শ্রীমঙ্গল; মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ব্যবসায়ী ও বিজিবি’র মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনার প্রেক্ষিতে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে পর্যটন শহরে। হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার প্রতিবাদে ব্যবসায়ী সমিতি ও পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পরিবহন ধর্মঘট চলছে। গতকাল দিনভর এই শ্রমিক ধর্মঘটে শ্রীমঙ্গলের সঙ্গে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দিনভর বিভিন্ন শ্রমিক ও ব্যবসায়ী সংগঠন শহরে প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ করে। সন্ধ্যায় পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে শহরের চৌমুহনা চত্বরে এক বিশাল প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে কয়েক হাজার শ্রমিক অংশ নেন। শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ঘোষণা দেয়া হলেও তা একদিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে বৈঠক শেষে ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি লুৎফুর রহমান জানিয়েছেন, দায়ী বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস পাওয়ায় ধর্মঘট শনিবার পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। দাবি পূরণ না হলে রোববার থেকে ধর্মঘট চলবে। এদিকে গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে শ্রীমঙ্গল বিজিবি ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সব পক্ষকে নিয়ে গতকাল বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না দিলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ আশা প্রকাশ করে বলেন, শনিবার থেকে স্থানীয় লোকজন স্বাভাবিক পরিবেশই দেখতে পাবে।
এদিকে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে গুলিবিদ্ধদের মধ্যে ব্যবসায়ী পবিত্র পালের অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ ব্যবসায়ীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ব্যবসায়ী ও পথচারীদের ওপর হামলার ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত দোকানপাট পরিদর্শন করেন।
শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মো. কাদির খান বলেন, বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাহলে কি অপরাধে বিজিবি সদস্যরা ব্যবসায়ীদের দোকানপাটে হামলা চালালো। ভাঙচুর করে কোটি টাকার ক্ষতি করলো। আমরা এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও দায়ীদের উপযুক্ত বিচার না পাওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত রাখবো।
শ্রীমঙ্গল পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি মো. ময়না মিয়া বলেন, বিজিবির সদস্যরা আমাদের পরিবহন শ্রমিককে গুলিবিদ্ধ করেছে। শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করেছে। আমরা এসবের সুষ্ঠু তদন্ত চাইছি। উপযুক্ত বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাবো। তিনি বলেন, বাইরের পর্যটক, খাবারের গাড়ি, ওষুধের গাড়ি, জরুরি অ্যাম্বুলেন্স, বিয়ের গাড়ি, বাইরের মেহমানদের যানবাহনে কোনো বাধা দেয়া হচ্ছে না। এসব গাড়ি ধর্মঘটের বাইরে থাকবে।
এদিকে ঘটনার বিষয়ে শুক্রবার বিজিবি শ্রীমঙ্গল সেক্টর হেডকোয়ার্টার থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৫ই জানুয়ারি শ্রীমঙ্গল সেক্টরের (অতিরিক্ত পরিচালক অপারেশন) মেজর মো. মিন্নাত আলী এবং ভারপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার মেজর মো. মাহতাবুল হাসান সরকারি জিপগাড়িযোগে বিওপি পরিদর্শন শেষে আনুমানিক ওইদিন বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে শ্রীমঙ্গল শহর থেকে আনুমানিক ১৫ কিমি. পশ্চিমে উত্তরসুর এলাকায় সখিনা সিএনজি ফিলিং স্টেশনের কাছে পৌঁছালে ফিলিং স্টেশনের ভিতর থেকে একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাস কোনো সিগন্যাল না দেখিয়ে বেপরোয়াভাবে চালিয়ে হঠাৎ রাস্তায় উঠে আসে। মেজর মো. মিন্নাত আলী মাইক্রোবাসটিকে