বছরদুয়েক আগে বনানী থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ফুটপাথে প্রায় ১৫০ মিটার দূরত্বে ডাস্টবিন বসিয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যেতে থাকে ডাস্টবিনের বিভিন্ন অংশ।
এখন আর ডাস্টবিন নেই আছে শুধু খুঁটি। অনেক জায়গায় আবার গোড়া থেকে কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে লোহার খুঁটিও।সরেজমিন রাজধানীর শাহবাগ, আজিমপুর, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, বনানী, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল এলাকা ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ জায়গার ডাস্টবিন খোয়া গেছে। যে জায়গাগুলোতে স্থায়ী ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়েছে সেগুলো ছাড়া অস্থায়ী ডাস্টবিনগুলোর এ অবস্থা। শাহবাগ মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগিয়ে গেলে দেখা যায় বসানো ডাস্টবিনের ঢাকনা আছে কিন্তু নিচের ঝুড়ি নেই। পাশের পান দোকানদার ফজল মিয়াকে জিজ্ঞাস করলে তিনি বলেন, অনেক দিন আগে সিটি করপোরেশনের লোকজন এসে এগুলো বসিয়েছিল। এর কিছুদিন পরেই একটা একটা করে উধাও হতে থাকে। এখন দু-একটা ছাড়া এ এলাকায় অন্য ডাস্টবিনগুলো চোখে পড়ে না। ডাস্টবিন না থাকায় ফলের খোসা, ওষুধ-স্যালাইনের প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখা যায় ফুটপাথের ওপর। শাহবাগ মোড়ে পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। লেবুর শরবত থেকে বাদাম ভাজা, ডাবের পানি, চা, চকলেট সবই আছে। এর মধ্যে কিছু দোকানি পাশে রাখা ঝুড়িতে ময়লা ফেলছেন আর অধিকাংশই রাস্তার ওপর ফেলছেন এসব ময়লা। রাস্তার ওপর কেন ময়লা ফেলছেন জিজ্ঞাস করলে শরবত বিক্রেতা মমিন আলী বলেন, এখন ফেলছি, যাওয়ার সময় তুলে নিয়ে যাব। কিন্তু পাশেই দেয়াল ঘেঁষে দেখা যায় ময়লার স্তূপ। জমে থাকা ময়লার স্তূপ দেখিয়ে জিজ্ঞাস করলে বলেন, এ ময়লা আমি রাখিনি। আমার আগে যে দোকান করত তার রাখা। এভাবেই একে অন্যের ঘাড়ে দোষ দিয়ে দিনের পর দিন উঁচু করছে ময়লার স্তূপ। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ময়লা পরিষ্কার করে যাওয়ার ১ ঘণ্টা পরেই যেমন ছিল তেমন হয়ে দাঁড়ায় এ এলাকার ফুটপাথ। দুই সিটি মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই রাজধানীর বর্জ্য অপসারণ করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানায়, প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজার টন বর্জ্য রাজধানীতে উৎপাদিত হয়। এ বর্জ্য সংগ্রহে এবং রাজধানীকে পরিষ্কার রাখতে ফুটপাথে ডাস্টবিন বসানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করে দুই সিটি করপোরেশন। এ লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ৫ হাজার ৭০০টি ডাস্টবিন বসানো হয়। যেসব স্থানে জনগণের চাপ বেশি সেখানে ১৫০ মিটার পর পর বিন স্থাপন করা হয়। আর যেখানে জনসমাগম কম সেখানে স্থাপন করা হয় ৩০০ মিটার পর পর। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ১ হাজার ডাস্টবিন বসানো হয়েছিল। এসব ডাস্টবিনের অর্ধেকের বেশি এখন নিখোঁজ। এর অধিকাংশই চুরি হয়ে গেছে। বাকিগুলো মেরামতের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, চুরি ঠেকাতে টেকসই ডাস্টবিন বসানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তারা। ঝুড়ির নকশা চূড়ান্ত করার আগে যাচাই-বাছাই চলছে। মানানসই, টেকসই এবং উন্নতমানের ডাস্টবিন বসানো হবে জনবহুল এলাকাগুলোতে। আর ডাস্টবিন বসাতে অতিরিক্ত জায়গার প্রয়োজন যেন না পড়ে সে বিষয়টিও নজরে রাখছে কর্তৃপক্ষ। বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম বলেন, হাতিরঝিলের চারপাশ পরিষ্কার রাখার জন্য দেওয়া ডাস্টবিন বার বার চুরি হয়ে যেত। এখন স্থায়ীভাবে ডাস্টবিন তৈরি করায় আর চুরি ও ময়লাও হয় না। খুব অল্প জায়গাতে সুন্দর ডাস্টবিন তৈরি করা হয়েছে। এ পরিকল্পনা কাজে লাগিয়ে রাজধানীর অন্য এলাকাগুলোকেও পরিষ্কার রাখা সম্ভব। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নতুন করে ডাস্টবিন বসানোর কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানান প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটির বসানো ডাস্টবিনের ৮০ শতাংশ ঠিকঠাক আছে। আর না থাকা ২০ শতাংশের মধ্যে অধিকাংশই চুরি হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৫ শতাংশের মতো নষ্ট হয়ে গেছে। যেগুলো ঠিক করা সম্ভব আমরা ঠিক করে দেব আর কিছু একেবারেই ঠিক করা যাবে না।