ঢাকা; বেদনাবিধুর পিলখানা ট্র্যাজেডির আট বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও কান্না থামেনি শহীদ পরিবারগুলোতে। আপনজন হারানোর কষ্ট কুরে কুরে খাচ্ছে তাদের। সেই দিনে ভয়ঙ্কর সেই স্মৃতি আজও তাড়িয়ে বেড়ায় নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনদের। তাদের প্রশ্ন-কি দোষ ছিল সেনা কর্মকর্তাদের? কেন তাদের এভাবে প্রাণ দিতে হলো? স্বজনদের বুকের ক্ষত কখনও কখনও ক্ষোভে পরিণত হয়। তাদের মতে প্রতিদিন কত দিবস পালন করা হয় অথচ ২৫শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয় না। একই সঙ্গে ২৫শে ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণার দাবি করেছে শহীদ পরিবারের স্বজনরা।
পিলখানায় হত্যাযজ্ঞে প্রাণ হারান কর্নেল কাজী এমদাদুল হক। স্বামী হারিয়ে দুই ছেলে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই করে যাচ্ছেন কর্নেল কাজী এমদাদুল হকের স্ত্রী নাজনীন এমদাদ। কেমন আছেন- এমন প্রশ্নে নাজনীন বলেন, এভাবে ভালো থাকা যায় না। যারা দেশের নিরাপত্তার জন্য কাজ করে তারা নিজেদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ নয় । তিনি বলেন, কেন তাদের নির্মমভাবে মারা হলো- এটা এখন পর্যন্ত জানতে পারলাম না। বুকের ভিতরে এ কষ্ট কুরে কুরে খাচ্ছে। সেই দিনের স্মৃতিচারণা করে নাজনীন এমদাদ বলেন, সেই দিনের কথা মনে হলে এখনও শিউরে ওঠি। আমাদের পোস্টিং ছিল রাজশাহীতে। দরবারে যোগ দিতে ছোট ছেলেকে নিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারি বিজিবি সদর দপ্তরের অফিসার্স মেসে এসে ওঠি। ২৫শে ফেব্রুয়ারি সকাল বেলায় হঠাৎ গোলাগুলির শব্দ পাই। এমন সময় এমদাদ ফোন করে বলে দরজা আটকিয়ে বসে থাকার জন্য। কেউ নক করলেও যেন দরজা না খুলি। এটাই ছিল এমদাদের সঙ্গে আমার শেষ কথা। ছোট ছেলেটি এ ঘটনার পর অনেকদিন মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত ছিল। আমি আমার সন্তানদের আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি। নিহত কর্নেল মুজিবুল হকের স্ত্রী মেহেরীন ফেরদৌসী বলেন আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে তা কোনো কিছু দিয়েই পূরণ করার নয়। অনেকেই হয়তো ভাবে শহীদ পরিবারগুলো টাকা, ফ্ল্যাট অনেক কিছু পেয়েছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত স্বামীর শূন্যতা অনুভব করি। সবচেয়ে খারাপ লাগে যে, আস্তে আস্তে মানুষ ২৫শে ফেব্রুয়ারিকে ভুলে যাচ্ছে। অথচ এ দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করার কথা। তিনি বলেন, আমাদের আর চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই আমাদের শুধু একটি চাওয়া দিনটি শহীদ সেনা দিবস হিসেবে পালন করা হোক।