বদলে যাচ্ছে মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা

Slider জাতীয় শিক্ষা

42456_shikkha

 

ঢাকা; বদলে যাচ্ছে শিক্ষার মাধ্যমিক স্তর। ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ৪টি বিষয় কমছে। ১৩টির স্থলে ৯টি বিষয়ে পরীক্ষা দেবে পরীক্ষার্থীরা। বাদ পড়া বিষয়গুলো ক্লাসে নানা সূচকে মূল্যায়ন করে বোর্ডে পাঠাবেন শিক্ষকরা। পরীক্ষা স্বল্প সময়ে শেষ করা হবে। পরিবর্তন আসবে পরীক্ষা পদ্ধতি, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, পাঠ্যক্রম, পাঠ্যসূচি, পাঠ্যপুস্তক ও পাঠদানে। অর্থাৎ মাধ্যমিক স্তরের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। মৌলিক এসব পরিবর্তনের জন্য ১৫টি সুপারিশ করেছেন দেশের বরণ্য শিক্ষাবিদরা। গতকাল সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এসব তথ্য জানান। এর আগে গত শুত্রু ও শনিবার কক্সবাজারে শিক্ষা মানোন্নয়নে করণীয় কর্মশালার আয়োজন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরীসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও বোর্ড চেয়ারম্যানরা মতামত দেন। কর্মশালায় তাদের মতামতের ভিত্তিতে ১৫টি সুপারিশ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়ে দু’দিনের এক কর্মশালায় এসব সুপারিশ উঠে এসেছে। পাবলিক পরীক্ষার সময় চাপ কমাতে শিক্ষাবিদরা বিষয় কমানোর সুপারিশ করেছেন। এসএসসি পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ?্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা, চারু ও কারুকলা এবং ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়গুলোকে পাবলিক পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত না করে বিদ্যালয়ে নিচু শ্রেণিতে ধারাবাহিক সেগুলো পড়ানোর সুপারিশ এসেছে ওই কর্মশালায়। ২০১৯ সাল থেকে সব বোর্ডে অভিন্ন প্রশ্নে পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার সুপারিশ এসেছে কর্মশালায়। পাশাপাশি পরীক্ষার এমসিকিউ ও সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরির জন্য আইটেম ব্যাংক  তৈরি, বইপড়া দিবস পালন, যথাসময়ে শিক্ষকদের টিচার্স গাইড সরবরাহেরও সুপারিশ করেছেন তারা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পরিসংখ্যানেও মাধ্যমিক স্তরের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এরই প্রেক্ষিতে গত ১২ই নভেম্বর জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি নায়েম মিলনায়তনে শিক্ষকদের মতামত নেয় মন্ত্রণালয়। পাঠ্যক্রম, পাঠ্যবই পরিবর্তন করার জন্য বইয়ের লেখক, সম্পাদকদের মতামত নেয়া হয় ২১শে নভেম্বর। তাদের মতামতের আলোকে সম্প্রতি কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হয় আবাসিক কর্মশালা।
কর্মশালায় কারিকুলাম পর্যালোচনা, নির্বাচিত পাঠ্যপুস্তকের মান উন্নয়ন ও ভাষা প্রাঞ্জলকরণ, প্রশ্নব্যাংক ও পরীক্ষা সংক্রান্ত মোট চারটি সাব-কমিটি করার সুপারিশ করা হয়। এসব কমিটির পরামর্শ ও মতামতের আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরবর্তীতে অভিভাবক ও গণমাধ্যমকর্মীদের মতামত নিয়ে সংস্কার করবে পুরো শিক্ষা পদ্ধতি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের প্রেক্ষিতে মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকের সংখ্যা কমানোর জন্য শিক্ষাবিদদের মতামত নেয়া হয়েছে। শিক্ষাবিদরা মাধ্যমিক স্তরের কর্মমুখী শিক্ষা, শারীরিক শিক্ষা, চারু ও কারুকলাসহ চারটি বিষয় পাঠ্যসূচি না করে খেলাধুলা বা শারীরিক কসরতের আয়োজন করার পরামর্শ দেন। ২০১৯ সাল থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৩টির পরিবর্তে ৯টি বিষয়ে পরীক্ষা নেয়ার কথা বলেন। তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষকরা ক্লাসে মূল্যায়ন করে বোর্ডে পাঠাবেন। বোর্ড শিক্ষার্থীর পরীক্ষার নম্বরপত্রে নম্বর যোগ করে দেবে। দীর্ঘমেয়াদি পরীক্ষার সূচি না করে, কম সময়ে অথবা একই দিনে সকাল-বিকাল দুই বেলা পরীক্ষা গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে সুপারিশের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়। বর্তমানে দেড়-দুই মাসব্যাপী পাবলিক পরীক্ষা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন। শিক্ষাবিদরা জানান, অস্ট্রিয়ায় শুধু গণিত, মাতৃভাষা, বিজ্ঞান ও ইংরেজি চারটি বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা নেয়া হয়। অন্যান্য বিষয় ক্লাসে শিক্ষকরা মূল্যায়ন করেন। ওই পদ্ধতির আলোকেই শিক্ষাবিদরা ৪টি বিষয় কমিয়ে আনার প্রস্তাব করেছেন। এছাড়া নবম-দশম শ্রেণির ইংরেজি, পদার্থ, রসায়ন, গণিত, জীববিজ্ঞান বইয়ে অনেক সহজ বিষয় কঠিন করে তুলে ধরা হয়েছে। শিক্ষার মানোন্নয়নে মাধ্যমিক স্তরের এসব বই পরিমার্জন করে সহজ ভাষায় যুগোপযোগী করে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সৃজনশীল পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের গাইড বইয়ের প্রতি আসক্ত করছে বলে মত দেন শিক্ষাবিদরা। সৃজনশীল পদ্ধতিকে কার্যকর করতে প্রশ্নপত্র প্রণয়নে প্রশ্নভাণ্ডার করার বিষয়ে মত দেন শিক্ষাবিদরা। প্রতি বোর্ডে একটি করে প্রশ্ন্নভাণ্ডার থাকবে, সেখান থেকে শিক্ষকরা প্রশ্ন করবেন। যদিও এরই মধ্যে যশোর বোর্ডে একটি পাইলট প্রকল্পের কাজ চলছে।  শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র ভুল মূল্যায়নে ব্যাপারে কিছু পরামর্শ তুলে ধরনে। তারা বলেন, পরীক্ষকরা উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন স্ব স্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে। ফলে একই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীরা ভিন্ন-ভিন্ন নম্বর পাচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটের (বেডু) গবেষণায়ও এ তথ্য উঠে এসেছে। উত্তরপত্র মূল্যায়নে ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত করে বেডু অভিন্ন পদ্ধতিতে সমতার ভিত্তিতে উত্তরপত্র মূল্যায়নের বিষয়টি শিক্ষাবিদদের সামনে তুলে ধরেন। ইরেজি মাধ্যম ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষা মূল্যায়ন পদ্ধতির জন্য অনেকে সুপারিশ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *