ঢাকা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে আরেক ‘বিস্ফোরণ’ ঘটেছে। এবার বেরিয়ে এসেছে আরেক নতুন গোয়েন্দা তথ্য। তাতে বলা হচ্ছে, বরখাস্ত করা জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনের রাশিয়া কানেকশন নিয়ে তদন্তের ইতি টানতে এফবিআইয়ের (সাবেক) পরিচালক জেমস কমি’কে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
মাইকেল ফ্লিনকে বরখাস্ত করার একদিন পরেই এফবিআইয়ের তৎকালীন পরিচালক জেমস কমি’র সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তখনই তিনি এ নির্দেশ দেন। বৈঠকের পরই এ কথা নথিভুক্ত করেছেন জেমস কমি। লিখিতভাবে তা নথিভুক্ত করে রেখেছেন। ওই মেমো’টি যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়ায় তোলপাড় চলছে। ডেমোক্রেটরা এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে। একই সঙ্গে ট্রাম্পের ওই নির্দেশকে তারা সুবিচারের অন্তরায় বলে আখ্যায়িত করেছে। এমন খবরে এশিয়ার শেয়ার বাজারে আজ বুধবার ডলার হোঁচট খেয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স, অনলাইন সিএনএন, বিবিসি। তৎকালীন এফবিআই পরিচালক কমি’কে ট্রাম্পের দেয়া নির্দেশ নিয়ে তোলপাড় চলছে রাজনীতিতে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বরখাস্ত করেছেন জেমস কমি’কে। এরপর তিনি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ও রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলায়েকের সঙ্গে আইএস নিয়ে স্পর্শকাতর গোপন তথ্য নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে অভিযোগ আছে। এসব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে যখন ঘূর্ণি বাতাস তখনই মাইকেল ফ্লিনের রাশিয়া সংশ্লিষ্টতার তদন্ত বন্ধা সংক্রান্ত ট্রাম্পের এই নির্দেশ ফাঁস হয়ে গেল। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন কোন নির্দেশ দেন নি বলে দাবি করেছে হোয়াইট হাউজ। সেখান থেকে দেয়া একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জেনারেল ফ্লিনের (রাশিয়া) সংশ্লিষ্টতা সহ যেকোন রকমের তদন্ত বন্ধ করার জন্য মিস্টার কমি বা কাউকে কখনো নির্দেশ দেন নি প্রেসিডেন্ট। তবে ট্রাম্প যে নির্দেশ দিয়েছিলেন সে প্রমাণ এরই মধ্যে প্রথম তুলে ধরে নিউ ইয়র্ক টাইমস। তারা কমির মেমো সবার আগে প্রকাশ করে। তাতে ক্যাপিটল হিলে সতর্ক হয়ে যান সবাই। নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। যেমন তাহলে কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফেডারেল তদন্তে (এফবিআইয়ের তদন্ত) হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছেন? তার ও তার নির্বাচনী টিমের রাশিয়া কানেকশন নিয়ে তদন্তে কেন এমন নির্দেশ? তাহলে কি কোথাও কোন কালো বিড়াল বসে আছে? ঘটনা আসলে কোন দিকে মোড় নেবে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অনেক আগেই পূর্বাভাস দিয়েছেন তার ভবিষ্যত নিয়ে। তারা বলেছেন, তিনি ক্ষমতার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবেন না বলেই মনে হচ্ছে। হয়তো তার আগেই তিনি অভিশংসিত হতে পারেন। এসব প্রশ্ন, আলোচনা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্বও সতর্কতার সঙ্গে নজর রাখতে সে দিকে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, জেমস কমি’র ওই মেমো মঙ্গলবার ফাঁস হওয়ার পর দ্রুততার সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করেছে হোয়াইট হাউজ। তাতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ও জেমস কমির মধ্যকার আলোচনা সত্যিকারভাবে বা যথাযথভাবে তুলে ধরা হয় নি এতে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে প্রচারণ যখন তুঙ্গে তখনই সেখানে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলায়েকের সঙ্গে গোপন আলোচনা করেন মাইকেল ফ্লিন। ওই আলোচনায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া অবরোধ প্রত্যাহারের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় বলে মিডিয়ার খবরে বলা হয়। এ ঘটনায় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে মিথ্যা বলার দায়ে গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনকে বরখাস্ত করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এর একদিন পরেই ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক হয় তখনকার এফবিআই প্রধান জেমস কমি’র। ওই বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছিল তা লিখিত আকারে একটি মেমোতে লিখে রাখেন কমি। নিউ ইয়র্ক টাইমস রিপোর্টে বলেছে, ওভাল অফিসের ওই বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরকারের ভিতরকার অনেক তথ্য মিডিয়ায় ফাঁস হওয়া নিয়ে নিন্দা জানান। বলা হয়, গোপন তথ্য প্রকাশ করার কারণে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিচারিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত এফবিআই পরিচালকের। ওদিকে গত সপ্তাহে রাশিয়ার কাছে স্পর্শকাতর গোপন তথ্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রকাশ করে দিয়েছেন বলে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। তারপর নতুন করে জেমস কমি মেমোর খবরে কংগ্রেসে তার উত্তাপ লেগেছে। তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দল ডেমোক্রেট নেতারা। ডেমোক্রেট সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেন্টাল বলেছেন, বিচার কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে এই মেমোটি একটি শক্তিশালী প্রমাণ। এর অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে। তাই একজন নিরপেক্ষ স্পেশাল প্রসিকিউটর দিয়ে এ বিষয়টি দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত করতে হবে। অন্যদিকে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট আইন প্রণেতারা ওই মেমোটি দেখতে চেয়েছেন। প্রতিনিধি পরিষদের ওভারসাইট কমিটির চেয়ারম্যান রিপাবলিকান দলের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য জ্যাসন চ্যাফেজ বলেছেন, আসলেই এমন কমি মেমো আছে কিনা তা তার কমিটি দেখতে চাইছে। দেরিতে নয়, যত তাড়াতাড়ি হোক আমি এটা দেখতে চাই। আমার কাছে সপিনা (আদালতে হাজির না হয়েও বিচারের মুখোমুখি বিষয়ক) কলম প্রস্তুত আছে। তাই তিনি এফবিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অ্যানড্রু ম্যাকাবে’কে একটি চিঠিতে ২৪ শে মে পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি জেমস কমি ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে যোগাযোগের যেকোন রকমের মেমোরেন্ডা, নোটস, সামারি, রেকর্ডিং ও যেকোন কথোপকথন তার কমিটির কাছে জমা দিতে বলেছেন ম্যাকাবে’কে। জ্যাসন চ্যাফেজ-এর এ উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার রিপাবলিকান পল রায়ান। পল রায়ানের মুখপাত্র অ্যাশলি স্ট্রং বলেছেন, সব ফ্যাক্ট আমাদের জানা প্রয়োজন। তাই হাউজ ওভারসাইট কমিটি মেমোর বিষয়ে যে অনুরোধ পাঠিয়েথে তা যথার্থ। ওদিকে উত্থাপিত নতুন অভিযোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন। তারা সরাসরি বলেছেন, এমনিভাবেই সাবেক প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, আরভিন স্কুল অব লয়ের ডীন ও সংবিধান বিষয়ক আইনের প্রফেসর ইরউইন চেরেমিনস্কি বলেছেন, একটি ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন তদন্ত বন্ধ করতে এফবিআইকে প্রেসিডেন্টের নির্দেশ সুবিচারের পথে অন্তরায়। এটাই সেই কারণ, যে কারণে সাবেক প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। ওদিকে কমি মেমোর বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এফবিআই। অন্যদিকে ট্রাম্পের রাজনৈতিক সংগঠন ও রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটি একটি ইমেইলে দাবি করেছে, অনির্বাচিত কর্মকর্তাদের দ্বারা শিকারে পরিণত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। উল্লেখ্য, রাশিয়ার কাছে স্পর্শকাতর গোয়েন্দা তথ্য প্রকাশ করে দেয়ার অভিযোগে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান দলের রাজনীতিকরা যখন ট্রাম্পের কাছে পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা চাইছেন তখনই প্রকাশ হলো কমি মেমো। তা যুক্তরাষ্ট্রকে কতদূর নিয়ে যায় তা-ই এখন দেখার বিষয়