থামিয়ে ড্রাইভারকে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে দুঃখ প্রকাশ না করে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং ঔদ্ধ্যতপূর্ণ আচরণ করে। তখন মেজর মো. মিন্নাত আলী তাকে ধমক ও বকাবকি করলে সে ‘সরি’ বলে মাইক্রোবাস নিয়ে বিজিবির গাড়ির পিছনে পিছনে আসতে থাকে। বিকাল আনুমানিক ৫টা ১৫ মিনিটে বিজিবির জিপটি শহরের ভানুগাছ সড়কের পানসী রেস্টুরেন্টের সামনে এলে মেজর মো. মিন্নাত আলী অনেক লোকজন রাস্তার ওপর দাঁড়ানো অবস্থায় দেখেন। এ সময় কালো মাইক্রোবাসটি দ্রুতগতিতে বিজিবির জিপের সামনে এসে গতিরোধ করে দাঁড়ায়। বিজিবির জিপের ড্রাইভার এবং দ্বিতীয় আসনধারীকে উপস্থিত লোকেরা ইউনিফরমের কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করতে করতে পানসী রেস্টুরেন্টের ভিতরে নিয়ে যায়। পানসী রেস্টুরেন্টের সামনে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারের সহায়তায় বিজিবির অফিসারদ্বয় চালককে মাথা ফাটা আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল সেক্টর সিক-বেডে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে ওইদিনই বিকাল আনুমানিক ৫টা ৪৫ মিনিটে মেজর মো. মিন্নাত আলী উক্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পানসী রেস্টুরেন্টের সামনে আসেন। ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর দেখা যায় প্রায় ১০০০-১২০০ লোক রাস্তার বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়েছে এবং দোকানপাট ভাঙচুর করছে এবং বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে। বিজিবির লোকজন দেখামাত্রই তারা এগিয়ে আসতে শুরু করে এবং বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় বিজিবির ২ জন সদস্য গুরুতর আহতসহ মোট ৮ জন সদস্য আহত হয়। বিজিবি সদস্যদের জীবন ও সরকারি মালরক্ষার্থে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ওইদিন বিকাল ৬টা ৩০ মিনিটে বিজিবি কর্তৃক দুই ধাপে ১৫ রাউন্ড ফায়ার করা হয়। পরবর্তীতে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং উপজেলা চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে আসেন এবং বিজিবির সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে এলাকার সকল সদস্যকে শ্রীমঙ্গল সেক্টরে ফেরত নিয়ে আসা হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার সময় স্থানীয় উচ্ছৃঙ্খল জনতা দোকানপাট ও যানবাহনে ভাঙচুর এবং রাস্তায় অগ্নিসংযোগ করে’।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. শাহজালাল, শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রণধীর কুমার দেব, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল হকসহ প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় জেলা প্রশাসক এ ঘটনায় মৌলভীবাজারের এডিএম মোহাম্মদ ফারুক আহমদকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন মৌলভীবাজারের এডিশনাল এসপি (অপরাধ) মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, শ্রীমঙ্গলের ইউএনও মো. শহীদুল হক ও শ্রীমঙ্গল থানার ওসি মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ মো. আবদুস শহীদের উপস্থিতিতে গতকাল বিকালে শ্রীমঙ্গলের বিটিআরআই রেস্ট হাউসে বিজিবি প্রতিনিধি, পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. শাহজালাল, এডিএম মোহাম্মদ ফারুক আহমদ, শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রণধীর কুমার দেব, শ্রীমঙ্গলের ইউএনও মো. শহীদুল হক, সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিশ্বজিত কুমার পালসহ প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ এমপি বৃহস্পতিবারের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত এবং আকস্মিক বিষয় উল্লেখ করে বলেন, এ ঘটনায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বা ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে, সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি নিজে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানপাট বা আক্রান্ত লোক সবার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়রসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে বসেছি। আজকে (গতকাল) যেহেতু ব্যবসায়ী সমাজ এবং পরিবহন শ্রমিক সংগঠন প্রতিবাদ সমাবেশ করছে, এতে যাতে জনজীবনে পরবর্তী ক্ষতি না হয় এজন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও বিজিবি কর্মকর্তাদের নিয়ে যৌথ বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আমরা সবাই একমত হয়েছি, ভবিষ্যতে যাতে এরকম কোনো ঘটনা আর যাতে না ঘটে সে জন্য সংশ্লিষ্ট সবাই সজাগ এবং সতর্ক থাকবো। যারা আহত হয়েছেন বা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সবার দায়িত্ব নিয়েছি। তাদের সুচিকিৎসা হবে। আশা করছি শনিবার (আজ) থেকে জনগণ প্রত্যাশিত পরিবেশ দেখতে পাবেন এবং শহরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।
এদিকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে গুলিবিদ্ধদের মধ্যে ব্যবসায়ী পবিত্র পালের অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ ব্যবসায়ীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ব্যবসায়ী ও পথচারীদের ওপর হামলার ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত দোকানপাট পরিদর্শন করেন।
শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মো. কাদির খান বলেন, বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাহলে কি অপরাধে বিজিবি সদস্যরা ব্যবসায়ীদের দোকানপাটে হামলা চালালো। ভাঙচুর করে কোটি টাকার ক্ষতি করলো। আমরা এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও দায়ীদের উপযুক্ত বিচার না পাওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত রাখবো।
শ্রীমঙ্গল পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি মো. ময়না মিয়া বলেন, বিজিবির সদস্যরা আমাদের পরিবহন শ্রমিককে গুলিবিদ্ধ করেছে। শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করেছে। আমরা এসবের সুষ্ঠু তদন্ত চাইছি। উপযুক্ত বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাবো। তিনি বলেন, বাইরের পর্যটক, খাবারের গাড়ি, ওষুধের গাড়ি, জরুরি অ্যাম্বুলেন্স, বিয়ের গাড়ি, বাইরের মেহমানদের যানবাহনে কোনো বাধা দেয়া হচ্ছে না। এসব গাড়ি ধর্মঘটের বাইরে থাকবে।
এদিকে ঘটনার বিষয়ে শুক্রবার বিজিবি শ্রীমঙ্গল সেক্টর হেডকোয়ার্টার থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৫ই জানুয়ারি শ্রীমঙ্গল সেক্টরের (অতিরিক্ত পরিচালক অপারেশন) মেজর মো. মিন্নাত আলী এবং ভারপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার মেজর মো. মাহতাবুল হাসান সরকারি জিপগাড়িযোগে বিওপি পরিদর্শন শেষে আনুমানিক ওইদিন বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে শ্রীমঙ্গল শহর থেকে আনুমানিক ১৫ কিমি. পশ্চিমে উত্তরসুর এলাকায় সখিনা সিএনজি ফিলিং স্টেশনের কাছে পৌঁছালে ফিলিং স্টেশনের ভিতর থেকে একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাস কোনো সিগন্যাল না দেখিয়ে বেপরোয়াভাবে চালিয়ে হঠাৎ রাস্তায় উঠে আসে। মেজর মো. মিন্নাত আলী মাইক্রোবাসটিকে থামিয়ে ড্রাইভারকে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে দুঃখ প্রকাশ না করে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং ঔদ্ধ্যতপূর্ণ আচরণ করে। তখন মেজর মো. মিন্নাত আলী তাকে ধমক ও বকাবকি করলে সে ‘সরি’ বলে মাইক্রোবাস নিয়ে বিজিবির গাড়ির পিছনে পিছনে আসতে থাকে। বিকাল আনুমানিক ৫টা ১৫ মিনিটে বিজিবির জিপটি শহরের ভানুগাছ সড়কের পানসী রেস্টুরেন্টের সামনে এলে মেজর মো. মিন্নাত আলী অনেক লোকজন রাস্তার ওপর দাঁড়ানো অবস্থায় দেখেন। এ সময় কালো মাইক্রোবাসটি দ্রুতগতিতে বিজিবির জিপের সামনে এসে গতিরোধ করে দাঁড়ায়। বিজিবির জিপের ড্রাইভার এবং দ্বিতীয় আসনধারীকে উপস্থিত লোকেরা ইউনিফরমের কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করতে করতে পানসী রেস্টুরেন্টের ভিতরে নিয়ে যায়। পানসী রেস্টুরেন্টের সামনে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারের সহায়তায় বিজিবির অফিসারদ্বয় চালককে মাথা ফাটা আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল সেক্টর সিক-বেডে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে ওইদিনই বিকাল আনুমানিক ৫টা ৪৫ মিনিটে মেজর মো. মিন্নাত আলী উক্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পানসী রেস্টুরেন্টের সামনে আসেন। ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর দেখা যায় প্রায় ১০০০-১২০০ লোক রাস্তার বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়েছে এবং দোকানপাট ভাঙচুর করছে এবং বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে। বিজিবির লোকজন দেখামাত্রই তারা এগিয়ে আসতে শুরু করে এবং বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় বিজিবির ২ জন সদস্য গুরুতর আহতসহ মোট ৮ জন সদস্য আহত হয়। বিজিবি সদস্যদের জীবন ও সরকারি মালরক্ষার্থে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ওইদিন বিকাল ৬টা ৩০ মিনিটে বিজিবি কর্তৃক দুই ধাপে ১৫ রাউন্ড ফায়ার করা হয়। পরবর্তীতে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং উপজেলা চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে আসেন এবং বিজিবির সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে এলাকার সকল সদস্যকে শ্রীমঙ্গল সেক্টরে ফেরত নিয়ে আসা হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার সময় স্থানীয় উচ্ছৃঙ্খল জনতা দোকানপাট ও যানবাহনে ভাঙচুর এবং রাস্তায় অগ্নিসংযোগ করে’।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. শাহজালাল, শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রণধীর কুমার দেব, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল হকসহ প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় জেলা প্রশাসক এ ঘটনায় মৌলভীবাজারের এডিএম মোহাম্মদ ফারুক আহমদকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন মৌলভীবাজারের এডিশনাল এসপি (অপরাধ) মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, শ্রীমঙ্গলের ইউএনও মো. শহীদুল হক ও শ্রীমঙ্গল থানার ওসি মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ মো. আবদুস শহীদের উপস্থিতিতে গতকাল বিকালে শ্রীমঙ্গলের বিটিআরআই রেস্ট হাউসে বিজিবি প্রতিনিধি, পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. শাহজালাল, এডিএম মোহাম্মদ ফারুক আহমদ, শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রণধীর কুমার দেব, শ্রীমঙ্গলের ইউএনও মো. শহীদুল হক, সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিশ্বজিত কুমার পালসহ প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ এমপি বৃহস্পতিবারের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত এবং আকস্মিক বিষয় উল্লেখ করে বলেন, এ ঘটনায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বা ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে, সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি নিজে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানপাট বা আক্রান্ত লোক সবার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়রসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে বসেছি। আজকে (গতকাল) যেহেতু ব্যবসায়ী সমাজ এবং পরিবহন শ্রমিক সংগঠন প্রতিবাদ সমাবেশ করছে, এতে যাতে জনজীবনে পরবর্তী ক্ষতি না হয় এজন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও বিজিবি কর্মকর্তাদের নিয়ে যৌথ বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আমরা সবাই একমত হয়েছি, ভবিষ্যতে যাতে এরকম কোনো ঘটনা আর যাতে না ঘটে সে জন্য সংশ্লিষ্ট সবাই সজাগ এবং সতর্ক থাকবো। যারা আহত হয়েছেন বা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সবার দায়িত্ব নিয়েছি। তাদের সুচিকিৎসা হবে। আশা করছি শনিবার (আজ) থেকে জনগণ প্রত্যাশিত পরিবেশ দেখতে পাবেন এবং শহরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।