মোঃ জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহের মহেশপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেছে উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা মামলা প্রতাহারের দাবীতে। শনিবার দুপুরে মহেশপুর শিক্ষক সমিতির অফিস প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে তারা। মিছিলটি উপজেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়।
এর আগে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ড. আব্দুল মালেক গাজী।
তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থ সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে মহেশপুর উপজেলায় দুই কোটি তিন লাখ টাকা ব্যায়ে একটি কমপ্লেক্স তৈরীর অনুমোদন দেয় সরকার। উপজেলার কোন স্থানে কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য স্থান পাওয়া যাচ্ছিল না।
এ পরিস্থিতিতে উপজেলার মুন্সি ফেরদৌস নামের এক ব্যক্তি ১০ শতক জমি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের নামে দান করে। কিন্তু সেখানে দীর্ঘদিন যাবত রাজাকার হামিদুল অবৈধভাবে দখল করে আসছিল। মুন্সি ফেরদৌস মুক্তিযোদ্ধাদের নামে জমিটি দানপত্র করে দিলে গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি জমিটি দেখতে যায় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। সে সময় ওই জমির দখলে থাকা জামায়াত ও শিবিরের লোকজন মুক্তিযোদ্ধাদের উপর হামলা করে এবং ১৪ জনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনায় মহেশপুর থানায় মামলা দিতে গেলে মামলা নেয় নি পুলিশ। উপরন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে।
ড. আব্দুল মালেক গাজী অভিযোগ করেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ, সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল আজম চঞ্চল ও জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা ওইসব দখলদারদের পক্ষে কাজ করছে। তাদের উস্কানি দিয়ে জমিদাতার ভাই-বোন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এসিল্যান্ডসহ কয়েকজনকে বিবাদী করে ১৪ টি মামলা করেছে। যে কারণে হয়রানির স্বীকার হচ্ছে তারা।
অবিলম্বে এসব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটি নির্মাণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সরকারের নিকট দাবী জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা কাজী আব্দুস সাত্তার, রবিউল আওয়াল, আব্দার রহমান, গোলাম মোস্তফা, আবু তালেব ও জমিদাতা মুন্সি ফেরদৌসসহ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন। এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
ঝিনাইদহে ২৬ বছর ধরে ২২ গ্রামের মানুষের ভাগ্যে চিত্রা নদীর সাঁকো !
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে প্রায় ৫০ বছর পূর্বে চিত্রা নদীর গড়ে উঠেছে তত্বিপুর বাজার। নদীর দু,পাড়ের কমপক্ষে ২২ টি গ্রামের মানুষ এই বাজারের সঙ্গে নানা ভাবে জড়িয়ে। দক্ষিণ পাড়ে রয়েছে ৭ টি গ্রাম, আর উত্তরে ১৫ টি। এই গ্রাম গুলোর মানুষ কেউ ব্যবসা করেন, কেউ দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটান এই বাজারেই। অথচ একটি সেতুর অভাবে ওই নদীর দুইপাড়ের গ্রাম গুলোর লোকজনের বাজারটিতে আসা-যাওয়ার ভোগান্তির শেষ নেই।এই বাজারে খুচরা ও পাইকারি বিভিন্ন মালামাল বিক্রি হয়।
এলাকাবাসি বলেন, বছরে ৬ থেকে ৭ মাস তারা বাঁশের সাকো দিয়ে পারাপার হন, সে সময় নদীতে পানি কম থাকে। বাকি সময়টা অর্থাৎ বর্ষা মৌসুমে পানির চাপে সাঁকোও ভেষে যায়। ফলে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তারা দীর্ঘদিন ওই নদীর তত্বিপুর ঘাটে একটি সেতু নির্মানের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু আজো কোনো উদ্যোগ দেখেননি। ফলে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার তত্বিপুর বাজারের সঙ্গে যুক্তদের ভোগান্তির শেষ নেই।
