মার্কিন মেরিন বাহিনীর একটি পরিবহন বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১৬ সৈন্য নিহত হয়েছেন। দূরপাল্লার কেসি-১৩০টি বিমানটি মিসিসিপি রাজ্যে সোমবার বিকালে বিধ্বস্ত হয়। খবর নিউইয়র্ক টাইমস।
মেরিন বাহিনীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়, নর্থ ক্যারোলাইনার চেরি পয়েন্ট এয়ার স্টেশন থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর ৯০০ মাইল দূরে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার কারণ এখনো জানা যায়নি।
মিসিসিপির লেফ্লোর এলাকায় একটি সয়াবিন ক্ষেতে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। গতকাল সকালে ঘটনাস্থলে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এফবিআইসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা তখন দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
দুর্ঘটনাকবলিত বিমানটি কেসি-১৩০জে টাইপের ছিল বলে জানা গেছে। ২০০৪ সালে প্রথম প্রবর্তিত জে-টাইপ বিমানগুলো ৬০ হাজার পাউন্ড জ্বালানি ধারণে সক্ষম বলে লকহিড করপোরেশন জানিয়েছে। কেবল ইরাকে এ বিমানের ঝুলিতে ২০ হাজার ফ্লাইট-ঘণ্টার বেশি রেকর্ড রয়েছে বলে কোম্পানিটি জানায়। মিসিসিপিতে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি বিস্ফোরক বহন করছিল বলে মিসিসিপি স্টেট ট্রুপারের এক সদস্য এনবিসি নিউজের সহযোগী সংস্থা ডব্লিউএলবিটিকে জানিয়েছেন। নর্থ ক্যারোলাইনা থেকে বিমানটি কোন গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল, তা জানা যায়নি।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিমানের আরোহী ১৬ মেরিন সদস্যের সবাই নিহত হয়েছেন। মেরিন কোরের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট ক্রিস্টিন রাস্কিয়ট এ ব্যাপারে আপাতত আর কোনো তথ্য জানানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন।
স্থানীয় দৈনিক গ্রিনউড কমনওয়েলথ জানিয়েছে, যেখানে বিধ্বস্ত হয়েছে তার চারপাশে পাঁচ মাইল দূর পর্যন্ত বিমানটির ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে রয়েছে। গ্রিনউড দমকল বিভাগের কর্মকর্তারা সোমবার বিকালে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান। বিধ্বস্ত বিমানের আগুন নেভাতে চার হাজার গ্যালন ফোম ব্যয় হয় বলে তারা জানান।
গ্রিনউড ফায়ার ডিপার্টমেন্টের প্রধান মার্কাস ব্যাঙ্কস বলেছেন, প্রচণ্ড মাত্রার কয়েকটি বিস্ফোরণের কারণে দমকল কর্মীদের কয়েক দফা ঘটনাস্থল থেকে পিছু হটতে হয়েছে। বিমানে বিস্ফোরক বোঝাই ছিল বলে তারা ধারণা করছেন।
গ্রিনউড কমনওয়েলথের খবর অনুযায়ী, নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারের সঙ্গে সর্বশেষ যোগাযোগের সময় বিমানটি ভূমি থেকে ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়ছিল। ভূপতিত হওয়ার আগে এটি আকাশেই বিস্ফোরিত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মিসিসিপিতে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রাণহানিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ঘটনাটিকে ‘হূদয়বিদারক’ অভিহিত করে এক টুইটার বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘মেলানিয়া ও আমি সবার প্রতি গভীরতম সমবেদনা জানাচ্ছি।’
স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকে মার্কিন সামরিক বাহিনী কেসি-১৩০-এর মতো বিমান ব্যবহার করছে। লকহিড মার্টিন করপোরেশনের নির্মিত সি-১৩০ হারকিউলিস বিমানের নতুনতন সংস্করণ কেসি-১৩০। চার ইঞ্জিনবিশিষ্ট এ বিমান আকাশে রিফুয়েলিংয়ের পাশাপাশি অস্ত্র-গোলাবারুদ পরিবহনেও ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়। ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে শুরু করে উপসাগরীয় যুদ্ধেও যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ বিমান বহুলভাবে ব্যবহার করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের চলমান সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধেও এ বিমানের বহুল ব্যবহার হচ্ছে।
২০১০ সাল থেকে মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তানে কেসি-১৩০ বিমানের যুদ্ধকালীন ব্যবহার করছে। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, নজরদারি, গুপ্তরচরবৃত্তির প্রয়োজনেও বিমানটির ব্যবহার হচ্ছে। হারভেস্ট হক নামে পরিচিত কেসি-১৩০ লেজার নিয়ন্ত্রিত হেলফায়ার ও গ্রিফিন ক্ষেপণাস্ত্র উেক্ষপণ করতেও সক্ষম।
এর আগে ২০০২ সালে পাকিস্তানে মেরিন বাহিনীর একটি কেসি-১৩০ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে সাতজন নিহত হয়েছিল।