ঝিনাইদহে‘অপারেশন দক্ষিণের থাবা’শেষ

Slider খুলনা জাতীয় সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

 

Pic (11)

 

 

 

 

স্টাফ রিপোর্টার,ঝিনাইদহঃ (পর্ব-১)
ঝিনাইদহে অপারেশন ‘সাউথ-প’ (দক্ষিণে থাবা) সমাপ্ত ঘোষণা করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জেলার সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনিয়া পাড়ার জঙ্গি আস্তানায় পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম সদস্যরা অভিযান শেষ করেছে। অভিযানের নামকরণ করা হয়েছে ‘অপারেশন সাউথ প (চঅড)’ বা ‘দক্ষিণের থাবা’।
শনিবার সকাল সোয়া ১০টা থেকে শুরু হওয়া অভিযান শেষ হয় দুপুর আড়ায় টায়। প্রায় ৪ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের অভিযানে ঝিনাইদহের সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনেপাড়ায় জঙ্গি আস্তানা থেকে বিস্ফোরক তৈরির রাসায়নিক ভর্তি ২০টি ড্রাম, একটি সেভেন পয়েন্ট সিক্স বোরের পিস্তল, একটা ম্যাগাজিন, সাত রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। পাঁচটি বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন।

শনিবার সকাল ৭টা থেকে অভিযান পুনরায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে কিছুটা বিলম্বিত হয়। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অভিযান শুরু হয়। অভিযান শুরুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি দিদার আহমেদ। শনিবার সকাল থেকে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে বাড়ির ভেতর থেকে বিস্ফোরক তৈরির তরল পদার্থ ভর্তি ১৭টি ড্রাম উদ্ধার করেছে। এছাড়াও বাড়ি থেকে ১৫টি জিহাদি বইও উদ্ধার করা হয়েছে।

Pic (5)

 

 

 

পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ জানান, ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা মধ্যে ওই বাড়ির ভেতরে বোমা নিস্ক্রিয় করার কাজের সময় বিকট তিনটি শব্দ হয়। এদিকে ওই বাড়ির আশপাশের ৫শ’ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশ জারি থাকবে বলে জানিয়েছেন ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মাহবুব আহমেদ তালকুদার।

অপারেশন ‘সাউথ-প’এ সিটিটিসি’র ৩০ জন এবং খুলনা রেঞ্জের পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৪শ’ সদস্য অংশ নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে। এর আগে গতরাতে এই জঙ্গি আস্তানায় পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম তাদের প্রাথমিক অভিযান স্থগিত করেছিল।

খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি দিদার আহমেদ গত রাত সাড়ে ১০ টার দিকে সাংবাদিকদের জানান, পোড়াহাটি গ্রামের আব্দুল্লাহ এর বাড়ি জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে গতকাল সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ঘিরে রাখে পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সদস্যরা। বাড়িটিতে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য, বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও অনেক রাত হয়ে যাওয়ার কারণে অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, বাড়িটির আশপাশ এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।

বাড়ির মালিক আব্দুল্লাহ গত ৫ বছর পূর্বে একই গ্রামের চৈতন্য বিশ্বাসের ছেলে প্রভাত বিশ্বাস ছিলেন। তিনি সনাতন ধর্ম ছেড়ে দিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এরপর থেকে সে আলমসাধু চালাতো বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তবে এলাকার কারোর সঙ্গে মিশতেন না।

ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আযবাহার আলী শেখ জানান, সকাল থেকে মাইকিং করে এলাকার লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে। তিনি আরো জানান, সকালে ঢাকা থেকে বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ দল ঝিনাইদহে পৌছেঁছেচ। বৃষ্টি শুরু হওয়ার কারনে অভিযান একটু দেরী হয়েছে। ঘরের ভিতর বিপুল পরিমান এক্সপ্লোসিভ, বোম, অস্ত্র গুলি থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাউন্টার টেরোরিজম এর ২টি ইউনিট, র‌্যাব পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ওই এলাকা ঘিরে রেখেছে।

এদিকে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওযায় ওই এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। নিরাপত্তার কারণে বাড়ীর বাইরে কাউকে যেতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বাড়ির কাছে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সকাল থেকেই এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে।

ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, জঙ্গি আস্তানার কাছেই উপস্থিত রয়েছেন পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ, ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, জেলা প্রশাসক মাহবুব আহমেদ তালকুদারসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এর আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিআইজি দিদার আহমেদ শনিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত অভিযান স্থগিত করার কথা জানান। আজবাহার আলী শেখ আরও জানান, ঠনঠনেপাড়ায় ওই বাড়ির আশপাশের এলাকায় চলাফেরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এলাকাবাসীকে বাইরে বের না হতে সতর্ক করে মাইকিং করা হয়েছে।

শুক্রবার রাতের প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিআইজি দিদার আহম্মদ বলেন, “শুক্রবার বিকাল ৬টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের আব্দুল্লাহর বাড়িকে ‘জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহে ঘিরে রাখে পুলিশ। ওই বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বাড়ির মালিক আব্দুল্লাহ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। সে জেএমবির সদস্য। আব্দুল্লাহ পাঁচ বছর আগে সনাতন ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *