তিন মহাসড়কে এই যানজটের কারণে আটকা পড়া যানবাহনের যাত্রী ও চালকদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। কিছুদিন ধরেই এ তিন মহাসড়কে যানজট হচ্ছে। আজ বুধবার থেকে সড়কপথে ঈদযাত্রা শুরু হচ্ছে। মহাসড়কে যানজট হলে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের ভোগান্তির পাশাপাশি বাসের যাত্রার সময়সূচিতে বিপর্যয় হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবহন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলেছেন, সময়সূচির বিপর্যয়ও যাত্রীদের দুর্ভোগে ফেলবে। তাই ঈদে ঘরমুখী মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক
পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুরের কুর্ণী থেকে করটিয়া পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশে তীব্র যানজট দেখা দেয়। গতকাল মহাসড়কের পাকুল্যা ও আছিমতলায় পৃথক দুটি দুর্ঘটনার কারণে এই যানজট হয়। এই মহাসড়কে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই যানজট নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, দুই লেনের এই সড়কে দুর্ঘটনাকবলিত যান সরানোর আগ পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকে। যানবাহনের ব্যাপক চাপ থাকায় অল্প সময়েই যানজট দীর্ঘ আকার নেয়।
এর আগে মূলত কর্মদিবসের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ও সাপ্তাহিক ছুটির প্রথম দিন শুক্রবারে এই মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেশি থাকায় জট হয়।
গতকাল ভোর চারটার দিকে পাকুল্যায় টাঙ্গাইলগামী একটি ট্রাককে পেছন থেকে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই বাসের সুপারভাইজার নিহত ও সাতজন আহত হন। এরপর মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ প্রায় এক ঘণ্টা পর দুর্ঘটনাকবলিত বাস ও ট্রাক রাস্তা থেকে সরিয়ে নিলে আবার যান চলাচল শুরু হয়।
সকাল নয়টার দিকে আছিমতলায় একটি পিকআপ দুর্ঘটনায় পড়লে যানজটের শুরু হয়। বেলা ১১টার দিকে মহাসড়কের ওই অংশে টাঙ্গাইল অভিমুখী যানবাহন থেমে থাকতে দেখা যায়। তবে ঢাকাগামী যানবাহন চলছিল। মহাসড়কের ওই অংশে বেলা দেড়টার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
মির্জাপুরের ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট প্রণব কুমার সাহা বলেন, যানজট নিরসনে পুলিশ নিরলস পরিশ্রম করছে।
এদিকে বেলা একটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত মহাসড়কের মির্জাপুরের জামুর্কী থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ৪৪ কিলোমিটার সরেজমিনে গিয়ে কোনো যানজট দেখা যায়নি। তবে যানবাহনের চাপ ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মাহবুব আলম বলেন, যানজট এড়াতে গোড়াই থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত এক হাজার পুলিশ সদস্য মহাসড়কে নিয়োজিত থাকবেন। প্রতি কিলোমিটারে মোটরসাইকেল নিয়ে পুলিশি টহল থাকবে। বিকল হয়ে যাওয়া বা দুর্ঘটনাকবলিত যান দ্রুত সরানোর জন্য একাধিক স্থানে রেকার প্রস্তুত রাখা হবে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ এবং মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজের ধীরগতির কারণে এবারও ঈদযাত্রায় দুর্ভোগের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকাল এ মহাসড়কের গাজীপুরের কোনাবাড়ী থেকে কালিয়াকৈর উপজেলার বোর্ডঘর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার অংশে সাতটি স্থানে অনিয়ন্ত্রিত যান চলাচল, বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ ও চার লেনের কাজের কারণে যানজট হয়। ঈদযাত্রার বাড়তি যানবাহনের চাপ শুরু হলে যানজট আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও শ্রমিকেরা।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের টঙ্গী থেকে ভোগড়া বাইপাস মোড় পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশে গতকাল ভোর থেকে থেমে থেমে যানজট হয়। তবে দুপুরের পর থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে থাকে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
এদিকে দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশ সূত্র বলেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজা থেকে রাজারহাট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার অংশে তীব্র যানজট হয়। গত সোমবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এ জট ছিল। এরপর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। গত সোমবারও এখানে এক কিলোমিটার অংশে যানজট হয়।
যানচালকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাষ্য, মহাসড়ক চার লেনের হলেও সেতু দুই লেনের। ফলে সেতুর কাছে যানবাহনের গতি ধীর হয়ে যায়। সেতুর ওজন স্টেশনে ও টোল আদায়ে ধীরগতি, কিছু চালকের উল্টোপথে চলাসহ কিছু কারণে এই জট হচ্ছে। এসব সমস্যার সমাধান না হলে যানজট থেকে নিস্তার মিলবে না।
দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজা অনলাইন ওয়েবভিত্তিক স্কেলের সমস্যার সমাধান না হলে এখানে যানজট কমবে না।
পুলিশকে সহায়তা দিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি কাদেরের আহ্বান
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জনদুর্ভোগ লাঘব ও যানজট নিরসনে পুলিশকে সহায়তা দিতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালনের জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি গতকাল সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের তারগাছ এলাকায় মহাসড়কের যানজট পরিস্থিতি ও সংস্কারকাজ পরিদর্শনকালে এই আহ্বান জানান।
মন্ত্রী বলেন, গার্মেন্টস মালিকেরা যেন শ্রমিকদের ছুটি এক সময় না দিয়ে ভাগ ভাগ করে দেন। তার কারণ হচ্ছে, পোশাকশ্রমিকেরা একসঙ্গে বাড়ি ফিরতে শুরু করলে রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।