বাংলাদেশের সাফল্যের দুই কারিগর

Slider খেলা
বাংলাদেশের সাফল্যের দুই কারিগর

সমানতালে লড়াই করেও চট্টগ্রামে শেষ পর্যন্ত হার মানে বাংলাদেশ। হেরে যায় অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞতা, স্কিল ও পরিকল্পনার কাছে।

হারের পর গোটা দেশ সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠে টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তের। টিম ম্যানেজমেন্ট টেস্টের দুই ইনিংসে দুই পজিশনে ব্যাটিং করান মুমিনুল হককে। এই সিদ্ধান্তই মেনে নিতে পারেননি ক্রিকেটপ্রেমীরা। সমালোচনায় উত্তাল সবাই। গোটা দেশের অবস্থা যখন এমন, তখনই খড় চৈত্র্যে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে আসেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সের প্রশংসায় ভাসিয়ে দেন সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। নিজের ওয়ালে লিখেছেন, ‘খুব ভালো করেছে ছেলেরা। অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে লড়াই করা খুবই কঠিন। উইকেটের জন্য লিয়ন অন্যরকম বোলার নন। সে স্কিল ক্রিকেটার। আমি মনে করি সে ক্রিকেটারদের খেলতে মানসিক দ্বিধায় ফেলে দেন। এজন্যই ক্রিকেটাররা শটস খেলতে যেয়ে বিপদে পড়েন। সব মিলিয়ে আমি বলব সিরিজটি ছিল অসাধারণ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ের জন্য অভিনন্দন। এটা ধরে  রাখো এবং তোমাদের জন্য আমি গর্ববোধ করি। ’ বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান সাফল্যের অন্যতম কারিগর মাশরাফি যখন দলকে অসাধারণ ক্রিকেট খেলার জন্য অভিনন্দন জানান, তখন বুঝতেই হবে মানে ও গুণে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ।এমসিসির বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ১৯৭৬ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখে বাংলাদেশ। ১৯৮৬ সালে প্রথম ওয়ানডে খেলে। ২০০০ সালে টেস্ট অভিষেক। ৩১ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশের ক্রিকেটে ভাগ করা যায় বেশ কয়েক ধাপে। প্রথম ধাপে শুধুই ব্যর্থতা আর ব্যর্থতা। দ্বিতীয় ধাপে উন্নয়নের উত্তোরণের পথে হাঁটি হাঁটি পথে হাঁটা। এখন শুধুই সাফল্য। টাইগারদের এই সাফল্যের রূপকার দুই ক্রিকেটার-মাশরাফি ও মুশফিকুর রহিম। তার মানে এই নয়, টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে যে ধারাবাহিক জয় পাচ্ছে বাংলাদেশ, তাতে অবদান নেই তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজদের। গোটা দলেরই রয়েছে। কিন্তু নেতৃত্ব দিয়ে দলকে এক সুতোয় বেঁধে সাফল্য এনে দেওয়ার কারিগর দুজনেই। মুশফিক টেস্টে এবং ওয়ানডেতে মাশরাফি।

১৭ বছরে বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছে ১০২টি। জয় সাকল্যে ১০টি। জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়গুলো পেয়েছে টাইগাররা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০০৪ সালে প্রথম জয়ের নেতৃত্বে ছিলেন কাজী হাবিবুল বাশার। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দেশের বাইরে হোয়াইটওয়াশ করার নায়ক ছিলেন সাকিব। ২০১০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের সবগুলো টেস্ট জয়ের অধিনায়ক মুশফিক। তারই নেতৃত্বে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ, ভারত, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ ড্র করে। ড্র করে শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও। তবে এই তিনটি সিরিজের মাহাত্ম্যই আলাদা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট হারের পর মেহেদী মিরাজের স্পিন কুহকে জয় তুলে নেয় মিরপুরে। এরপর নিজেদের ১০০ নম্বর টেস্টে কলম্বোয় স্বপ্নের জয় তুলে নিজের নাম বাংলাদেশের ইতিহাসে সোনালি অক্ষরে লিখে নেন। সদ্য সমাপ্ত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন জাগিয়ে শেষ পর্যন্ত ড্র করে। টেস্ট ক্রিকেটের এখন সাফল্যের নায়ক, মহানায়কদের নেতা কিন্তু একজনই, মুশফিকুর রহিম।

টেস্ট ক্রিকেটে তেমন না হলেও ওয়ানডেতে বাংলাদেশ এখন পরাশক্তি। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালই তার প্রমাণ। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তৃতীয়বার ওয়ানডে অধিনায়ক হওয়ার তরতরিয়ে ওপরে উঠতে থাকে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে প্রথমবারেরর মতো। হারায় ইংল্যান্ডকে। এরপর ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জিতে তাক লাগিয়ে দেয় ক্রিকেট বিশ্বকে। র‌্যাঙ্কিংয়ে ৭ নম্বর হিসেবে ২০০৬ সালের পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে নামে। অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে পেছনে ফেলে সেমিফাইনাল খেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের চূড়ান্ত পর্বেও খেলবে বাংলাদেশ। এসবই হয়েছে মাশরাফির সুচতুর অধিনায়কত্বের কৌশলে।

বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন আর আগের অবস্থানে নেই। ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। ক্রিকেটে এখন পরাশক্তি হিসেবে উচ্চারিত হচ্ছে। এসব সাফল্যের নেপথ্যের কারিগর মাশরাফি ও মুশফিক। তাদের নেতৃত্বগুণে এখন বাংলাদেশ আনন্দের হাসি হাসছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *