গাজীপুর; সাবাস গাজীপুর প্রাশাসনকে। জুয়ারীদের নির্মম নির্যাতনে গুরুতর আহত একাধিক সাংবাদিকদের রক্তের বিনিময়ে জুয়ারীদের জুয়া খেলার সূযোগ হয়েছে এই জন্য। ওই জুয়ারীদের যোগ্যতা হল তারা সাংবাদিক পিটিয়েছে। তাই ভয়ে আর কেউ জুয়ার বিরুদ্ধে লিখতে যাবে না। এটাকে পুঁজি করেই এখন চলছে জুয়া। সঙ্গে হাউজি। নৃত্যের শালীনতা দেখলে বুঝা যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বেশ কয়েক বছর ধরে গাজীপুরে চলছে অবাধে জুয়া ও হাউজির উৎসব। প্রশাসনের জুয়ার প্যান্ডেল ভাঙা গড়া খেলার মধ্যে চলছে জুয়ার । যাচ্ছে সময়। এই সময়ে হঠাৎ হঠাৎ গনমাধ্যমে লেখালেখি হলে প্রাশাসন গিয়ে প্যান্ডেলের কিছু অংশ খুলে ফেলে। কয়েক মিনিট পর আবার ভাঙা অংশ মেরামত করে শুরু হয় জুয়ার আসর। এই পদ্ধতিতে প্রায় সারা বছরই গাজীপুরে একাধিক জুয়ার আসর চলে আসছে। জুয়ার আসরের নিউজ সংগ্রহে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একাধিক সময় সাংবাদিকেরা নির্যাতন, হয়রানী, গ্রেফতার এমনকি রক্তাক্ত জখমও হয়েছেন।
২০১৬ সালে গাজীপুরের ইতিহাস ভঙ্গ করে ৪ টেলিভিশন সাংবাদিককে অমানবিক নির্যাতন করে রক্তাক্ত জখম করে জুয়ারীরা। জুয়ার মাঠ থেকে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে আনে। হাসপাতালে ওই সাংবাদিকদের চিকিৎসার খরচ বহনও করে গাজীপুর পুলিশ। জুয়ারীদের আক্রমনে আহত সাংবাদিকদের চিকিৎসা করানোর জন্য পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে হয়। ওই ঘটনায় একটি মামলাও হয়। কোন আসামী গ্রেফতার হয়নি আজো।
ঘটনার সময়ই কথা উঠে, জনৈক বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত সরকারী দলে অনুপ্রবেশকারী এক সাংবাদিক, সাংবাদিকদের তালিকা দিয়ে জুয়ার আসর থেকে প্রতিদিন টাকা নিতেন। এই খবরের প্রতিবাদ করতে সাংবাদিকেরা জুয়ার আসরে প্রায়ই হৈ চৈ করতে যেতেন। এতে বিরক্ত হয়ে ওই সাংবাদিক জুয়ারীদের উস্কানী দিয়ে গাজীপুরের ওই ইতিহাস ভঙ্গকারী ঘটনা ঘটায়। ওই ঘটনায় একই সময়ে চারজন সাংবাদিককে নির্যাতন করে তিনজনকে রক্তাক্ত জখম করে জুয়ারীরা। জনশ্রুতি আছে, ওই ঘটনার পর হামলার পরিকল্পনাকারী চক্রের মধ্যস্থতায়ই মামলাটি আপোষ মিমাংসা করে গতি থামিয়ে দেয়া হয়। স্থগিত করা হয় সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে সকল ধরণের কর্মসূচিও। ফলে ধামাচাপা পড়ে যায় গাজীপুরে এক সাথে এত বেশী সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা।
২০১৭ সালের শুরুতে গাজীপুরে একাধিক জুয়ার আসর হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। শুনা গেলে, ২০১৬ সালে সাংবাদিক নির্যাতনকারী জুয়ারীদের বিশেষ অবদান অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করে জেলার সকল মাঠ বন্ধ করে তারাই এখন সবচেয়ে বড় জুয়ার মাঠ পরিচালনা করছেন। সাংবাদিক নির্যাতনকারী জুয়ারীদের দাপটে এখন আর কোন সাংবাদিক জুয়ার বিরুদ্ধে লিখতে যাচ্ছেন না। ফলে নীরবে চলছে জুয়ার রমরমা আসর। আর এই জুয়ার আসরে সাংবাদিকদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে জুয়া হাউজি আর উলঙ্গ নৃত্য থেকে ওই সাংবাদিকদের ম্যানেজও করছেন বিএনপির নেতা কাম সাংবাদিক যার ইশারায় সাংবাদিক নির্যাতন হয়েছিল বলে অভিযোগ আছে। ফলে সরকারী দলে অনুপ্রবেশকারী একটি সাংবাদিকচক্র গাজীপুরের সাংবাদিকদের জিম্মি করে রমরমা ব্যবসা করছেন এতে আর সন্দেহ রইল না।
এই বিষয়ে জুয়ার আসর এলাকায় অবস্থিত গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ দারোগা নাজমুল ইসলাম বলেন, এটা আমি জানিনা।
সাংবাদিক পিটানো মামলার প্রধান আসামী মোঃ শফিকুল ইসলামের সঙ্গে জুয়ার আসরের বৈধতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জানা গেলো, সকল সাংবাদিক তাদের কব্জায়। যারা কথা শুনবে না তাদের পরিণতি কি তা আর এখন বলতে হয় না। তবে আপনার সাথে যোগাযোগ করা হবে বলে জানান তিনি।
গাজীপুরের ইতিহাস ঐতিহ্য অনেক কিছু শিখালেও আমরা ইতিহাসকে মনে রাখি না। কিন্তু ইতিহাস যে কাউকে ক্ষমা করে না, পরিণতি হয় ভয়াবহ, তা জেনেও আমরা না জানার ভান করি। ফলে আমরা কখন যে নিজেদের রক্ত নিজেরাই বিক্রি করে দেই তা জানা নেই। গাজীপুরের সাংবাদিকেরা একাধিক ভাগে বিভক্ত থাকায় এখন যে কেউ যা খুশি তা করতে ভয় পায় না। এখন দেখা গেলো, যারা সাংবাদিক পেটাতে পটু তারা প্রশাসনে দাপটে চলতে পারবেন। প্রশাসনও তাদের গুরুত্ব বেশী দেয় বলেই মনে করতে হচ্ছে। তবে যাই হউক, প্রত্যেকটি অপরাধের বিচায় হয়। আগে, পরে বা প্রাকৃতিক নিয়মে। সময় বলে দেবে কার কি অপরাধ। আর শাস্তি জানিয়ে দেবে অপরাধের মাত্রা।