গ্রাম বাংলা ডেস্ক
ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশে গুম খুনের সঙ্গে খোদ শেখ হাসিনা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছেন। এখন আর কারো জীবনই নিরাপদ নয়।
তিনি বলেন, র্যাবকে পরিণত করা হয়েছে আওয়ামী রক্ষী বাহিনীতে। তাই নিজে বাঁচাতে, পরিবারকে বাঁচাতে, দেশ ও জনগণকে বাঁচাতে কঠোর গণআন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে।
লন্ডনে ইলফোর্ডের প্রভা ব্যাংকুইটিং অডিটরিয়ামে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের ৩৩তম শাহাদত বার্ষিকী’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এ অভিযোগ করেন।
জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত ৮ দিনব্যাপী কর্মসূচির প্রথম দিনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
অনুষ্ঠানের পুরোটা সময়জুড়ে দর্শকসারিতে বসা ছিলেন তারেক রহমান। নেতাকর্মীদের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপি‘র সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস। সভা পরিচালনা করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদ। অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ডক্টর এম এ মালিক, বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুলসহ দলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা।
অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী দুঃশাসনে জনগণের অবস্থা এতটাই ভয়ংকর অবস্থায় পৌছেছে যে, জনগণ বলতে শুরু করেছে, ‘ওরা মানুষ নয়, আওয়ামী লীগ’।
তিনি বলেন, এমন কোনো অপকর্ম নেই যা আওয়ামী লীগ করতে পারে না।
উদাহরণ দিতে গিয়ে তারেক রহমান বলেন, যে আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবকে নেতা বানিয়েছে, ’৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সেই আওয়ামী লীগকে গলাটিপে হত্যা করতেও তিনি দ্বিধাবোধ করেননি।
নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে গুম করার পাঁচ মিনিটের মধ্যে জানলেও নিজদলের নেতাকর্মীদের বাঁচাতে কোনো পদক্ষেপ নেননি শেখ হাসিনা।
তিনটি ঘটনার উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, এর প্রতিটি ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে, দেশে চলমান গুম-খুনের সঙ্গে খোদ শেখ হাসিনা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষাভাবে জড়িয়ে পড়েছেন।
তারেক রহমান বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই হত্যাকারীরা ধরা পড়বে। এরপর হাজার ঘন্টা পার হলেও এই ঘটনার রহস্য বের হয়নি।
সেই সময় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, সাগর-রুনী হত্যা মামলার তদন্ত সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন শেখ হাসিনা। প্রশ্ন হলো, শেখ হাসিনা
নিজে একটি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের তত্ত্বাবধান করার পরও মামলার রহস্য বের না হওয়াই প্রমাণ করে যে, ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’।
তিনি বলেন, ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে দিনে দুপুরে অপহরণ করে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয় নদীতে। ওই এলাকার আওয়ামী লীগেরই একজন অনির্বাচিত এমপি জানিয়েছেন, পাঁচ মিনিটের মধ্যে তিনি শেখ হাসিনাকে অপহরনের ঘটনা জানিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে জানানোর পরও অপহৃতদের উদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়ায় এইসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার দায় শেখ হাসিনা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।
তারেক রহমান বলেন, ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যান একরামকে প্রকাশ্যে দিনে দুপুরে গুলী করে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
বিকেলেই শেখ হাসিনার অফিস থেকে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বিরোধী দলকে জড়িয়ে বিবৃতি দিয়ে আইন শৃংখলাবাহিনীকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করা হয়। অথচ ওই ঘটনায় যারাই গ্রেফতার হয়েছেন তারা সবাই আওয়ামী লীগেরই নেতাকর্মী। তাই শেখ হাসিনার এই অপতৎপরতা সম্পর্কে জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এবং সন্ত্রাস যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
আলোচনাসভায় কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম এ মালিক বলেন, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত ‘রংহেডেড পার্সন’ আখ্যা দিয়েছিলো। তিনি বলেন, মানসিক বিকারগ্রস্থ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মুহিদুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপি‘র সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিয়া মনিরুল আলম, ইউরোপভিত্তিক প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংগঠন সিটিজেন মুভমেন্ট এর আহবায়ক এম এ মালিকসহ অনেকে।