স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা- এনআইএ’র কাছে ৪৬ সন্ত্রাসী ও জঙ্গির তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে দেয়া হয়েছে ১৪ জনের তালিকা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেয়া তালিকার বেশির ভাগই শীর্ষ সন্ত্রাসী। আর জঙ্গিদের মধ্যে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ- জেএমবি ও হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ- হুজিবি’র কয়েকজন সদস্যের নামও রয়েছে। অপরদিকে ভারতের পক্ষ থেকে দেয়া ১৪ জনের তালিকার সবাই জঙ্গি সদস্য। যার মধ্যে তিন জনকে দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা হন্যে হয়ে খুঁজছে।
গত ২রা অক্টোবর ভারতের পশ্চিবঙ্গের বর্ধমানে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে দুই ব্যক্তির মৃত্যুর পর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সেখানে বাংলাদেশের জেএমবি সদস্যদের বড় ধরনের নেটওয়ার্কের বিষয়টি জানতে পারেন। বর্ধমানের বিস্ফোরণের পর ঘটনার তদন্তে নামে ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা- এনআইএ। প্রাথমিক তদন্তে তারা জানতে পারেন, জেএমবি’র অনেক সদস্য পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে থেকে সংগঠিত হওয়া ও নাশকতার চেষ্টা করছিল। তদন্তের ধারাবাহিকতায় ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এনআইএ’র মহাপরিচালক শারদ কুমারের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল গত সোমবার ঢাকায় আসেন। প্রথম দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের গতকাল দুপুরে দ্বিতীয় দিনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা পুলিশ সদর দপ্তরে একটি বৈঠক করেন। সন্ধ্যায় তারা উত্তরায় র্যাব সদর দপ্তরে যান। র্যাব-এর গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ বলেন, এনআইএ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। তারা কিছু জঙ্গি সদস্যের নাম দিয়েছেন। আমরাও তাদের সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সদস্যের একটি তালিকা দিয়েছি, যারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে আত্মগোপন করে আছে। তিনি বলেন, জঙ্গি দমনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশ যৌথভাবে কাজ করবে। সূত্র জানায়, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে ১৪ জন জঙ্গি সদস্যের একটি তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে। এর মধ্যে ১১ জন হলো মাওলানা কাওসার, আবুল কালাম আজাদ, তালহা শেখ, শেখ হাফিজুর রহমান, নাসরুল্লাহ, আমজাদ আলী, জহিরুল শেখ, শাহনুর আলম, বুরহান শেখ, রেজাউল করিম, ইউসুফ। এছাড়া বাংলাদেশী গোয়েন্দা সংস্থা যে তিন জনকে হন্যে হয়ে খুঁজছে ত্রিশাল ঘটনার সেই সালেহীন ওরফে সানি, বোমারু মিজান ও ফারুকের নামও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তাদের তালিকায় দিয়েছে। সম্প্রতি জেএমবি’র অন্যতম কমান্ডার শেখ রহমতুল্লাহ ওরফে সাজিদ ওরফে মাসুম ওরফে মাসুদ রানাকে কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তার কাছ থেকেই এ সব জঙ্গি সদস্যের নাম পেয়েছেন বলে বাংলাদেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ’র কাছে যাদের নাম দেয়া হয়েছে তাদের বেশির ভাগই তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। এছাড়া এনআইএ’র কাছে দেয়া তালিকার মধ্যে ত্রিশালে পুলিশ হত্যা করে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পলাতক জেএমবি সদস্য সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি ও জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজান এবং ওই ঘটনার সন্দেহভাজন পরিকল্পনাকারী ফারুক হোসেনের নাম রয়েছে। এছাড়া জেএমবি’র বর্তমান আমীর সোহেল মাহফুজ ও তরিকুল ইসলামের নামও রয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে দেয়া সন্ত্রাসীদের মধ্যে যাদের নাম রয়েছে হলো- শাহাদত হোসেন, নরোত্তম সাহা ওরফে আশিক, নবীর হোসেন নবী, মামুনুর রশীদ মামুন, শামীম ওরফে আগা শামীম, কালাচান ওরফে চান, নূরুল আলম প্রকাশ ওরফে আলম প্রকাশ, ত্রিমতি সুব্রত বাইন, শাহীন ওরফে রুনি, খন্দকার তানভীরুল ইসলাম ওরফে জয়, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, আশিক ওরফে রবিন, আনোয়ার হোসেন ওরফে আনু, গৌতম চন্দ্র শীল ওরফে গৌতম চেয়ারম্যান, হারিছ আহমেদ, হালিম, মোর্শেদ খান, বিকাশ কুমার বিশ্বাস, জিসান ওরফে নয়াটোলার জিসান, আনিসুর রহমান লিটন ওরফে ফিঙ্গে লিটন, মোল্লা মাসুদ, মিজান ওরফে দুখু, ইব্রাহীম খলিল, শাহীন শিকদার, চপল, মোস্তাফিজুর রহমান, এনামুল হক এনা, সাজ্জাদ খান, অমল কৃষ্ণ মণ্ডল, তৈয়ব, সিদ্দিক, রাজীব দত্ত ওরফে রিঙ্কু, তৌফিকুর আলম, পিয়াল খান, সুনীল কান্তি দে, বাবু ওরফে মিরপুর বাবু, আগারগাঁওয়ের মিন্টু, আতাউর রহমান আতা, রবি, মুকুল ওরফে বিজয় ও জাফর আহমেদ ওরফে মানিক। শীর্ষ সন্ত্রাসীর বাইরে পাঁচ জন মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি সদস্যের নামও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা সদস্যের কাছে দিয়েছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। তারা হলো জেএমবি’র বর্তমান আমীর সোহেল মাহফুজ, ত্রিশালে পুলিশ ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গি সদস্য বোমারু মিজান ও সালেহীন ওরফে সানি, ত্রিশালের জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনাকারী আনোয়ার হোসেন ওরফে ফারুক হোসেন এবং জঙ্গি সদস্য তরিকুল ইসলাম। এনআইএ সদস্যদের সহযোগিতা করতে বাংলাদেশের যে প্রতিনিধি দল গঠন করা হয়েছে তার একজন সদস্য জানান, বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্দেহভাজনদের যে তালিকা এনআইএ কর্মকর্তারা দিয়েছেন, তাতে সালেহীন ওরফে সানি, বোমারু মিজান ও ফারুকের নাম রয়েছে। বাংলাদেশের তদন্ত সংস্থাগুলোও তাদের খুঁজছে। ধারণা করা হচ্ছে ত্রিশালের ঘটনার পর তারা ভারতে গিয়েই আত্মগোপন করে আছে। ওই সূত্র জানায়, বর্ধমানের ঘটনায় এনআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া শেখ রহমতুল্লাহ ওরফে সাজিদ যে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের মাসুম ওরফে মাসুদ রানা গোয়েন্দারা সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন।