কথাতেই আছে, ফিফটিন মিনিটস অফ ফেম। তার পরেই নটে গাছটি মুড়োল!
ইন্টারনেট আর সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে তারা জ্বলতেও সময় লাগে না, তারা খসতেও সময় লাগে না! যদি বলা হয়, এই মুহূর্তে বলিউডের এক নম্বর নায়িকা কে? চার-পাঁচটা নাম উঠে আসবে। দীপিকা পাড়ুকোন, আলিয়া ভট্ট, কঙ্গনা রানাওয়াত বা ক্যাটরিনা কাইফ…একচ্ছত্র আধিপত্য বলতে যেটা বোঝায় সেই জায়গায় কোনও নায়িকার নাম করা যাবে না।
এখন খবরে থাকারও অনেক মাধ্যম। স্রেফ সিনেমা করেই যে এক নম্বর আসন দখল করে থাকা যাবে এমন নয়। মোদ্দা কথা, ক্রমাগত চর্চায় থাকতে হবে। তার জন্য পয়লা নম্বর অভিনেত্রী না হলেও চলবে। এক নম্বরের কনসেপ্টই যে অবলুপ্ত! একটা সময় ইন্ডাস্ট্রির এক নম্বর আসন দখল করা বলিউ়ড নায়িকাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল। মাধুরী দীক্ষিত, জুহি চাওলা, শ্রীদেবীদের পর সেই উদ্দেশ্যও ক্রমশ ফিকে হয়ে গেল। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে এক নম্বর হিরোইনের তকমা দেওয়াও বন্ধ হয়ে গেল। কখনও উঠত করিশ্মা কপূরের নাম। কখনও কাজল বা রানি।
খানেদের রাজত্ব কিন্তু একভাবে চলছে। শাহরুখ, আমির, সলমনের স্টারডম নতুন প্রজন্মের কেউ আয়ত্ত করতে পারলেন না। তবে ঘুরে গিয়েছে নায়িকাদের খেলা। পরপর নতুন মুখ উঠে এসেছে। আবার চলেও গিয়েছে। করিনা কপূরের পরবর্তী প্রজন্মে দীপিকা, প্রিয়ঙ্কা, ক্যাটরিনা, কঙ্গনারা এলেন। তারপর অনুষ্কা, সোনম, আলিয়া, পরিণীতি…
দীপিকা
এঁদের মধ্যে কি কেউ সিংহাসন দখল করতে পেরেছেন? প্রতিযোগিতা ছিল দীপিকা, ক্যাটরিনা আর প্রিয়ঙ্কার মধ্যে। হিট-ফ্লপের সাপ-লু়ডো খেলা চলছে। মাঝখান থেকে কঙ্গনা পরপর দু’বার জাতীয় পুরস্কার পেয়ে নিজের দিকে প্রচারের আলো ঘুরিয়ে নিলেন। দীপিকা-প্রিয়ঙ্কাও সঙ্গে-সঙ্গে হলিউড তাস খেললেন। কম যান না আলিয়াও। ‘হাইওয়ে’, ‘উড়তা পঞ্জাব’, ‘ডিয়ার জিন্দেগি’…পরপর পাওয়ার প্যাক়়ড পারফরম্যান্স দিয়েছেন। তা হলে এক নম্বর কে? জবাব মেলা ভার। অনুষ্কাকে ভুললে চলবে না। ‘সুলতান’, ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ ২০১৬-র অন্যতম হিট। পাশাপাশি তিনি প্রযোজক হিসেবেও সফল।
অনুষ্কা একটি বিজ্ঞাপন করেন। যার ট্যাগলাইন, সব সময় ট্রেন্ডিং থাকতে হবে। অর্থাৎ খবরে থাকতে হবে। এটাই এখন নায়িকাদের মূলমন্ত্র। প্রেম, বিতর্ক যা কিছু দিয়ে খবরে থাকা যেতে পারে। স্রেফ একটা পোশাক দিয়েও কেউ শিরোনামে চলে আসতে পারেন। তবে সব কিছুর মেয়াদ ক্ষণিকেরই।
একই ছবি টলিউডেও। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর পর একমাত্র কোয়েল মল্লিক পয়লার দৌড়ে শীর্ষে ছিলেন। তারপর কখনও শ্রাবন্তী, কখনও শুভশ্রীর নাম উঠে এসেছে। তবে কেউই একচ্ছত্র রাজত্ব চালাতে পারেননি। টলিউডে আরবান আর কমার্শিয়াল ছবির বিভাজন বেশ স্পষ্ট। তাই পাওলি, রাইমা, স্বস্তিকা সেভাবে নম্বরের দৌড়ে ঠাঁই করতে পারেননি। বাণিজ্যিক ছবির নায়িকাদেরই প্রতিযোগিতার পাঠক্রমে রাখা হয়। টলিউ়়ডের লড়াই এখন মিমি চক্রবর্তী, শুভশ্রী আর নুসরত জাহানের মধ্যে ঘোরা-ফেরা করছে। তাঁদের হাতেই সবচেয়ে বেশি ছবি। দু’জনকে ঘিরে গসিপও কম নেই। কিন্তু নিশ্চিত করে কাউকে এক নম্বরের মর্যাদা দেওয়া যাচ্ছে না এখনই!
আলিয়া
শাহরুখ খান একবার একটা দামি কথা বলেছিলেন। তাঁর মতে, এখনকার নায়িকাদের মধ্যে ‘অরা’ নেই। ‘‘আলিয়া-দীপিকাকে দেখলে বেশ কাছের মানুষ বলে মনে হয়। সেলিব্রিটি মানে দূরের নক্ষত্র এই কনসেপ্ট এখন ভ্রান্ত হয়ে গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে তারকা ভক্তদের নাগালের মধ্যে। এটাই যুগের ধর্ম,’’ বলেছিলেন শাহরুখ।
যুগ ধর্ম মেনে রাজত্ব আর সিংহাসনও মিলিয়ে গিয়েছে। সূত্র :আনন্দবাজার পত্রিকা