সরকার পিছু হটে রাজধানীতে বাস-মিনিবাসের সিটিং সার্ভিস বন্ধের অভিযান ১৫ দিনের জন্য স্থগিত করলেও গতকাল বৃহস্পতিবারও নগরে পুরোদমে বাস নামেনি। সিটিং সার্ভিস চলেছে, ভাড়াও আদায় করা হয়েছে আগের বাড়তি হারে।
বাস-মিনিবাসের সংখ্যা আগের চার দিনের চেয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে। বাস কম থাকায় সকালে কর্মস্থলগামী ও শিক্ষার্থীরা এবং বিকেলে কর্মস্থল থেকে বাড়িমুখী মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে। বাস কম চলায় গতকাল সপ্তাহের শেষ দিন হলেও অন্য সপ্তাহের তুলনায় যানজট ছিল কম।
বাস চলাচল পুরোদমে শুরু না হওয়ার বিষয়টি বাসমালিকেরাও স্বীকার করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ফিটনেস না থাকায় এবং চালকের লাইসেন্স না থাকায় কিছু বাস চলেনি। এ ছাড়া গত কয়েক দিন বাসের চালক-কর্মচারীরা ভাড়া নিয়ে বচসার সময় যাত্রীদের মারধরের শিকার হওয়ায় অনেকে বাস চালাতে চাইছেন না।
নগরে বাস-মিনিবাসের সিটিং সার্ভিস ১৫ এপ্রিল থেকে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাস মালিক সমিতি। এ সিদ্ধান্ত কার্যকরসহ কয়েকটি বিষয়ে ১৬ এপ্রিল শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। ওই দিন থেকেই নগরে প্রায় ৪০ শতাংশ বাস চলাচল কমিয়ে দেন মালিকেরাই। যাত্রীরা হয়ে পড়ে জিম্মি। পড়ে চরম দুর্ভোগে। গত বুধবার পরিবহনমালিক, পুলিশ ও বিআরটিএর কর্মকর্তাদের বৈঠকে সিটিং সার্ভিস বন্ধে অভিযান ১৫ দিনের জন্য স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর নগরে বাসের সংখ্যা বাড়ে।
অবশ্য বুধবার ওই বৈঠক শেষে বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সিটিং সার্ভিস নামে চললেও বাড়তি ভাড়া আদায় করা যাবে না। একই সঙ্গে যানবাহনের বাম্পার, হুক এবং অ্যাঙ্গেল খুলে ফেলার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে গতকাল বিআরটিএর কোনো ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম দেখা যায়নি।
একে বাস কম, অন্যদিকে সিটিং সার্ভিস বাসগুলো সব স্টপেজে না থামায় মাঝপথের যাত্রীদের গতকাল বাসের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। সকাল সোয়া আটটার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী ইসমাঈল হোসেন। মতিঝিলে যেতে কয়েকটি বাসে ওঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে শেষমেশ সিএনজিচালিত অটোরিকশার খোঁজ করেন। ইসমাঈল বলেন, পৌনে আটটা থেকে তিনি দাঁড়িয়ে। তিনটি বাস এসেছিল। দুটি ছিল সিটিং সার্ভিস, যাত্রী পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় দরজা ছিল বন্ধ। আর তৃতীয়টিতে যাত্রী এত বেশি ছিল যে ওঠার সুযোগই পাননি।
বিকেল পাঁচটায় ফার্মগেট মোড়ে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা তেজগাঁও কলেজের ছাত্র মুন্না রহমান বলেন, কুড়িল বিশ্বরোডে যেতে ৩০ মিনিট ধরে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। কয়েকটি সিটিং সার্ভিস বাস এলেও সিট ফাঁকা ছিল না। আর লোকাল বাসের দেখা পাননি। সিটিং সার্ভিস চালু হওয়ার পরও কেন বাস পাচ্ছেন না, তা বুঝতে পারছেন না।
সিটিং সার্ভিস চালু হওয়ায় স্বস্তিও জানিয়েছেন কেউ কেউ। তবে যাত্রীদের বারবার জিম্মি করায় পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা।
সকালে মিরপুর ১২ নম্বরে কথা হয় মিরপুর-যাত্রাবাড়ী পথে চলাচলকারী সিটিং সার্ভিস শিকড় পরিবহনের তত্ত্বাবধায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে। তিনি বলেন, মোট ৫০টি মিনিবাস রয়েছে এই পরিবহনের। সিটিং সার্ভিস বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে ৩০টির মতো চলেছে। গতকাল আরও পাঁচটি যোগ হয়েছে। বাকি ১৫টির মধ্যে কোনোটির ফিটনেস নেই, কোনোটির চালকের লাইসেন্স নেই। তাই নামানো হচ্ছে না।
মিরপুর-মতিঝিল পথে চলাচলকারী সিটিং সার্ভিস বিকল্প অটো সার্ভিসের ২০টি মিনিবাস গতকাল চলেনি। এই পরিবহনের একজন মালিক আলতাফ আলী মোল্লা বলেন, ফিটনেস না থাকা এবং চালকের লাইসেন্স না থাকায় বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয়ে বাসগুলো ছাড়া হয়নি।
মিরপুরে চিড়িয়াখানার সামনে মিরপুর ১ থেকে কালশী হয়ে মগবাজার পর্যন্ত চলাচলকারী নূর এ মক্কা পরিবহনের অনেক মিনিবাসকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এই পরিবহনের কর্মকর্তা নূরে আলম বলেন, সিটিং সার্ভিস বন্ধে অভিযান চলাকালে তাঁদের ৪০টি মিনিবাসের কর্মচারীদের কেউ না কেউ ভাড়া নিয়ে বাদানুবাদে যাত্রীদের মারধরের শিকার হয়েছেন। এ কারণে তাঁরা গাড়ি নামানোর জন্য চালক বা কর্মচারী পাচ্ছেন না।
বাস-মিনিবাসে সিটিং সার্ভিস চালুর পাশাপাশি এগুলোতে ভাড়াও আগের মতো বেশি আদায় করা হয়েছে। মোহাম্মদপুর-গুলিস্তান-মতিঝিল পথে চলাচলকারী কয়েকটি পরিবহনকে দেখা যায়, যেকোনো জায়গায় নামলেও ২০ টাকা দিতে হবে, এমন শর্তে যাত্রী তুলছে। মিরপুর ১০ থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১৫ টাকা ভাড়া নিতে দেখা যায় কয়েকটি সিটিং সার্ভিসকে। শাহবাগে বিকেলে অনেক মানুষকে বাসের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। সিটিং সার্ভিসগুলো থামেনি আর লোকালগুলোতে ঠাসাঠাসি ভিড়ের কারণে মানুষ উঠতে পারেনি।
বিআরটিএর পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) নাজমুল আহসান মজুমদার দুপুরে বলেন, যাত্রীদের হয়রানি বন্ধে বাস যাতে ঠিকমতো চলাচল শুরু করে, সে জন্য তাঁরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম শিথিল করেছেন। কিন্তু তারপরও বাস ঠিকমতো রাস্তায় চলাচল করেনি। শহরের ভেতরে ভ্রাম্যমাণ আদালত কার্যক্রম পরিচালনা করছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি দল মাওয়া মহাসড়কে যানবাহনের বাম্পার, হুক এবং অ্যাঙ্গেল খুলে ফেলার অভিযান চালিয়েছে। আরেকটি দল মিরপুরে বিআরটিএর কার্যালয়ে দালালবিরোধী অভিযান চালিয়েছে।