স্থানীয় মালিয়াট ইউনিয়নের তত্বিপুর গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম ও শিক্ষক মোবাশ্বের আলি জানান, ১৯৭৩ সালে তত্তিপুর বাজার প্রতিষ্ঠিত। মালিয়াট ইউনিয়নের সেই সময়ের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান ইউনিয়ন পরিষদটি ঘিরে মাত্র ৪ থেকে ৫ টি টোং দোকান দিয়ে যাত্র শুরু করেন এই বাজার। বর্তমানে এখানে স্থায়ি দোকার আছে ২ শতাধিক, আর সাপ্তাহিক বাজারের আরো দোকান বসে শতাধিক। বাজারে বেশ কিছু বড় বড় দোকান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বাজারের সঙ্গেই রয়েছে একটি পুলিশ ফাঁড়ি। বাজারটি যে মালিয়াট ইউনিয়নের মধ্যে সেই ইউনিয়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২১ টি। আর এই বাজারে ব্যবসা বাণিজ্যে জড়িয়ে আছে নদীর উত্তরের মালিয়াট, তত্বিপুর, দিঘেরপাড়া, দলেননগর, মাগুরা, চাকুলিয়া, রাড়িপাড়া, পাচকাহুনিয়াসহ ১৫ টি গ্রামের মানুষ এবং দক্ষিনের বারফা, পরানপুর, আন্দলপোতা, কাষ্টসাগরা, সোনালীডাঙ্গাসহ রয়েছে ৭টি গ্রামের মানুষ। নদীর ধার ঘেষে রয়েছে উত্তরে তত্বিপুর ও দক্ষিনে বারফা গ্রাম।
বাজারের পার্শ্ববর্তী মাগুরা গ্রামের বাসিন্দা নূর আলী জানান, বাজারটি যখন প্রতিষ্ঠা হয় তখন প্রতিষ্ঠাতারা ভেবেছিলেন মালিয়াট ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের মানুষ এখানে কেনাবেঁচা করবেন। কিন্তু অল্প দিনেই এই বাজারের দোকানপাট বাড়তে থাকে। নদীর দক্ষিন পাড়ের গ্রামের লোকজনও নানা ভাবে বাজারে আসতে থাকেন। তারা এই বাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। কিন্তু নদীতে একটি সেতু না থাকায় তাদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। তারা তালের নৌকা আর কলার ভেওয়ায় পারাপার হতেন। আর এতে প্রায়ই ঘটতো নানা দূর্ঘটনা।সারাদিন পরিশ্রম শেষে পরিবারের খাবার জোটাতে চাল কিনে বাড়ি ফেরার সময় পানিতে পড়ে নষ্ট হয়েছে এমন নজিরও রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এই অবস্থায় ১৯৯১ সালে তারা সম্মিলিত ভাবে একটি বাঁশের সাকো তৈরী করেন। কিন্তু নদীতে পানি বেড়ে গেলে সাঁকো ধরে রাখা যায় না। তাছাড়া এই সাঁকো মাঝে মধ্যেই ভেঙ্গে পড়ে। যার কারনে তারা ওই সাঁকোর স্থানে একটি সেতু নির্মানের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু আজো কেউ এ ব্যাপারে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি বলেন, বাঁশের সাকোটির দুই পাশে পাঁকা সড়কও রয়েছে। এই স্থানে একটি সেতু নির্মান করা হলে এলাকার মানুষ গুলো সহজেই বাজারে আসা-যাওয়া এবং তাদের উৎপাদিত পন্য পরিবহন করতে পারতো। এতে গ্রামের মানুষের আর্থনৈতিক উন্নতি হতো, বেড়ে যেতে মানুষের জীবন যাত্রার মান।
গ্রামের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, স্বাধীনতার পরে অনেক জনপ্রতিনিধি এসেছে, তারা ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিল যে, নির্বাচনে জিততে পারলে ও এলাকার মানুষ ভোট দিলে এলাকার সাকো আর থাকবে না পাশ করার পরে তার প্রথম কাজ হবে ব্রিজ করার। কিন্তু পরে ঐ নেতারা তাদের প্রতিশ্রুতর কথা আর মনে রাখেনি। অবশেষে ঝিনাইদহ ৪ আসনের এমপি সেতু নির্মানের জন্য চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে এলজিইডি’র স্থানিয় প্রকৌশলী হাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তত্বিপুর বাজারের দক্ষিনে চিত্রা নদীর তত্বিপুর ঘাটে একটি সেতু নির্মানের উদ্যোগ তারা নিয়েছেন। স্থানীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার এ বিষয়ে চেষ্টা করছেন। আশা করছেন দ্রুতই ওই স্থানে একটি সেতু নির্মান হবে।