মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশের বিভিন্ন পাসপোর্ট অফিস থেকে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) সংগ্রহ করছে রোহিঙ্গারা। সেই পাসপোর্টে চলছে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা। এতে তাদের সহযোগিতা করছে দেশী দালাল চক্র। সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমন বেশ কয়েকটি চক্রের সদস্যকে গ্রেফতার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
গত সপ্তাহে মালিন্দ এয়ারে করে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান রামিদা বেগম নামে এক রোহিঙ্গা। তার সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের দুই ব্যক্তি। তাদের মধ্যে আমির হোসেন নামে এক ব্যক্তি নিজেকে রামিদার স্বামী পরিচয় দেন। আর কক্সবাজারের আল হাফিজ নামে আরেক যুবক নিজেকে রামিদার ভাই পরিচয় দেন। তিনজনের গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় এপিবিএন সদস্যরা তাদের তল্লাশি করেন। এ সময় রামিদার কাছ থেকে মিয়ানমারের আরেকটি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে রামিদা স্বীকার করেন যে, তিনি মিয়ানমারের নাগরিক। তার পাসপোর্টে যশোরের স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করা হলেও তা ছিল মিথ্যা। আর তার সঙ্গের দুজন ছিলেন দালাল। তারা মূলত রামিদাকে মালয়েশিয়া পৌঁছে দেয়ার কাজে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন।
এ বিষয়ে এপিবিএন ৮-এর সহকারী পুলিশ সুপার তারিক আহমেদ আল সাদিক জানান, মালিন্দ এয়ারের ওডি ১৬১ নম্বর ফ্লাইটে করে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য রামিদা নামে ওই রোহিঙ্গা নারীকে নিয়ে বিমানবন্দর এলাকায় প্রবেশ করেন আমির হোসেন ও আল হাফিজ। তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় এপিবিএনের অ্যান্টি- হিউম্যান ট্রাফিকিং টিম তাদের পাসপোর্ট জব্দ করে। পরে পাসপোর্টে দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই ঠিকানায় রামিদা নামের কেউ থাকেন না। পরে জিজ্ঞাসাবাদেও ওই নারী স্বীকার করেছেন যে, তার বাড়ি মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার মংডু থানার বড়গজবিল এলাকায়।
রামিদাকে গ্রেফতারের পরদিন সাতক্ষীরার কলারোয়া সীমান্ত অতিক্রমের সময় সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তারাও রোহিঙ্গা হিসেবে শনাক্ত হয়। বিজিবির ওই ব্যাটালিয়নের নায়েক সুবেদার ওমর ফারুক জানান, সাত রোহিঙ্গার মধ্যে তিনজন পুরুষ, দুজন নারী ও একটি শিশু ছিল। জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিকে তারা নিজেদের বাংলাদেশী পরিচয় দিলেও পরে রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকার করেন।
এছাড়া গত ২৯ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার সীমান্ত এলাকা থেকে নার্গিস বেগম এবং তার ছেলে রবিকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিকে বাংলাদেশী পরিচয় দিলেও পরবর্তীতে নিজেদের রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকার করে নেন দুজনই।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন শাখার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে অনেক সময় জাল ভিসাও লাগানো থাকে। রোহিঙ্গাদের ব্যবহূত জাল মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে সাধারণত সমতল এলাকার ঠিকানা থাকে। তাদের ভাষাও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার মতোই। দৈহিক আকার-আকৃতি ও ভাষাগত মিল থাকার কারণে বিদেশগামী রোহিঙ্গাদের শনাক্ত করতে হিমশিম খেতে হয়।
রোহিঙ্গাদের নির্ধারিত স্থানের বাইরে না যাওয়া, তাদের পরিবহনসেবা ও বাড়িভাড়া না দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। কিন্তু এ নির্দেশনা উপেক্ষা করে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা।
সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক বলেন, রোহিঙ্গাদের নির্ধারিত স্থানের বাইরে না যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এর পরও তারা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। এ পর্যন্ত অন্তত ৭০০ রোহিঙ্গাকে বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। পরবর্তীতে মানবিক দিক বিবেচনায় তাদের পুনরায় নির্ধারিত ক্যাম্পে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে তারা যদি পুনরায় একই ধরনের কাজ করে, সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।