তৃতীয় দফায় মেয়রের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার তিন দিন পর সোমবার ফের গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রের চেয়ারে বসেছেন নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান। তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দুদকের একটি মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় তাকে মন্ত্রণালয়ের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে আদালত। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি গতকাল দুপুরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নগর ভবন কার্যালয়ে গিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, আইনি লড়াইয়ে বিজয়ী হয়ে ফের মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে এসেছেন। যেহেতু সিটি নির্বাচনের এক বছরেরও কম সময় রয়েছে সেহেতু রাস্তাঘাট, পানি নিষ্কাশনসহ অতি জরুরি কাজগুলো দ্রুত সম্পাদন করা হবে। এর আগে মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান নগর ভবনে আসবেন এমন খবরে সকাল থেকেই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী এবং বিএনপির কাউন্সিলররা নগর ভবনের সামনে এসে উপস্থিত হন। দুপুর ১টার দিকে অধ্যাপক মান্নান নগর ভবনের প্রধান ফটকের সামনে এসে গাড়ি থেকে নামেন। এ সময় দলীয় নেতা-কর্মী, কাউন্সিলর ও সিটি কর্মচারীরা তাকে ফুল ছিটিয়ে স্বাগত জানান। পরে মেয়র নগর ভবনে নিজ দফতরে গিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসেন এবং কিছু সময় কাটান। উল্লেখ্য, গাজীপুর সিটি মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান ২০১৩ সালে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর গত চার বছরে তিনবার সাময়িক বরখাস্ত হন এবং প্রায় ২২ মাস কারাভোগ করেছেন। তিনি মেয়রের দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ১৮ মাস ১৯ দিন। নাশকতাসহ একাধিক অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা রয়েছে। নাশকতার এক মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র গ্রহণের পর ২০১৫ সালের ১৯ আগস্ট অধ্যাপক মান্নানকে প্রথমবারের মতো সাময়িক বরখাস্ত করেছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের ২৮ মাস পর মেয়র পদ ফিরে পান তিনি। কিন্তু এর পরপরই আরও একটি মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হলে ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ওই আদেশের বিরুদ্ধেও আইনি লড়াই করেন মান্নান। ১৮ জুন পুনরায় পদ ফিরে পান তিনি। কিন্তু এর কয়েক দিনের মধ্যে দুর্নীতির একটি মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার ১৯ দিনের মাথায় অর্থাৎ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের চতুর্থ বছর পূর্তির দিন গত ৬ জুলাই অধ্যাপক এম এ মান্নানকে মেয়রের পদ থেকে ফের সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট করেন তিনি। শুনানি শেষে ৯ জুলাই (রবিবার) হাই কোর্ট এ বরখাস্ত আদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিতের করে আদেশ দেয়। একই সঙ্গে তাকে বরখাস্ত করা কেন বেআইনি হবে না— তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে। তৃতীয় দফায় সাময়িক বহিষ্কারের তিন দিন পর গতকাল দুপুরে অধ্যাপক এম এ মান্নান ফের মেয়রের চেয়ারে বসলেন। প্রসঙ্গত, যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলা মামলায় ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মেয়র এম এ মান্নানকে ঢাকার বারিধারার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে ৩০টি মামলা দায়ের করা হলেও সবকটিতে তিনি জামিন লাভ করেন। নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানের অবর্তমানে ২০১৫ সালের ৮ মার্চ থেকে প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।