যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাপ্রুভাল রেটিং বা জনপ্রিয়তা সর্বনিম্নে পৌঁছেছে। কমপক্ষে ৭০ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তার এ জনপ্রিয়তা সর্বনিম্নে। গ্যালাপ জরিপে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতা গ্রহণের দু’মাসের মাথায় তার জনপ্রিয়তা কমে দাঁড়িয়েছে শতকরা ৩৭ ভাগ। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জন মার্কিন নাগরিকের মধ্যে মাত্র ৩৭ জন তাকে সমর্থন করছেন। তার ক্ষমতা গ্রহণের এই সময়সীমার মধ্যে এত নিচে ৭০ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা নামে নি। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাকে ‘ডিজঅ্যাপ্রুভ’ করেছেন শতকরা ৫৮ ভাগ মার্কিনি। অর্থাৎ তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনুমোদন করেন না এসব মানুষ। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, সিএনবিসি, নিউ ইয়র্কার ডেইলি নিউজ। এতে বলা হয়েছে, মাত্র দু’মাস হলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদ। ২০শে জানুয়ারি শপথ নিয়ে তিনি প্রবেশ করেন হোয়াইট হাউসে। ওই সময়ে তার জনপ্রিয়তা যা ছিল শতকরা ৪৫ ভাগ। তা কমে এখন দাঁড়িয়েছে ৩৭। যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা গ্রহণের পর অন্য সাবেক প্রেসিডেন্টদের জনপ্রিয়তা বা রেটিং কমেছে। কিন্তু এত বেশি কমে নি বা এত নিচে নামে নি তাদের জনপ্রিয়তা। গত রাতে রাশিয়া ইস্যুতে কংগ্রেসনাল শুনানি হওয়ার কথা। তার কিছু আগে গ্যালাপ জরিপের এই ফল প্রকাশ হয়। ওই শুনানিতে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা হবে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পকে সুবিধা দেয়ার জন্য রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছিল কিনা। একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও রাশিয়া এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ওদিকে নির্বাচনের আগে ট্রাম্প টাওয়ারে অন্যায়ভাবে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও বৃটেন আড়ি পেতেছিল কিনা সে বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়ার কথা এফবিআই পরিচালক জেমস কমি’র। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জনপ্রিয়তার এ নতুন অঙ্ক তার আগেই কষেছে গ্যালাপ। তিন দিনের তথ্য উপাত্ত সামনে নিয়ে তার গড় করে তারা এমন তথ্য প্রকাশ করেছে। গ্যালাপের এ জরিপে অংশ নিয়েছেন প্রায় ১৫০০ মার্কিনি। যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ রিপাবলিকানরা যখন ওবামাকেয়ার বাতিল করে স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক বিলে পরিবর্তন নিয়ে কাজ করছেন তখনই জরিপে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ওদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০শে জানুয়ারি যখন শপথ নিয়ে তার যাত্রা শুরু করেন তখন তার জনপ্রিয়তা বা অ্যাপ্রুভাল রেটিং ছিল শতকরা প্রায় ৪৫ ভাগ। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তিনি আক্রমণ করে বসেন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে। সাংবাদিকদের অভিহিত করেন অসৎ হিসেবে। মিডিয়া ভুল রিপোর্ট দেয় বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। প্রথম দফায় ২৭শে জানুয়ারি তিনি মুসলিম প্রধান ৭টি দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। পরে তা আটকে দেন আদালত। এরপর সংশোধিত আকারে তিনি ৬টি মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে একই রকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তাও আটকে দেন আদালত। ফেডারেল বিচারকরা ট্রাম্পের এসব আদেশকে অসাংবিধানিক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বলা হয়, এ আদেশগুলো মুসলিম বিরোধিতার ওপর ভিত্তি করে দেয়া হয়েছে। ওদিকে বড় যে স্থানটিতে তিনি হাত দিয়েছেন তা হলো সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে করা ওবামাকেয়ার বিল। এটিকে তিনি বাতিল করে নতুন বিল আনার ঘোষণা দিয়েছেন। ওবামাকেয়ারের অধীনে স্বাস্থ্যখাতে যুক্তরাষ্ট্রের কম আয়ের বাড়তি প্রায় দুই কোটি মানুষ স্বাস্থ্য বিষয়ক ইনস্যুরেন্স পেতেন। প্রথম দু’মাসে ট্রাম্প প্রতিবাদকারীদের অর্থ দিয়ে উসকে দেয়ার অভিযোগ এনেছেন বিলিয়নিয়ার জর্জ সরোজ-এর বিরুদ্ধে। কিন্তু তিনি বর্ণবাদের বিষয়টি আমলে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে রিপোর্টে বলা হয়। ক্রমবর্ধমান ‘এন্টি-সেমিটিক’ বা ইহুদিদের বিরুদ্ধে বোমা হামলার হুমকি ও ভাঙচুরের বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এক ইহুদি সাংবাদিক তার কাছে প্রশ্ন করেন। এ সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই সাংবাদিককে বসে পড়তে বলেন এবং প্রসঙ্গ এড়িয়ে তিনি তার নির্বাচনে বিজয় নিয়ে কথা বলা শুরু করেন। এ ছাড়া রয়েছে আন্তর্জাতিক কূটনীতির বিষয়। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলের সঙ্গে তার খুবই সংক্ষিপ্ত কথা হয়েছে। সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য মেক্সিকো অর্থ দেবে এমনটা বলার পর মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনা নিয়েতো তার ওয়াশিংটন সফর বাতিল করেছেন। তবে সর্বশেষ যে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে তা হলো, কয়েক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেল। শুক্রবার তিনি ওভাল অফিসে বিভিন্ন টিভি ক্যামেরার সামনে যখন হ্যান্ডশেকের জন্য ট্রাম্পের দিকে হাত বাড়িয়ে দেন, তা দৃশ্যত অবজ্ঞা করেন বা এড়িয়ে যান ট্রাম্প। জবাবে ট্রাম্পের মুখপাত্র শন স্পাইসার বলেছেন, সম্ভবত মারকেলের প্রশ্নটা শুনতে পান নি ট্রাম্প। তবে তাদের মধ্যকার বৈঠক নিয়ে মিডিয়ায় যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তাকে ‘ফেক নিউজ’ বা মিথ্যা সংবাদ হিসেবে অভিহিত করেছেন ট্রাম্প।