দাবানলের আগুনে জ্বলছে ইউক্রেনের চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রের চারপাশ

Slider টপ নিউজ

চেরনোবিল পারমাণবিক চুল্লির আশেপাশে ছড়িয়ে পড়েছে দাবানলের আগুন। ইউক্রেন দাবি করেছে যে, পরিত্যক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রে রাশিয়ানরা আগুন নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে বাধা দিচ্ছে। ইউক্রেনের পার্লামেন্টের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি দ্বারা তোলা স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে চেরনোবিলের পরিত্যক্ত অঞ্চলের মধ্যে অন্তত সাতটি আগুন দেখা গেছে। ইউক্রেন সংসদের দাবি, রাশিয়ান আগ্রাসনের জেরেই সম্ভবত ছড়িয়ে পড়েছে দাবানলের আগুন। যদিও গোলাগুলি, অগ্নিসংযোগ বা অন্য কোনও কারণে এই দাবানল সৃষ্টি হয়েছে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। প্ল্যান্টের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে এই ধরনের আগুন ভীষণ বিপজ্জনক। ইউক্রেন দাবি করেছে যে, রাশিয়ান সৈন্যদের উপস্থিতির কারণে দেশের দমকলকর্মীরা দাবানল সামলাতে অক্ষম। ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেন আক্রমণের শুরুর দিনগুলিতে রাশিয়ান বাহিনী চেরনোবিল প্ল্যান্ট দখল করে। ১৯৮৬ সালে একটি বিস্ফোরণ এবং এর ফলে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডের কারণে বড় পারমাণবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল এই চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্র , যার জেরে ইউরোপজুড়ে তেজস্ক্রিয় দূষণ ছড়িয়ে পড়েছিল ।
তারপর থেকে প্ল্যান্ট এবং আশেপাশের এলাকাটি মূলত সিল করে দেয়া হয়েছে। যাইহোক, তারপর থেকে প্রায় ২০০ টন জ্বালানি বিকল চুল্লির নীচে থেকে যায় এবং তুলনামূলকভাবে সেটি অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এই এলাকায় ভয়ঙ্কর যুদ্ধ চুল্লিটিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং যার জেরে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, চলমান যুদ্ধ চেরনোবিলে বিকিরণের মাত্রা নিরীক্ষণের প্রচেষ্টাকেও বাধাগ্রস্ত করছে। যদিও ইউক্রেনের রাষ্ট্র-চালিত পারমাণবিক সংস্থা এনারগোটম বলেছে, ”এই মুহূর্তে চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়িয়ে পড়ার কোনো তথ্য তাদের হাতে নেই। কিন্তু যদি একবার তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে তা শুধুমাত্র ইউক্রেনই নয়, অন্যান্য দেশগুলির অবস্থাও খারাপ করে তুলতে পারে।”২০২০ সালে, চুল্লির কাছে দাবানলের কারণে বিকিরণের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১৬ গুণ বেড়ে গিয়েছিল। অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের দুই সপ্তাহের প্রচেষ্টার পরে আগুন নিভিয়ে ফেলা সম্ভব হয়েছিল। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন যে, এই ধরনের সম্ভাব্য বিপর্যয়গুলি আংশিকভাবে বৈশ্বিক উত্তাপ বাড়ার লক্ষণ, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বনগুলি শুকিয়ে যাচ্ছে এবং দাবানল সৃষ্টি করছে।ইউরোপে, সুইডেন থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত অঞ্চলগুলি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দাবানলের প্রাদুর্ভাব প্রত্যক্ষ করেছে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবানলের বিশেষজ্ঞ লেরয় ওয়েস্টারলিং বলেছেন, উষ্ণ তাপমাত্রা বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি করছে। যদিও ইউক্রেনের অবস্থা এখন অন্যরকম। যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সেখানে নানারকম ঘটনা ঘটছে। চেরনোবিলের চারপাশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পোড়া তেজস্ক্রিয় কণাগুলিকে আবারো সক্রিয় করে তুলতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন লেরয় ওয়েস্টারলিং। চেরনোবিল অঞ্চলেই, পারমাণবিক বিপর্যয়ের কারণে আশেপাশের গাছ মারা যাওয়ার ফলে প্রচুর শুকনো কাঠ রয়েছে যা থেকে যেকোনো সময়ে বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। ২০১৫ সালে, বিজ্ঞানীদের একটি দল সতর্ক করেছিল যে “জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে যুক্ত এরকম একটি বিস্তৃত দাহ্য অঞ্চল ভবিষ্যতে তেজস্ক্রিয় দূষণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।” পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির জলবায়ু বিজ্ঞানী মাইকেল মান বলেছেন, ইউক্রেনের দাবানল জলবায়ু পরিবর্তনের সেই প্যাটার্নের সাথে খাপ খায় যা বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো জায়গাগুলিকে পুড়িয়ে দিয়েছে। মান বলেছেন যে, জীবাশ্ম জ্বালানির উপর আমাদের অত্যধিক নির্ভরতার কারণে যুদ্ধ এবং জলবায়ু সংকট মাথাচাড়া দিয়েছে । জীবাশ্ম জ্বালানিগুলিই রাশিয়ার মতো কর্তৃত্ববাদী পেট্রোস্টেটগুলিকে সমর্থন করে যারা তাদের সামরিক বাহিনী গড়ে তোলার জন্য অবশিষ্ট বিশ্বের জীবাশ্ম জ্বালানীর খনি এবং বিক্রি থেকে প্রাপ্ত বিপুল সম্পদ ব্যবহার করেছে।

সূত্র : www.theguardian.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *