরেই দূরীভূত হবে বলে আমার বিশ্বাস। সেই সাথে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে আমি একটু শংকিতও বটে। কারণ গতকাল প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনরত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রবীণতম বিচারপতির উদ্ধৃতি দিয়ে আইনমন্ত্রী প্রকাশ করেছেন যে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি অচিরেই সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনে পরিবর্তন আনবেন। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কিংবা সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনো রেওয়াজ নেই। তিনি শুধুমাত্র রুটিনমাফিক দৈনন্দিন কাজ করবেন। এটিই হয়ে আসছে। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করলে এটি সহজেই অনুমেয় যে, সরকার উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করছে। এবং এর দ্বারা বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কের আরো অবনতি হবে। এটি রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। গতরাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে হেয়ার রোডের বাসা ছাড়ার সময় সাংবাদিকদের এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, আমি সাময়িকভাবে যাচ্ছি আবার ফিরে আসবো।
গত আড়াইমাস ধরেই আলোচনার শীর্ষে ছিলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। আগস্টের প্রথম সপ্তায় ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া রায় প্রকাশিত হয়। ওই রায়ে ‘আমিত্বের’ কড়া সমালোচনা করেন বিচারপতি সিনহা। এরপর থেকে সরকারি দলের নেতারা প্রধান বিচারপতির সমালোচনায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। সমালোচনায় যোগ দেন সব স্তরের নেতারা। ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। দাবি ওঠে তার পদত্যাগের। দেয়া হয় আলটিমেটাম। জাতীয় সংসদে আলোচনা হয়। সেখানে সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে সমালোচনায় বিদ্ধ করা হয়।
নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে অবকাশ শেষে সুপ্রিম কোর্ট খোলার আগের দিন গত ২রা অক্টোবর হঠাৎ করেই একমাসের ছুটিতে চলে যান প্রধান বিচারপতি। বাংলাদেশের ইতিহাসে যা অনেকটাই নজিরবিহীন। সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, অসুস্থতার কারণে তিনি ছুটি নিয়েছেন। অন্যদিকে, বিরোধী শিবিরের দাবি, চাপ প্রয়োগ করে তাকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। সে যাই হোক, আদালত পাড়ায় কান পাতলেই এ নিয়ে শোনা যায় নানা গুঞ্জন। গুজব, গুঞ্জন আর আলোচনার মধ্যেই গত মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টকে তার বিদেশ ভ্রমণের বিষয়টি চিঠি দিয়ে অবহিত করেন। ওই চিঠিতে ১৩ই অক্টোবর থেকে ১০ই নভেম্বর পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি বিদেশ থাকতে চান বলে উল্লেখ করা হয়। এর আগে তিনি সস্ত্রীক অস্ট্রেলিয়ায় যেতে পাঁচবছরের ভিসার জন্য আবেদন করেন। তাদের তিনবছরের ভিসা দেয়া হয়।
এখনো সাড়ে তিনমাস মেয়াদ রয়েছে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার। প্রেসিডেন্ট অবশ্য এরইমধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে নিয়োগ দিয়েছেন।
সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতি স্বীয় দায়িত্বে না ফেরা পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব পালন করে যাবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রধান বিচারপতি কি আর স্বীয় দায়িত্বে ফিরবেন। নানা আলোচনা। প্রধান বিচারপতির মেয়াদ শেষ হলে কে হতে পারেন পরবর্তী প্রধান বিচারপতি তা নিয়েও উচ্চ আদালতে এরইমধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে।
ড. এ কে এম রিপন আনসারী
এডিটর ইন চীফ
গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম