অনুসন্ধান কমিটি নাম প্রকাশ করবে, আশা বিশিষ্ট নাগরিকদের

Slider জাতীয়

51655_lead

ঢাকা;  পেশাদারি ও মানবিক গুণাবলি বিবেচনা করে অনুসন্ধান কমিটির সদস্যদের রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁদের সুপারিশ পেশ করার পরামর্শ দিয়েছেন চারজন বিশিষ্ট নাগরিক। তাঁদের আশা, দলনিরপেক্ষ, বিবেকবান, সাহসী, প্রজ্ঞাবান, পরিশ্রমী ও সমযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে ইসি গঠন করা হবে। একই সঙ্গে অতীতের মতো অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশ করা নাম ও প্রস্তাব জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে বলেও আশা করেছেন তাঁরা।
আজ বুধবার সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে নির্বাচন কমিশনের জন্য গঠিত অনুসন্ধান কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় শেষে চারজন বিশিষ্ট নাগরিক সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। আজকের বৈঠকে অনুসন্ধান কমিটির ছয়জন সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। নাম চূড়ান্ত করতে আগামীকাল বিকেল চারটায় তাঁরা একই জায়গায় আবার বসবেন।

মতবিনিময় সভা থেকে বেরিয়ে এসে জাজেস লাউঞ্জের ফটকে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রথমে কথা বলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) মোহাম্মদ আবু হেনা। তিনি বলেন, ‘আমরা চারজনই একমত যে নির্বাচন কমিশনার যাঁরা হবেন, তাঁদের দলনিরপেক্ষ, বিবেকবান, প্রজ্ঞাবান ও পরিশ্রমী হওয়া দরকার। দেশের স্বার্থের জন্য নির্বাচন কমিশনের ওপর সংবিধান যে দায়িত্ব দিয়েছে, এই দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করার জন্য এমন ধরনের যোগ্য ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা দরকার।’

আবু হেনা বলেন, ‘অনুসন্ধান কমিটি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যে মতবিনিময় করেছে, এটা খুবই শুভ পদক্ষেপ। এটা ভবিষ্যতে চালু রাখা উচিত।’

অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে অনুসন্ধান কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা হয়েছে উল্লেখ করে সমকাল-এর সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এই সার্চ কমিটি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে। আমি বলেছি, অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যাঁর সামান্যতম বিরোধ আছে, তাঁকে করা যাবে না।’

গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘আমরা মনে করি, রাষ্ট্রপতি যোগ্য সার্চ কমিটি গঠন করেছেন। আমরা এ-ও মনে করি, সার্চ কমিটি যে নামগুলো প্রস্তাব করবে, রাষ্ট্রপতি সেখান থেকেই পাঁচটি নাম চূড়ান্ত করবেন। রাষ্ট্রপতির প্রতি আমাদের আস্থা আছে।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার হচ্ছেন নির্বাচন কমিশনের প্রতীক। তিনি নরম হয়ে গেলে নির্বাচন কমিশন জিরো হয়ে গেল। আমরা ভারতের দৃষ্টান্তের কথা বলেছি। সেখানে অনেক সময় নির্বাচন কমিশন কারও কথা মানে না। সুতরাং যিনি নির্বাচন কমিশনার হবেন, তাঁর মেরুদণ্ড শক্ত থাকতে হবে। কোনো হুমকিসহ কোনো কিছুকেই তারা পরোয়া করবেন না। তাঁদের বয়স অবশ্যই সত্তরের নিচে থাকতে হবে।’ নির্বাচন কমিশনের আইনের বিষয়টি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত রাখা উচিত বলেও অনুসন্ধান কমিটিকে জানান তিনি।

ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘আমরা মনে করি, ঐতিহাসিকভাবে এই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব অনেক বড়। যেহেতু আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ অনেকাংশে নির্ভর করবে আগামীতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ওপর। সেখানে আমি বলেছি, সুপারিশের সঙ্গে সঙ্গে তাদের একটা ভিশন থাকা উচিত; এই সার্চ কমিটি ওনাদের প্রজ্ঞার ভিত্তিতে কিছু পরামর্শ নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে দেবেন।’

অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশ করা নাম নিয়ে উন্মুক্ত বিতর্ক করা প্রয়োজন আছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘ওনাদের বিচক্ষণতার ভিত্তিতে কিছু নাম রাষ্ট্রপতিকে দেবেন। রাজনৈতিক দলগুলো কিছু নাম দিয়েছে। ওনারাও কিছু যুক্ত করবেন। এটা নিয়ে পাবলিক ডিবেটের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। গতবার সার্চ কমিটি যখন নাম ও সুপারিশ দিয়েছিল, সেগুলো মন্ত্রিপরিষদ সচিব প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। আমরা আশা করব, সার্চ কমিটির সুপারিশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গতবারের মতো এবারও প্রকাশ করা হবে।’

মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘আমরা কতগুলো হিউম্যান ক্রাইটেরিয়া ও প্রফেশনাল ক্রাইটেরিয়ার কথা বলেছি যে, ওনাদের সৎ হতে হবে, নিরপেক্ষ হতে হবে, সাহসী হবেন, মাথা নত করবেন না। এসবের ভিত্তিতে ওনাদের মনোনীত করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটা ব্যক্তির ব্যাপার। উনি নির্বাচিত হওয়ার পর নিরাশ করলে, সার্চ কমিটির অতটা দায় থাকে না।’

অনুসন্ধান কমিটির ওপর আস্থা রয়েছে জানিয়ে মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘ওনাদের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। ওনারা এ ব্যাপারে সচেতন। আমরা যেটা বুঝলাম, সেটা হচ্ছে ওনারা একনিষ্ঠভাবে একটা সর্বশ্রেষ্ঠ সুপারিশ দেবেন, এটা বিশ্বাস করি।’

অনুসন্ধান কমিটি নাম সুপারিশ করার আগে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের পরামর্শ ভূমিকায় রাখবেন, উল্লেখ করে রোকনউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘ওনারা আমাদের বলেছেন, নাম সুপারিশ করার আগে একটা ভূমিকা রাখবেন। দায়িত্ব পরিপালনের জন্য নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। ওই সময় বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। এগুলো বিবেচনায় নিয়ে তারা এটা করবেন।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক সরকারের আমলের চেয়ে অপেক্ষাকৃত স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করেছে, উল্লেখ করে রোকনউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আগামীতে যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে, সেখানে রাজনৈতিক সরকার থাকবে। এখানে চ্যালেঞ্জ থাকবে। হয়তো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকবে, যেটা আমরা জানি না। থাকলে সেটাকে তাদের অতিক্রম করা, পাশ কাটিয়ে যাওয়া এবং গুরুত্বে না নেওয়ার চ্যালেঞ্জের মধ্যে থাকতে হবে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রোকনউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘যেভাবে ওনারা নির্বাচন কমিশন গঠন করছেন, আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে সরকার এখানে হস্তক্ষেপ করবে না। পূর্ণ আস্থা আছে, সার্চ কমিটি যে নাম দেবে সরকার সেখান থেকেই নির্বাচন কমিশন গঠন করবে।’

বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের বিষয়ে অনুসন্ধান কমিটির আজকের মুখপাত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ সাংবাদিকদের বলেন, বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলেছেন সার্চ কমিটির সুপারিশের ওপর এ দেশের গণতন্ত্র ও আগামী নির্বাচন নির্ভর করবে। তাঁরা পরামর্শ দিয়েছেন, এমন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করতে যাঁদের যোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। যাদের ক্লিন ইমেজ, প্রশাসনিক যোগ্যতা ও দায়িত্ব পালনে শারীরিক ও মানসিক-যোগ্যতা রয়েছে এবং তাঁরা যেন কোনো চাপের কাছে মাথা নত না করেন।

আবদুল ওয়াদুদ বলেন, বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আরও পরামর্শ দিয়েছেন, প্রায় সমযোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তাঁদের একই মেধা ও দক্ষতা থাকতে হবে। তিনি বলেন, অনুসন্ধান কমিটি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতামতকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *