গবাদি পশুর অাকস্মিক মৃত্যুর কারন

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি
19022229_1206984432746428_1624621915_n
প্রাণকৃষ্ণ বিশ্বাস, বরিশাল বিভাগীয় ব্যুরো চীফ:  গবাদি পশুর অাকস্মিক মৃত্যুর একটি কারন সবুজ ঘাস বিষক্রিয়া ( নাইট্রেট পয়জনিং) ============================= (প্রসঙ্গঃ সম্প্রতি চরফ্যাসন উপজেলার মুজিবনগর ইউনিয়নে কয়েকটি গরু মহিষের অকস্মিক মৃত্যু) হেলেঞ্চা ঘাস গবাদি পশুর একটি অতি প্রিয় খাদ্য।
প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এ ঘাসটিই চরাঞ্চল তথা দক্ষিনাঞ্চলের গরু, মহিষের প্রধান খাদ্য। অথচ এই সময়ে কিছুদিনের জন্য এই ঘাস খেয়েই অনেক গরু হটাৎ মারা যাচ্ছে। কারন হেলেঞ্চা জাতীয় ঘাস মাটি থেকে অন্যান্য ঘাসের চেয়ে বেশী পরিমানে নাইট্রোজেন গ্রহন করে যাহা পরিবর্তিত হয়ে নাইট্রে বিষ হিসেবে পশুর রক্তে মিশে বিষক্রিয়া ঘটায় । বিশেষ করে জমিতে মাত্রারিক্ত ইউরিয়া সার ব্যাবহার করা জমি যেখানে রবিশস্য যথা- বাদাম, মরিচ, তরমুজ, ইত্যাদির বানিজ্যিক আবাদ করা হয় সে সকল জমির ফসল তোলার পর যে বছর অতিরিক্ত খড়া ( drought ) পরবর্তী হটাৎ ২/১ দিন বৃষ্টি পাত হয় সেখানকার প্রাকৃতিক ঘাস বিশেষ করে হেলেঞ্চা জাতীয় ‘ নাইট্রোজেন লাভার ‘ ঘাস দ্রুত বেড়ে ওঠে। ঠিক ঐ সময়টাতে ঐ সকল জমি কিছুদিন অনাবাদী পড়ে থাকে। স্বাভাবিক ভাবে এই সময়ে উক্ত জমিতে শত শত গবাদিপশু দিনভর মুক্তভাবে চড়ে ঘাস খায়। তখন কিছু গরু যারা বেশী বেড়ে ওঠা হেলেঞ্চা একবারে বেশী খেয়ে ফেলে সেগুলিই এই নাইট্রেট বিষক্রিয়ার কারনে হটাৎ মৃত্যুবরন করে। সাধারন মানুষ, হাতুরে ডাক্তাররা এগুলিকে তড়কা ( এনথ্রাক্স) বলে প্রচার করে যার জন্য জনমনে এক ধরনের আতংক সৃষ্টি হয়।
ফার্মাকোলজি/ মোড অফ এ্যকশন- =========================== জমির অব্যবহৃত দানাকারে জমে থাকা নাইট্রোজেনাস সার+বৃষ্টির পানি ( সেখানেও কিছু নাইট্রোজেন নাইট্রাইট ফর্মে থাকে)== এগুলো শোষন করে হেলেঞ্চাসহ অন্যান্য সবুজ ঘাস দ্রুত বৃদ্ধি পায় == গরু/মহিষ বেশী খায়/ মালিক পছন্দ করে খাওয়ায় == গরু পাকস্থলী থেকে রক্তে পৌছায় নাইট্রেট বিষ হিসেবে = রক্তের হিমোগ্লোবিন নামক ফ্রী রেডিকেল ( যারা ফুস ফুস থেকে অক্সিজেনের সাথে বন্ডিং করে অক্সিহিমোগ্লোবিন আকারে শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে জটিল জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিপাক ক্রিয়া সম্পাদন করে) ===== হেলেঞ্চা ঘাসের মাধ্যমে রক্তে ঢোকা নাইট্রেট বিষ হিমোগ্লোবিনের সাথে বন্ডিং করে মেথমোগ্লোবিন হিসাবে রুপান্তরিত করে দেয় যার কারনে হেমোগ্লোবিন ফুস ফুস থেকে আর অক্সিজেন নিতে পারে না,, ফলশ্রুতি আক্রান্ত পশুটি শ্বাস কষ্ট সহ কাঁপতে কাঁপতে দ্রুত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। =============================== প্রতিবছর মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সমস্যাটি থাকে বর্ষাকাল এসে গেলে জমি থেকে অতিরিক্ত নাইট্রোজে দ্রবিভূত হয়ে যায় ঘাসে এর মাত্রা স্বভাবিক হয়ে যায় তখন আর এধরনের বিষক্রিয়ার সম্ভসবনা থাকে না।
বিগত বছরে চরফ্যাশন উপজেলার ওসমানগঞ্জ,কেরামতগঞ্জ, হাজারীগঞ্জ, জাহানপুর, চরমানিকা ইউনিয়ে এ ধরনের কিছু সমস্যা হয়েছিল। খবর পাওয়ার সাথে সাথে প্রাণিসম্পদ বিভাগের মাধ্যমে * আক্রান্ত এলাকার কৃষকদের নিয়ে উঠান বৈঠক, পথসভা করে সমস্যাটি সম্পর্কে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরন করা হয়। * সন্দেহজনক চারনভূমিতে গবাদি পশুর বিচরণ সাময়িক বন্ধ রাখে যে কাজে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও চৌকিদাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। * আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা * বিষক্রিয়ায় মৃত পশুর নমূণা সংগ্রহ, সিডিঅাইএল, ঢাকা প্রেরন। * সিডিআইএল থেকে প্রাপ্ত রিপোর্ট ( নাইট্রে বিষ পজিটিভ ) সংরক্ষণ। ====== এবছরে মুজিবনগর ইউনিয়সহ বেশকিছু ইউনিয়নে সমস্যাটি দেখা দেয়।
মুজিবনগর ইউনিয়ন গত ২/৩ দিনে কয়েকটি গরু এ কারনে মৃত্যুবরন করে, খবর পাওয়ার সাথে ভিএফএ জনাব মোঃ আলমগীর, জনাব মোঃ মিজান —- ধলাচর, বাংলাবাজর,শিকদার চরে এ বিষক্রিয়া প্রতিরোধে কৃষকদের সচেতন করছে, পাশাপাশি রুটিন টিকাদান কার্যক্রম, উঠাব বৈঠক, পথসভা চালিয়ে যাচ্ছে। আজ আমি নিজে বাংলাবাজার সহ কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গন্যমান্যব্যক্তি মসজিদের ইমামের সাথে মত বিনিময় শেষে একটি পথসভায় বিষয়টি তুলে ধরি যাতে কেউ আতংকিত না হয়, এবং তাদের গবাদিপশুকে মাত্র এই কয়েক সপ্তাহ সন্দেহজনক মাঠে না চড়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *